 লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি। নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ‘মোনালিসা’ কিংবা ‘দ্য লাস্ট সাপার’-এর ছবি। তবে শুধুমাত্র চিত্রশিল্পীই ছিলেন না তিনি। ছবি আঁকার পাশাপাশিই বিজ্ঞান, প্রযুক্তি নিয়েও আশ্চর্য সব কাজ করেছেন ভিঞ্চি (Leonardo Da Vinci)।
লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি। নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ‘মোনালিসা’ কিংবা ‘দ্য লাস্ট সাপার’-এর ছবি। তবে শুধুমাত্র চিত্রশিল্পীই ছিলেন না তিনি। ছবি আঁকার পাশাপাশিই বিজ্ঞান, প্রযুক্তি নিয়েও আশ্চর্য সব কাজ করেছেন ভিঞ্চি (Leonardo Da Vinci)।
আজ থেকে ৫০০ বছর আগেই তৈরি করেছেন হেলিকপ্টার, বিমান, সাঁজোয়া গাড়ি, বহুমুখী কামান, সাবমেরিনের মতো যন্ত্রের নকশা। তার কাজের অধিকাংশ নথি হারিয়ে গেলেও, বিস্মিত করে অবশিষ্টাংশটুকুই। এবার সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এল ভিঞ্চির জীবনের আরও এক অজানা অধ্যায়।
নিউটনের অভিকর্ষ সূত্র (Gravity) আবিষ্কারেরও দুশো বছর আগে মহাকর্ষ নিয়ে গবেষণায় নেমেছিলেন স্বয়ং ভিঞ্চি। হ্যাঁ, এমনটাই প্রকাশ্যে এল ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির এক অধ্যাপক মরি ঘারিবের গবেষণায়। এমনকি মহাকর্ষের রহস্য সমাধানে ভিঞ্চি যে অনেকটাই এগিয়েছিলেন, তারও প্রমাণ দেয় তাঁর গবেষণাপত্র।
ব্যাপারটা একটু খুলে বলা যাক। ২০১৭ সাল। ১৪৮০-১৫১৮— ভিঞ্চির শেষ বয়সের কাজগুলির বিষয়ে একটি বিশেষ গবেষণামূলক প্রবন্ধ রচনার জন্যই গবেষণা শুরু করেছিলেন ডঃ মরি। সে-সময় লিওনার্দোর নোটবুক ‘কোডেক্স আরুন্ডেল’ অধ্যয়ন করতে গিয়েই আশ্চর্য বেশ কিছু ছবি নজর কাড়ে তাঁর। কী সেই ছবি?
সাধারণভাবে দেখতে গেলে, তা একই ভূমির ওপর অঙ্কিত বেশ কয়েকটি সমকোণী ত্রিভূজের সমাহার। তবে আদতে সেগুলি গ্রাফ। ত্রিভূজের লম্ব এবং ভূমিতে লিখে রাখা পরিবর্তনশীল রাশির নামই, প্রমাণ দেয় তার। ত্রিভূজগুলির লম্ব বাহুকে ‘ন্যাচারাল মোশান’ এবং ভূমিকে ‘ডিরেক্ট মোশান’ হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন ভিঞ্চি।
অন্যদিকে অতিভূজকে চিহ্নিত করেছিলেন ‘ইক্যুয়ালাইজেশন অফ মোশান’ হিসাবে। মরির অভিমত, ‘ইক্যুয়ালাইজেশন অফ মোশান’ আর কিছুই নয়, তা আদতে ত্বরণ। অর্থাৎ, পতনশীল বস্তুর গতি সময়ের সঙ্গে বাড়ে, তা বুঝতে পেরেছিলেন লিওনার্দো। তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন সময় ও গতি বৃদ্ধির সম্পর্ক।
তবে এক্ষেত্রে একটু ভুল হয়ে গিয়েছিল ভিঞ্চির। ত্বরণ পরিমাপের সময় সময়ের বর্গ করার বদলে সময়ের মাণকে ২ দিয়ে গুণ করেছিলেন তিনি। ফলে, গণ্ডগোল বাঁধে গোটা হিসাবে। এখানে এও বলে রাখার প্রয়োজন যে ভিঞ্চি বুঝেছিলেন এই ত্বরণ কেবলমাত্র কাজ করে অবাধে পতনশীল বস্তুর ক্ষেত্রেই।
অবাক করার বিষয়, এই ত্বরণের নিরিখে অভিকর্ষ ধ্রুবক বার করার চেষ্টাও করেছিলেন তিনি। ভিঞ্চির গবেষণায় তার মান আসল অভিকর্ষ ধ্রুবকের ৯৭ শতাংশ। অর্থাৎ, রহস্য সমাধানের একদম নিকটেই পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি।
উল্লেখ্য, ভিঞ্চি যে-সময় এই গবেষণা চালিয়েছেন, তখনও পর্যন্ত সময় পরিমাপের উপযুক্ত ও নির্ভুল হাতিয়ার ছিল না মানুষের হাতে। ছিল না জড়তা সূত্র, এমনকি ক্যালকুলাসও।
তা সত্ত্বেও এমন আশ্চর্য এক গবেষণায় এতদূর এগিয়ে যাওয়া কি মুখের কথা? ভিঞ্চি ঠিক কী কী নিয়ে কাজ করেছিলেন তাঁর জীবদ্দশায়, তার সবটা আজও অজানা মানুষের কাছে। তবে সেই রহস্য সমাধান হলে, বিজ্ঞানের ইতিহাসকে নতুন করে লেখার প্রয়োজন হতে পারে বলেই মনে করছেন মরি।
 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
আপনার মতামত জানানঃ