৫০ বছরের বেশি সময় ধরে গোটা বিশ্বের শত শত ‘ড্রিলিং’ সাইট থেকে সংগৃহিত ডেটা অনুসারে, গভীর সমুদ্র স্রোতের গতি প্রতি ২০ লাখ বছরে একবার করে পরিবর্তিত হয়ে থাকে।
সম্প্রতি গভীর-সমুদ্র স্রোতের নানা ভূতাত্ত্বিক রেকর্ড থেকে পৃথিবী ও মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথের মধ্যে এক অদ্ভুত যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া গেছে।
এর থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, অতীতের বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ঘটনা, এমনকি সমুদ্র সঞ্চালনের উপরও প্রভাব ফেলেছে এ সংযোগ।
বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার কমিউনিকেশন’ প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে দেখা যায়, পৃথিবীর ২৪ লাখ বছরের গভীর সমুদ্র স্রোত চক্রের নানা উত্থান-পতন ঘটেছে, যা সূর্য থেকে বর্ধিত শক্তির সময়কাল ও বৈশ্বিক জলবায়ুর উষ্ণতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর, জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যান্য কারণ যেমন গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের সঙ্গে এর কোনও যোগসূত্র নেই।
৫০ বছরের বেশি সময় ধরে গোটা বিশ্বের শত শত ‘ড্রিলিং’ সাইট থেকে সংগৃহিত ডেটা অনুসারে, গভীর সমুদ্র স্রোতের গতি প্রতি ২০ লাখ বছরে একবার করে পরিবর্তিত হয়ে থাকে।
“গভীর-সমুদ্রের পাললিক শিলার ডেটায় এই ২৪ লাখ বছরের নানা চক্র খুঁজে পেয়ে আমরা অবাক হয়েছি,” বলেন এ গবেষণার প্রধান লেখক ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ সিডনি’র অধ্যাপক ড. অ্যাড্রিয়ানা ডাটকিউটজ।
“এগুলো ব্যাখ্যা করার মাত্র একটি উপায় আছে, যা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করা গ্রহ মঙ্গল ও পৃথিবীর মিথস্ক্রিয়া চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত।”
তাই মঙ্গলের প্রতি এমন আকর্ষণ পৃথিবীর গভীর-সমুদ্রের স্রোতে গভীর গর্জন সৃষ্টি করে, যা কিছুটা ‘রোমান্টিক’ও বটে।
“সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্র একে অপরের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এ মিথস্ক্রিয়াকে বলা হয় অনুরণন। এটি গ্রহের বিকেন্দ্রিকতায় (কেন্দ্রীয় দূরত্বে) পরিবর্তন ঘটায়। পাশাপাশি, গ্রহগুলো বৃত্তাকার কক্ষপথের কতটা কাছাকাছি তার একটি পরিমাপও এটি,” বলেন এ গবেষণার সহ-লেখক ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ সিডনি’র অধ্যাপক ডিটমার মুলার।
এই পারস্পরিক মহাকর্ষীয় ক্রিয়ার অর্থ, প্রতি ২৪ লাখ বছরে উচ্চ স্তরের সৌর বিকিরণসহ উষ্ণ জলবায়ু ছিল পৃথিবীর। গভীর সমুদ্র প্রবাহের এ উষ্ণ চক্রটি গভীর-সমুদ্রের রেকর্ড ভাঙার সঙ্গেও জোরালোভাবে সম্পর্কযুক্ত।
এক্ষেত্রে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের জলবায়ুর মহাসাগরীয় স্রোত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উদাহরণস্বরূপ, ‘আটলান্টিক মেরিডিওনাল ওভারটার্নিং সার্কুলেশন (এএমওসি)’ হল বৈশ্বিক মহাসাগরের এমন এক ‘পরিবাহক বেল্টে’র অংশ, যা পৃথিবীর উত্তর থেকে দক্ষিণে পানির প্রবাহ ঘটায়।
ইউরোপ মহাদেশকে নাতিশীতোষ্ণ রাখতে পৃথিবীর শীতল অক্ষাংশে উষ্ণ পানি বয়ে নিয়ে যায় পরিবাহক বেল্টটি, যা সামুদ্রিক জীব বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজনীয় পুষ্টিও পরিবহন করে।
সাম্প্রতিক এ গবেষণা থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, ১৯৫০ সাল থেকে পরিবাহক বেল্ট ‘এএমওসি’ প্রায় ১৫ শতাংশ দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা এক হাজার বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে বেল্টটির সবচেয়ে দুর্বল অবস্থা।
এর জন্য দায়ী আটলান্টিক মহাসাগরে অনেক বেশি পরিমাণ ঠাণ্ডা স্বাদুপানির প্রবেশ, যার মধ্যে রয়েছে গ্রীনল্যান্ডের বরফ গলে যাওয়ার ঘটনাটিও।
“সাড়ে ছয় কোটি বছরের গভীর-সমুদ্রের ডেটা থেকে ইঙ্গিত মেলে, উষ্ণ পানির গভীর মহাসাগরগুলো আরও জোরালোভাবে প্রবাহিত হয়,” বলেন ডাটকিউটজ।
“আটলান্টিক মেরিডিওনাল ওভারটার্নিং সার্কুলেশন (এএমওসি)’ চক্রটি ধীর হয়ে গেলে বা একেবারে বন্ধ হয়ে গেলেও সমুদ্রকে স্থবির হতে দেবে না এটি।”
আপনার মতামত জানানঃ