পৃথিবীতে জটিল প্রাণের সূচনা হয়েছিল বিজ্ঞানীদের ধারণার চেয়েও প্রায় ১৫০ কোটি বছর আগে—এমনই তথ্য উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
মোটাদাগে এতদিন ধারণা ছিল, ৬৩ কোটি ৫০ লাখ বছর আগে পৃথিবীতে প্রাণীর উদ্ভব হয়েছে। তবে ‘কার্ডিফ ইউনিভার্সিটি’র নেতৃত্বে করা সর্বশেষ গবেষণায় অনেক আগের প্রাণীর বাস্তুতন্ত্র গঠনের সন্ধান মিলেছে।
মধ্য আফ্রিকার দেশ গ্যাবনের নিকটবর্তী ফ্রান্সভিল বেসিন বা অববাহিকায় এ বাস্তুতন্ত্র পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
গবেষণা দলটি বলছে, পাথরের গভীরে ২১০ কোটি বছর আগে প্রাণী জীবনের পরিবেশগত অবস্থার প্রমাণ পেয়েছেন তারা। এই বাস্তুতন্ত্র ভূমিঘেরা এক সাগরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এরা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েনি ও শেষ পর্যন্ত সেখানেই বিলীন হয়েছে।
প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে প্রচলিত ধারণার সঙ্গে নতুন গবেষণার ফলাফল একেবারে বিপরীত বলে এর সঙ্গে সব বিজ্ঞানী একমত নন। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞদের দাবি, পৃথিবীতে জটিল প্রাণের শুরু প্রায় ৬৩ কোটি ৫০ লাখ বছর আগে হয়েছিল।
অক্সিজেন ও ফসফরাসের মতো উপাদানের প্রমাণ মেলে কিনা, যা প্রাণের অস্তিত্বকে সমর্থন করে তা জানতে এর আশপাশের পাথর খতিয়ে দেখেছেন গবেষকরা।
এজন্য ‘কার্ডিফ ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক আর্নেস্ট চি ফ্রু আন্তর্জাতিক এক বিজ্ঞানী দলের সঙ্গে কাজ করেছেন। চি ফ্রু বলেন, “আমরা বলছি, এ গঠনে জীবাশ্ম রয়েছে, অক্সিজেন রয়েছে। আর এটি প্রথম জটিল প্রাণের চেহারাকে সামনে এনেছে।”
“৬৩ কোটি ৫০ লাখ বছর আগে ক্যাম্ব্রিয়ান যুগে যে প্রক্রিয়া এর আগে আবিষ্কৃত হয়েছে, সেই একই প্রক্রিয়া দেখা গেছে এখানেও, যা আমাদের পেছনে ফিরে যেতে সাহায্য করেছে। এমনকি আমাদের শেষ পর্যন্ত বুঝতে সহায়তা করেছে, আমরা সবাই কোথা থেকে এসেছি।”
তবে এ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত নন ‘ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন’-এর অধ্যাপক গ্রাহাম শিল্ডস। আর তার কিছু আপত্তিও রয়েছে এই গবেষণা থেকে আসা সিদ্ধান্তে।
“আমি এই ধারণার বিরুদ্ধে নই যে, ২১০ কোটি বছর আগে পুষ্টি সমৃদ্ধ প্রাণী থাকতে পারে। তবে এটি জটিল জীবন গঠনের বৈচিত্র্যের দিকে নিয়ে যেতে পারে তা আমি বিশ্বাস করি না। আরও প্রমাণের প্রয়োজন ছিল।”
কেবল অধ্যাপক শিল্ডসই নন, গবেষণার এ ফলাফলের সঙ্গে একমত নন এমন আরও বিজ্ঞানী আছেন।
এ তত্ত্বের পক্ষে আরও প্রমাণ খুঁজতে অধ্যাপক চি ফ্রু ও তার গবেষণা দলটি গ্যাবনের পাথর থেকে খনন করা পলির একেবারে ভেতরের স্তর বিশ্লেষণ করেছেন। যা থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, এ গঠন খুঁজে পাওয়ার ঠিক আগে এখানে প্রাণের জন্য এক ‘পরীক্ষাগার’ তৈরি হয়েছিল।
তাদের দাবি, উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন ও ফসফরাস তৈরি হয়েছিল পানির নিচে দুটি মহাদেশীয় প্লেটের সংঘর্ষের ফলে, যা আগ্নেয়গিরির মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
এই সংঘর্ষের ফলে মহাসাগর থেকে পানির একটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যা ‘ভূমিঘেরা পুষ্টি সমৃদ্ধ এক অগভীর সমুদ্র’ তৈরি করেছে।
পানির ভরের প্রকৃতির সীমাবদ্ধতা ও কোটি কোটি বছর ধরে চলা প্রতিকূল অবস্থার কারণে এমনটি হতে পারে। গবেষকদের দাবি, এটি পৃথিবীতে জটিল জীবনের সম্ভাব্য ‘টু-স্টেপ’ বা দুই পদক্ষেপে বিবর্তনকে নির্দেশ করে।
এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘প্রিক্যামব্রিয়ান রিসার্চ’-এ।
আপনার মতামত জানানঃ