যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটলে ‘সহিংসতায় উসকানি’ দেয়ার অভিযোগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসন করেছে দেশটির প্রতিনিধি পরিষদ। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রদ্রোহ, ঘুষ নেওয়া কিংবা অপরাধমূলক কোনো কাজে জড়িত হলে তাকে সরানোর অস্ত্র এই অভিশংসন। গত নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ী জো বাইডেন আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ নেবেন বলে ট্রাম্পের মেয়াদ পূর্ণ না হওয়ার আগ পর্যন্ত যদি সিনেটের রায় না পাওয়া যায় তবে প্রেসিডেন্ট মেয়াদ এ যাত্রা পূর্ণ হবে। কিন্তু আর কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না ট্রাম্প। একইসাথে তাকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে যেসব সুবিধা পাওয়ার কথা, তা কেড়ে নেওয়া হতে পারে। এসব ছাড়াও আঘাত পড়তে পারে ট্রাম্পের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যেও।
গত সপ্তাহে মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে ট্রাম্প ভক্তদের দাঙ্গা ও সহিংসতার পর এখন ট্রাম্প এতটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন যে তার ক্যারিয়ার এবং ভাগ্যের কেন্দ্রে থাকা ব্র্যান্ডটি এখন মারাত্মকভাবে সংকটে রয়েছে। এরই মধ্যে তাকে ছেড়ে গেছেন তার রাজনৈতিক দাতারা, যারা অনেকদিন ধরেই তাকে সহায়তা করে আসছিলেন। এছাড়া যেসব প্রযুক্তি কম্পানি তার কণ্ঠস্বরকে বিস্তৃত করার সুযোগ দিয়েছিল, সেসব ব্যাংক, যারা তার অর্থের নানা দিক দেখাশোনা করত, আমেরিকান গলফ ইন্ডাস্ট্রি, যারা তার ক্লাবে নানা ধরনের ব্যবসা নিয়ে আসত, তারাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এমনকি যে কানাডিয়ান কম্পানিটি তার অনলাইন স্টোরগুলো দেখাশোনা করত, তারাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ট্রাম্প থেকে।
ব্র্যান্ডিং বিশেষজ্ঞ স্যালি হগশেড বলেন, রাজপ্রাসাদ থেকে বেরোনোর সময় তিনি তাতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে এসেছেন। কিন্তু এমনটা করার ফলে তার নিজের ব্র্যান্ড স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো। এ মুহূর্তে ট্রাম্প ব্র্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি বিশাল অংশের মানুষের কাছে আগের চেয়ে অধিক লজ্জার ব্যাপার হবে। তবে এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ট্রাম্প সংস্থা মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে ট্রাম্পকে প্রত্যাখ্যান করেছে ওয়াল স্ট্রিট, সিলিকন ভ্যালি ও ওয়াশিংটন। ইন্টারনেট জায়ান্টগুলোও তাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে ছুড়ে ফেলেছে। যেখানে সহিংসতা চলাকালীন বিতর্কিত পোস্ট দেয়ার কারণে তার ওপর তাৎক্ষণিকভাবে বিভিন্ন মেয়াদে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রতিষ্ঠানগুলো।
ই-কমার্স প্লাটফর্ম শপিফাই বলেছে, তারা ট্রাম্পের ই-কমার্স স্টোর বন্ধ করে দিয়েছে। সংস্থাটির মুখপাত্র বলেন, সহিংসতাকে উৎসাহিত করতে পারে এমন কোনো কিছুই সহ্য করা হবে না। পাশাপাশি যেসব ব্যাংকের সঙ্গে ট্রাম্প এবং তার পরিবার কাজ করে, সেগুলোও এরই মধ্যে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিচ্ছে।
নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেছেন, ডয়েচে ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প এবং তার কম্পানির সঙ্গে পরবর্তী ব্যবসায়িক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার। একইভাবে সম্পর্কে ছেদ ঘটিয়েছে সিগনেচার ব্যাংকও, যার পর্ষদে একসময় ইভাঙ্কা ট্রাম্পও যুক্ত ছিলেন। ব্যাংকটির এক মুখপাত্র বলেছেন, তারা ট্রাম্পের দুটি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টও বন্ধ করে দিতে যাচ্ছেন, যেখানে তার ৫৩ লাখ ডলার রয়েছে।
এইচপির সাবেক সিইও কার্লি ফিওরিনা বলেন, ট্রাম্পের ব্যবসার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। কারণ তার ব্রান্ডটি বিষাক্ত, যা তার ব্যবসায় বেশ ভালোই প্রভাব রাখবে। কেবল উল্লিখিত কয়টিই নয়, ক্যাপিটলে হামলার পর আরো অসংখ্য সংস্থা ট্রাম্প এবং তার কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, যা তার প্রেসিডেন্ট-পরবর্তী সময়ের কঠিন ভবিষ্যতের দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সর্বশেষ এতে যুক্ত হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম রিটেইলার ওয়ালমার্ট ও ওয়াল্ট ডিজনির নাম। যেসব আইনপ্রণেতা ট্রাম্পের সমর্থনে জো বাইডেনের জয়কে স্বীকৃতি দিচ্ছেন না, তাদেরকে অনির্দিষ্টকালের জন্য তহবিল সরবরাহ বন্ধ করবে দুই শীর্ষ মার্কিন কম্পানি। গত কয়েকদিনে তহবিল সরবরাহ বন্ধের এমন ঘোষণা দিয়েছে এটিঅ্যান্ডটি, অ্যামাজন ও মাস্টারকার্ড। জেনারেল মোটরস (জিএম) গত মঙ্গলবার জানায়, ক্যাপিটলের ওই ঘটনার পর সব ধরনের রাজনৈতিক অনুদান বন্ধ করেছে তারা।
এদিকে বিভিন্ন মিডিয়া থেকেও ট্রাম্পকে একঘরে করে রেখেছেন। টিভি চ্যানেলের বাইরেও টুইটার, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গত নির্বাচনে হারার পর খবরে এসেছিল ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়াও ট্রাম্পকে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। সবমিলিয়ে ট্রাম্প গভীর এক খাদে পড়তে যাচ্ছেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তবে অনেকের মতে, রাজনীতি এবং গণতন্ত্রে আমেরিকাকে যে খাদে ফেলেছেন ট্রাম্প, আমেরিকাকে যে জটিল এক পরীক্ষায় বসিয়ে দিয়েছেন, ট্রাম্প নিজেও আমেরিকার মতো গহীন এক খাদে পড়তে যাচ্ছেন।
এসডব্লিউ/বিবি/কেএইচ/১৯০২
আপনার মতামত জানানঃ