সাম্প্রতিককালে পত্রিকার পাতা কিংবা সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতার ঘটনা বৃদ্ধির প্রবণতা আমাদের চিন্তিত করে তুলেছে। প্রতিদিন একে পর এক নৃশংস ঘটনা ঘটেই চলেছে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এ ব্যাপারে যতই সরব, ঠিক উল্টা চিত্র পাওয়া যায় রাষ্ট্রতন্ত্র যারা পরিচালনা করছে, তাদের কাছ থেকে।
প্রতিদিনই আমরা দেখছি নারী ঘরে, বাইরে কর্মস্থলে, বাসে, ট্রেনে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। শুধু তাই নয় নির্যাতনের পর তাকে হত্যাও করা হচ্ছে। এসব ঘটনার পরও সুষ্ঠু ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রত্যাশা করা যায় না। বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমাদের কুরে কুরে খাচ্ছে।
নাজনীন ধর্ষণ মামলার চূড়ান্ত রায় পেতেও তার প্রভাবশালী ধনাঢ়্য পরিবারকে এক যুগেরও বেশি অপেক্ষা করতে হয়েছে। তাহলে প্রত্যেক নির্যাতিতা নারী ও শিশুদের সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার আশা করা যে যাচ্ছে না তা বোঝা যাচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় অক্টোবর মাসে সারা দেশে ২১১ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৭ জন কন্যাশিশুসহ ৪০ জন। আর আটজন কন্যাশিশুসহ ১০ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। একটি কন্যাশিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের মাসিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপপরিষদে সংরক্ষিত ১৩টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদর ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করে সংগঠনটি।
নারী নির্যাতন কেন বাড়ছে?
মহিলা আইনজীবী সমিতির এক জরিপে বলা হয়েছে নানা কারণে ধর্ষণ মামলার ৯০ শতাংশ আসামি খালাস পেয়ে থাকে। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে ‘প্রশাসনে দলীয় লোক থাকার কারণে এসব ঘটনার অপরাধীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় পার পেয়ে যাওয়ার আরেক কারণ। এছাড়া ফৌজদারি আইনের দুর্বলতার কারণে অপরাধীর উপযুক্ত শাস্তি হয় না। এ বিষয়ে জনপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আইন প্রয়োগের অভাবে এখানে ধর্ষণ মহামারি রূপ নিয়েছে।
তাই আইনের প্রয়োগে জনতার অংশগ্রহণ ও সামাজিকভাবে ধর্ষকদের শাস্তি দিতে হবে। এক্ষেত্রে হতে পারে চিহ্নিত ধর্ষকদের ছবি বা পোস্টার এলাকায় এলাকায় ছড়ানো। তাদের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্ক না রাখা। সামাজিকভাবে সর্বত্র তাদের চলা ফেরায় সীমাহীন লজ্জা বা অপমান করা। যাতে করে লজ্জার সংস্কৃতি সৃষ্টি হয় বাংলাদেশে। কারণ লজ্জার সংস্কৃতির অভাবেই আজ একটি পরিবার নির্লজ্জ হয়ে তার ধর্ষক ছেলে, ভাই ও আত্মীয়দের বাঁচাতে আসে। জাপানে একজন মানুষ সাধারণ লজ্জায় আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে।
অথচ এদেশে ধর্ষণ করে মিষ্টি খাওয়ানোর সংস্কৃতি চালু ছিল। যেসব পুরুষ এ ধরনের অপরাধ একের পর এক করেই যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক একটি গোপনীয় প্রায়ই যোগসৃত পাওয়া যায়। ফলস্বরূপ পুলিশ ও মেডিক্যাল রিপোর্ট এবং সর্বোপরি বিচার বিভাগ লোক ন্যায়বিচার পাওয়া সুদূর পরাহত বিষয়ে নরপশুরা একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। বিচারহীনতার সহিংসতার সঙ্গে রাজনৈতিক পেশি শক্তির সম্পৃক্ততা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। কিছুদিন পূর্বে জাতীয় সংসদে ধর্ষকদের প্রকাশ্যে শাস্তি প্রদান করার জন্য ফাঁসি দেয়ার কথা বলা হয়। এতে করে সরকারের/রাষ্ট্রের অসহায়ত্বের চিত্র ফুটে উঠে।
আপনার মতামত জানানঃ