চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) আশ্রয় চেয়েছে প্রায় ২১ হাজার বাংলাদেশি। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাসের শেষ পর্যন্ত জোটের ২৭ সদস্য দেশ এবং সহযোগী সুইজারল্যান্ড ও নরওয়েতে আশ্রয়ের জন্য কতো আবেদন জমা পড়েছে তা প্রকাশ করেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এজেন্সি ফর অ্যাসাইলাম (ইইউএএ)। এতে আশ্রয় আবেদনকারীদের মধ্যে ছয় নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশিরা।
নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে বাঁচতে সংঘাত কবলিতদের মানবিক কারণে রাজনৈতিক আশ্রয় বা অ্যাসাইলাম দিয়ে থাকে বিভিন্ন দেশ। অনেক বাংলাদেশিই এই সুযোগ নেন। তবে দৃশ্যমান কোনো যুদ্ধ-সংঘাত না থাকলেও বছর বছর বাংলাদেশিদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের প্রবণতা বেড়েই চলেছে।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এজেন্সি ফর অ্যাসাইলামের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে ইইউ এর ২৭ দেশে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন পাঁচ লাখ ১৯ হাজার ৪১৪ জন। যা এ যাবতকালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আগের বছরের তুলনায় আবেদনের হার বেড়েছে ২৮ শতাংশ।
ইইউএএ জানিয়েছে, এ বছরের প্রথম ছয় মাসে মোট আবেদন এসেছে ৫ লাখ ১৯ হাজার। এই সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি। মোট আবেদনকারীদের মধ্যে বাংলাদেশি ২০ হাজার ৯২৬ জন।
মঙ্গলবার নিজেদের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি। ধারণা করা হচ্ছে, এই হারে আবেদন পড়তে থাকলে এ বছরের শেষ নাগাদ মোট আবেদনের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। সিরিয়া যুদ্ধের কারণে ২০১৫-১৬ সালে সর্বশেষ এত বেশি আশ্রয় আবেদন পেয়েছিল ইইউ।
২০১৫ সালে ইউরোপীয় দেশগুলো সাড়ে ১৩ লাখ আশ্রয় আবেদন পেয়েছিল। ২০১৬ সালে সেই সংখ্যা ছিল সাড়ে ১২ লাখ। কিন্তু ২০১৭ সালে ইইউ তুরস্কের সঙ্গে অবৈধ সীমান্ত পারাপার রোধে চুক্তি করার পর আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা কমে আসে।
২০২০-২১ সালে করোনাভাইরাস মহামারির সময় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণেও আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা ছিল অনেকটাই কম। তবে সেই সংখ্যা আবারো বাড়ছে। ইইউএএ বলেছে, ২০২২ সালে আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা একলাফে ৫৩ শতাংশ বেড়ে যায়। এ কারণে ইউরোপীয় দেশগুলো ‘চাপে পড়েছে’ বলে মনে করছে সংস্থাটি।
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনীয়দের বিশেষ সুরক্ষা সুবিধা দিচ্ছে ইইউ। এর মাধ্যমে অন্তত ৪০ লাখ ইউক্রেনীয় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় পেয়েছেন। তাদের বসবাসের বন্দোবস্ত করতে গিয়েই চাপে পড়তে হচ্ছে দেশগুলোকে। তবে এ ছাড়াও আবেদনকারীদের মধ্যে এক-চতুর্থাংশই সিরীয় এবং আফগান নাগরিক রয়েছেন। এরপর রয়েছেন ভেনেজুয়েলা, তুরস্ক, কলম্বিয়া, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নাগরিকরা।
২০১৫-১৬ সালে বেশির ভাগ সিরীয় শরণার্থী গ্রহণ করেছিল জার্মানি। এ বছরও আশ্রয়প্রার্থীদের অন্যতম পছন্দের গন্তব্য সেটি, বিশেষ করে সিরীয় ও আফগানদের কাছে। ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে ইউরোপে সিরীয়দের প্রায় ৬২ শতাংশ আশ্রয় আবেদনই পেয়েছে জার্মানি। আর ভেনিজুয়েলার আশ্রয়প্রার্থীদের প্রধান গন্তব্য স্পেন। সামগ্রিকভাবে, ৪১ শতাংশ আবেদনকারী হয় শরণার্থী মর্যাদা অথবা থাকার জন্য অন্য ধরনের সুরক্ষা পেয়েছেন।
এদিকে, ইইউ ব্লকের দেশগুলো আশ্রয়প্রার্থী মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকায় বেশ চাপে রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের ৪০ লাখ মানুষ ইইউভুক্ত বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে। যুদ্ধের কারণে দেওয়া সুরক্ষা সুবিধা পাচ্ছেন তারা। এতে অন্য দেশগুলো থেকে ইইউ এলাকায় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য বাসস্থান ও সহযোগিতার ব্যবস্থা সংকুচিত হয়ে গেছে।
ইইউ দেশগুলো আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বেশ চাপে রয়েছে বলে জানিয়েছে ইইউএএ। এছাড়া, ২০২২ সালে জমা পড়া আবেদনের ৩৪ শতাংশ এখনো পরীক্ষা করে দেখা বাকি আছে।
আপনার মতামত জানানঃ