টেকনাফ উপজেলা হ্নীলার নয়াপাড়া নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডে পাঁচ শতাধিক ঘর পুড়ে ভস্মিভূত হয়ে গেছে। তবে এ ঘটনায় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আজ বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) ভোররাতে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
আগুন লাগার খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, এপিবিএন, পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকেরা নিরাপত্তাবেষ্টনীতে নিয়োজিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটার দিকে টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার ফায়ার সার্ভিসের দুটি দল ও রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। অগ্নিকাণ্ডে কারো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও ২০-২৫ জন নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে টেকনাফ নয়াপাড়া রেজিষ্টার্ড শরণার্থী ক্যাম্পের ই-ব্লকের একটি ঘর থেকে আকস্মিক অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। পলিথিনের চাল ও বেড়া হওয়ায় আগুন দ্রুত চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যেক ঘরে গ্যাস সিলিন্ডার থাকায় তার অধিকাংশ বিস্ফোরিত হয়ে আগুন অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়। খবর পেয়ে টেকনাফ ফায়ার সার্ভিস ও রোহিঙ্গারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। দীর্ঘ চেষ্টার পর ভোরের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাম্পের ছৈয়দুর রহমান নামে একজন বাসিন্দা বলেন, অগ্নিকাণ্ডে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই-ব্লকের অন্তত ৫৫২টি রোহিঙ্গা ঘর পুড়ে যায়। এ সময় ইউএনএইচসিআরের একটি কমিউনিটি সেন্টার এবং পার্শ্ববর্তী ২টি স্থানীয় লোকের বসত ঘরও আগুনে পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে। এ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ভাসমান আরো কিছু ঝুপড়ি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ক্যাম্প এলাকায় কাজ করা শৃংখলা বাহিনী সূত্র জানায়, নয়াপাড়া আর্মি ক্যাম্প অধীনস্থ রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প মুচনী (রেজিস্টার্ড) বিকাশ মোড় ও মাকরাজ মসজিদ সংলগ্ন স্থান ব্লক-ই ,শেড নং (৯৭৫) ও ঘর নং ১/২ রোহিঙ্গা শরণার্থী মৃত মো. নুর কবিরের ঘর থেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। মুহুর্তে ব্লক-ই, ব্লক-বি, ব্লক-ডি ও বি ব্লকের দোকান ঘরে ছড়িয়ে যায়।
খবর পেয়ে টেকনাফ ও উখিয়ার ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রায় ৩ ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়।
নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পের ইনচার্জ আব্দুল হান্নান অগ্নিকাণ্ডের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ভোররাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটায় কিভাবে তা ঘটলো এখনো জানা যায়নি। হিসাব মতে আগুনে ৫৫২টি ঘর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিছু দোকানপাট পুড়ে থাকতে পারে, সেগুলো ক্যাম্পের ঘর হিসেবে গণ্য নয়। ক্ষতিগ্রস্তদের পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে রাত যাপনের ব্যবস্থা করার প্রচেষ্টা চলছে। তাদের জন্য নিয়মানুসারে আবারও ঘর করা হবে।
টেকনাফ ফায়ার সার্ভিসের দলনেতা মুকুল কুমার নাথ জানান, রোহিঙ্গা শিবিরে আগুন লাগার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে কেউ বলছেন গ্যাসের চুলা থেকে, আবার কেউ বলছেন লাকড়ির চুলা থেকে, আবার কারও মতে সিগারেটের আগুন থেকে আগুনের সূত্রপাত। তদন্ত সাপেক্ষে আগুন লাগার কারণ জানা যাবে এবং প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণের কাজ চলছে।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার সামছু-দৌজা বলেন, “বুধবার দিবাগত রাত ৩ টায় টেকনাফের নয়াপাড়া নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে আকস্মিক আগুন লেগে যায়। পরে খবর পেয়ে টেকনাফ ফায়ার সার্ভিসের দুটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে। প্রায় ২ ঘন্টা চেষ্টার পর ভোর ৫ টায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। এরই মধ্যে ক্যাম্পটির অন্তত ৫০০ এর অধিক রোহিঙ্গা বসতঘর সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।”
নয়ন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে খাবারের পাশাপাশি আপাতত লার্নিং সেন্টারগুলোয় আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পরবর্তী সময়ে অন্যত্র স্থানান্তর করা হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫২৫
আপনার মতামত জানানঃ