বিদেশি ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় সংকটের মুখে পড়েছে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প। এ অবস্থায় কোনো রকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই যা পাচ্ছেন, সেই কাজ নিতে বাধ্য হচ্ছেন গার্মেন্টস মালিকরা। এতে অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরি হওয়ায় বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পণ্যের দাম যেমন কমছে, তেমনি হারাচ্ছে পণ্যের মানও।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ এলাকার একটি গার্মেন্টসে সরেজমিনে দেখা গেছে, এক ফ্লোরের একদিকে চলছে জ্যাকেটের কাজ, আরেক অংশে চলছে জেন্টস টি-শার্ট। একই ফ্লোরে আবার লেডিস টি-শার্ট যেমন চলছে, তেমনি চলছে স্পোটর্স শর্টস তৈরি। এক ফ্লোরেই চলছে চার ধরনের পণ্য উৎপাদন। অথচ ৬ মাস আগেও এই ফ্লোরে চলতো শুধুমাত্র বিশ্বখ্যাত পোলো শার্ট তৈরির কাজ।
শুধু এই গার্মেন্টস নয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ গার্মেন্টসের এখন একই চিত্র। ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ায় কারখানাগুলো তাদের বিশেষত্ব ধরে রাখতে পারছে না। বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে কাজ আদায় করে নেয়াই এখন মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ব অর্থনীতির নানা জটিলতায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত চরম দুঃসময় অতিক্রম করছে। রফতানি আয় ধরে রাখাই এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। তাই উৎপাদন ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার জন্য যে কাজই পাচ্ছেন, সেটিই করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রথম সহ সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন,
আমরা যে পণ্য তৈরিতে অভিজ্ঞ, সেই পণ্যের ক্রয়াদেশ পাচ্ছি না। ফলে আমরা যেখান থেকে যে পণ্যের ক্রয়াদেশ পাচ্ছি, সেটি কারখানা চালু রাখার স্বার্থে নিয়ে নিচ্ছি।
এতে যেমন কাজের মান কমছে, তেমনি পণ্যের দামও কমছে। এভাবে কাজ আদায় করতে গিয়ে বিশ্ববাজারে ধস নামছে বাংলাদেশি পণ্যের দামেও। বিশেষ করে ২৫ মার্কিন ডলারের জ্যাকেট এখন মাত্র ১৫ ডলার। একইভাবে ১২ ডলারের শার্ট ৮ ডলারে, ১৫ ডলারের ডেনিম প্যান্ট ১০ ডলার, ২০ ডলারের চিনো শার্ট ১২ ডলারে সরবরাহ করতে বাধ্য হচ্ছেন গার্মেন্টস মালিকেরা।
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব বলেন, উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য আমাদের হাতে যখন যে পণ্যের ক্রয়াদেশ আসছে, আমরা সেটিই নিচ্ছি। হয়তো আগে আমরা এই পণ্যটি বানাতাম না, এখন আমার বাধ্য হয়ে বানাতে হচ্ছে।
তবে সাম্প্রতিক মিয়ানমারভিত্তিক কিছু ক্রেতা বাংলাদেশমুখী হওয়ায় ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্য ভালো অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে সেখানে ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে বাংলাদেশি জ্যাকেটের চাহিদা বাড়ছে।
ইউরোপকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার উল্লেখ করে বিজিএমইএ’র সহ সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, যেহেতু সেখানে ঠান্ডার মৌসুম বেশি থাকে, তাই সেই বাজারের জন্য আমরা জ্যাকেট বেশি উৎপাদন করে থাকি।
নানা জটিলতার মাঝেও ২০২২ সালে ৪৪ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি করে বিশ্ববাজারে দ্বিতীয় স্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। ২০২২-২৩ অর্থ বছরের ৪৬ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়েছে। যা গত অর্থবছরের তুলনায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার বেশি।
এসডব্লিউএসএস/১৫০৫
আপনার মতামত জানানঃ