প্রধানমন্ত্রীর নগদ সহায়তার তালিকায় অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে সাময়িক বরখাস্ত গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার ক্ষোর্দ্দকোমরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান চৌধুরীকে অবশেষে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ক্ষোর্দ্দকোমরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। গতকাল বুধবার(২০ জানু) স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব আবু জাফর রিপন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালীন প্রধানমন্ত্রীর নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচির সুবিধাভোগী বাছাইয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগে আরিফুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রথমে সরকারিভাবে তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়। এর পর তাকে গত বছরের ২৪ জুনে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ। সর্বশেষ তাকে সরকারের একই বিভাগ থেকে চূড়ান্ত বরখাস্ত করে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নবীনেওয়াজ বলেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাতে পেলে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে ওই ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা এক নম্বর ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) সাজু মিয়া।
এর আগে, করোনাকালে প্রধানমন্ত্রীর নগদ সহায়তার তালিকায় ব্যাপক অনিয়ম-নয়ছয় ছাড়াও চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান তার স্ত্রী-মেয়েসহ ব্যক্তিগত সহকারীর মোবাইল নাম্বার ব্যবহার এবং উপকারভোগীদের কাছে অর্থ আদায়ের ঘটনায় গত ৯ জুন সচিত্র প্রতিবেদন প্রচার করে গণমাধ্যম। এ নিয়ে জেলা প্রশাসকের গঠিত তদন্ত কমিটি সরেজমিন তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেলে গত ১৬ জুন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠায়। পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় (গত ২৪ জুন ২০২০) অভিযুক্ত চেয়ারম্যান আরিফুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। একই সঙ্গে কেন তাকে চুড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হবে না, তার জবাব ১০ দিনের মধ্যে দাখিল করতে বলা হয়।
জানা যায়, খোর্দ্দকোমরপুর ইউনিয়নের প্রকৃত কর্মহীন ও দুস্থ-অসহায়দের বাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নগদ সহায়তার তালিকায় ৫৯৪ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান চৌধুরী। কিন্তু তালিকাতে সুবিধাভোগীর নামের পাশে স্ত্রী-মেয়ে ও ব্যক্তিগত সহকারী রাজ্জাকের একাধিক মোবাইল নাম্বার জুড়ে দেয়াসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং বিত্তশালীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন তিনি। শুধু তাই নয়, চা-পান খাওয়াসহ নানা অজুহাতে সুবিধাভোগী অনেকের কাছে ৪০০/৫০০ টাকা করে হাতিয়ে নেয় চেয়ারম্যান ও তার লোকজন।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অসহায় দুঃস্থদের জন্য সরকার বরাদ্দ দিলেও তাদের হাতে পৌছায় সামান্যই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অবশ্য তারা বঞ্চিত হন। এমপি মন্ত্রীদের হাত বদল হয়ে শেষে স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বারসহ লোকাল নেতাকর্মীদের হয়ে যেতে যেতে সরকারি সহায়তার অবশিষ্ট আর কিছু থাকে না। নামেই কেবল সরকারি সহায়তা, প্রকৃতপক্ষে যাদের জন্য বরাদ্দ হয় তারা বলতে গেলে কড়ি পয়সাও পায় না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এবিষয়ে সরকারের প্রশ্রয়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নিরব ভূমিকা এবং প্রশাসনের নজরদারির অভাবকে দায়ি করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৫৬
আপনার মতামত জানানঃ