গতকাল দুপুরের দিকে বের হলাম অফিস থেকে। লক্ষ্য—বিরোধী ও সরকারদলীয় সমাবেশের দিকে যাওয়া। সকাল থেকেই জল্পনাকল্পনা, আজ (গতকাল) আসলে কী হবে?
এদিকে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশের প্রধান অতিথি থাকার কথা দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের। কিন্তু তিনি ঢাকা ছেড়ে গেছেন সরকারপ্রধানের সঙ্গে চট্টগ্রামে দেশের প্রথম টানেল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে, অন্য নেতা–মন্ত্রীরাও। তাহলে কি সরকার বা সরকারদলীয় নেতা-মন্ত্রীরা ঢাকা নিয়ে অতটা চিন্তিত নন?
বিএনপি থেকেও কর্মীদের প্রতি বারবার বলা হয়েছে, তারা ‘অহিংস’ কর্মসূচি করতে চায়। দেশের গোটা রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নজর আছে, সেই বিবেচনা থেকেও দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়াবে না, এমনটা আশা করা যাচ্ছিল। কিন্তু জনমনে যে শঙ্কা ছিল, সেটিই সত্য হলো। সমাবেশস্থলের দিকে যাত্রার আগেই সংঘর্ষ শুরু হয়ে গেছে।
এদিকে, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা আজ রোববার সকাল-সন্ধ্যার হরতাল এবং গতকাল শনিবার ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতা, ভাঙচুর ও নাশকতার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের ১৪টি জেলা থেকে ৫৩২ জনকে আটকের খবর পাওয়া গেছে।
বগুড়ায় শিশু গুলিবিদ্ধ
বগুড়ায় মহাসড়কে যানবাহন থামিয়ে পিকেটিং করার সময় হরতাল-সমর্থকদের সরিয়ে দিতে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) বিরুদ্ধে। এ সময় এক শিশু গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে শত শত গ্রামবাসী মহাসড়ক অবরোধ করে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছোড়েন।
পুলিশ পাল্টা শটগানের গুলি ছুড়লে উভয় পক্ষে ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। এ সময় আরও অন্তত চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের গোকুল খোলারঘর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ ও আহত ব্যক্তিরা হলো গোকুল খোলারঘর এলাকার ধলু মিয়ার ১০ বছরের শিশু মাহি, শিক্ষার্থী নয়ন, রাজু, আওলাদ ও গফুর। এ ছাড়া সাব্বির আহমেদ সাকিল নামের স্থানীয় একটি দৈনিকের সাংবাদিকও ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন।
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, রোববারের হরতালে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাধারণ মানুষ সমর্থন জানিয়েছেন। শহরে বিএনপির সমাবেশ চলাকালে সরকারি দলের গুন্ডারা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে হাতবোমা হামলা ও গুলি চালিয়েছে।
পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন। হরতালের আগে কারণ ছাড়াই শতাধিক নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গোকুলে সকাল থেকে গ্রামবাসীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে মহাসড়কে পিকেটিং করছিলেন। পুলিশ বিনা উসকানিতে গ্রামবাসীদের ওপর দফায় দফায় গুলিবর্ষণ করেছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসায় পুলিশের অভিযান
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসায় বাসায় অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। সকালে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে গুলশান থেকে আটক করা হয়।
বিএনপি জানিয়েছে, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনের বাসায় তল্লাশি ও অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আজ সকাল নয়টায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তাঁর বাসা থেকে নিয়ে যায়। তাঁকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।
সকাল নয়টার দিকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বনানীর বাসায় দুটি ফ্ল্যাটে পুলিশ তল্লাশি চালায়। তবে সে সময় তিনি বাসায় ছিলেন না।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে ইসরাফিল খসরু সাংবাদিকদের বলেন, সকালে ডিবি সদস্যরা এসে তাঁর বাবাকে খুঁজতে তল্লাশি চালান। তাঁরা বাসার প্রতিটি কক্ষ খুঁজে দেখেন। তিনি জানান, ডিবি সদস্যরা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর পাসপোর্ট এবং তাঁর স্ত্রীর মুঠোফোন নিয়ে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট পর সেগুলো ফেরত দেন।
ইসরাফিল আরও বলেন, তাঁর বাবা কোথায় আছেন, তা ডিবি সদস্যরা জানতে চেয়েছেন। পুলিশ তাঁদের জানিয়েছে দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে তল্লাশি চালানো হয়েছে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার বলেন, ইশরাক হোসেনের গুলশানের বাসায় ডিবি অভিযান ও তল্লাশি চালিয়েছে। তবে তাঁকে না পেয়ে তাঁর ছোট ভাই ইশফাক হোসেন ও গাড়িচালক রাজীবকে নিয়ে গেছেন ডিবি সদস্যরা।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাসের বাসা পুলিশ ঘেরাও করে রেখেছে বলে জানিয়েছেন শামসুদ্দিন দিদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মির্জা আব্বাসের শাজাহানপুরের বাসায় দুপুরে ডিবির সদস্যরা ঘেরাও করে রেখেছেন। তবে মির্জা আব্বাসকে বাসায় না পেয়ে ডিবি ফিরে যায়।
এর আগে আজ ভোরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছিলেন উল্লেখ করে শামসুদ্দিন দিদার বলেন, সকালে তাঁরা চলে যান।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আজ সকালে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের লালমাটিয়ার বাসায় সাদাপোশাকের পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। তবে তিনি বাসায় ছিলেন না।
বিএনপির নেতাদের বাসায় তল্লাশি ও অভিযানের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। ডিবি পুলিশ এটা বলতে পারবে। অবশ্য বিষয়টি নিয়ে ডিবির কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আপনার মতামত জানানঃ