বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ৭০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ ও অনুদান দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এর মধ্যে ৩১৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান ও ৩৮৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ। মূলত ৩১৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়ার নামে ওই এলাকার (চট্টগ্রাম বিভাগ) অবকাঠামো উন্নয়নে আরো ৩৮৫ মিলিয়ন ডলারের ঋণ নেওয়ার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। যেসব প্রকল্পে ঋণ দেওয়া হচ্ছে তা রোহিঙ্গা না থাকলে ওই এলাকায় বর্তমানে প্রয়োজন ছিল না।
ডলার সংকটের এই সময়ে সরকারের দুর্বলতা বুঝে অনুদানের নামে ঋণ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ এর আগে কখনো রোহিঙ্গাদের জন্য ঋণ নেয়নি সরকার।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ৩৮৫ মিলিয়ন ডলারের ঋণ চাপিয়ে দিতে সরাসরি ইআরডি বা পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ না করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং বিশেষ ব্যবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে তাড়াহুড়া করে প্রকল্পগুলো অনুমোদন করা হচ্ছে। এই অনুদান ও ঋণ ব্যয়ের জন্য নেওয়া প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলো নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
এসব প্রকল্পে পরামর্শকের জন্য অস্বাভাবিক খরচের প্রস্তাব করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রকল্পের বিস্তারিত সমীক্ষা করা হয়নি।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় রোহিঙ্গাদের জন্য নেওয়া অবকাঠামো ও সেবা খাতের দুটি প্রকল্প উপস্থাপন করা হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন একনেক চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রকল্প দুটি মূলত রোহিঙ্গাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আর্থ-সামাজিক, অবকাঠামো উন্নয়নকেন্দ্রিক, যার মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প উপস্থাপন করবে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ এবং সেবা খাতে প্রকল্প উপস্থাপন করবে আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ। প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পেলে এ সপ্তাহেই বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় উঠবে।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘এই ঋণের মাধ্যমে কিছু প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, যেগুলো আমাদের পরিকল্পনায়ও ছিল না। এখন সংকটের মুহূর্তে অনুদান পেতে সরকার প্রয়োজন না হলেও এই ঋণ নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে আসায় পরিকল্পনা কমিশন বা ইআরডি প্রকল্পের ঋণের বিষয়ে কোনো দর-কষাকষি করতে পারেনি।
তাহলে হয়তো অনেক ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো যেত। রোহিঙ্গাদের দায় সারা বিশ্বের, সেখানে আমরা তাদের জন্য কেন ঋণ নেব?’
ইআরডির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা যে রোহিঙ্গাদের জন্য ঋণ ও অনুদান দেবে সেটা তাদের অনেক আগের সিদ্ধান্ত। তারা যে সময়ে প্রস্তাব এনেছে সেটাও আমাদের কাছে প্রস্তাব দিলে এত দিনে প্রকল্পগুলো পাস হয়ে যেত। তারা তাড়াহুড়া করতে গিয়ে দেরি করেছে। যে মিটিং পরিকল্পনা কমিশনে হওয়ার কথা, সেটা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে এসে আমাদের ওপর চাপ বেড়েছে, নেগোসিয়েশন কম হয়েছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, বাংলাদেশ এখন বৈদেশিক ঋণের চাপে রয়েছে। সামনে চাপ বাড়বে। তাই ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। কারণ এই ঋণ সরকারকেই পরিশোধ করতে হবে।
আপনার মতামত জানানঃ