মোঃ তাজুল ইসলাম বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের এলজিআরডি মন্ত্রী। সর্বশেষ ২০১৪ সালে বিনা ভোটে এবং ২০১৮ সালে নাইট ব্যালটে তিনি কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসন থেকে সংসদ সদস্য পদে জয়ী হন। মন্ত্রী তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে তাঁর নিবাচনী এলাকার সাধারণ মানুষ, বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কমীদের যেমন বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ আছে, পাশাপাশি তাঁর নিজের দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদেরও প্রকাশ্যে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ ও ক্ষোভ আছে জানা যায়।
এই প্রতিবেদক স্থানীয় সরকারী দলের অনেক নেতা-কর্মীর সাথে আলাপ করে জানতে পারেন, জনাব তাজুল ইসলাম মন্ত্রী হওয়ার আগেও তাঁর নির্বাচনী এলাকার নিবেদিতপ্রাণ ও যোগ্য নেতা-কর্মীদের মূল্যায়িত না করে দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসে লিপ্তদের প্রাধান্য দিতেন। জনাব তাজুল ইসলাম স্থানীয় রাজনীতিতে সন্ত্রাসীদের প্রাধান্য দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ আছে। এদের মাধ্যমে তিনি তার সংসদীয় এলাকায় তিনি বেশ রাজনৈতিক মাফিয়া হয়ে উঠেছেন।
অভিযোগে জানা যায়, তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় তাঁর মতামতের কোনো ধরনের বিরোধিতা সহ্য করতে পারেন না। ফলে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা এলাকায় কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারে না। কোনো ধরনের মিছিল, সভা-সমাবেশ করতে পারে না। বিরোধী দলের প্রায় সব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অসংখ্য ভুঁয়া ও মিথ্যা রাজনৈতিক মামলা দেওয়া হয়েছে। যে কারণে বিরোধী দলের অনেক নেতা-কর্মী পলাতক, রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। তার নিজের নিয়ন্ত্রিত সন্ত্রাসী দল ছাড়াও তিনি তার বিরোধীদের দমনে পুলিশ ও প্রশাসনকে অনৈতিকভাবে ব্যবহার করেন।
মন্ত্রী পদ পাওয়ার পর তিনি তার নির্বাচনী এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সব রাজনৈতিক পদে পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের প্রাধান্য দিয়েছেন। এতে তার দলের অনেক নেতাকে অবমূল্যায়ন করা হয়। তিনি তার নিজের নির্বাচনী এলাকা লাকসামে শ্যালককে ভাইস চেয়ারম্যান এবং তার ভাগ্নেকে মনোহরগঞ্জ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেন। এতে করে এলাকায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনায় তার বেশ সুবিধা হয়। পারিবারিক এসব পদায়নের মাধ্যমে তিনি ও তার পরিবার ব্যাপক দুর্নীতি করছেন এবং দেশের সম্পদ লুটপাট করছেন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পরপর দুটি জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে তিনি তার এলাকার সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সেই ধারা আরও জোরালোভাবে অব্যাহত রেখেছেন। তার এলাকায় তিনি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন ও পৌরসভা নির্বাচনের কোনোটিতেই নির্বাচন হতে দেননি। এমন বিরল দৃশ্য বাংলাদেশের আর কোথাও দেখা যায়নি। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে প্রতি আসনে একজন করে প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়ে বিনা ভোটে নির্বাচিত করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় তার শ্যালক মহব্বত আলী, যিনি বর্তমানে লাকসাম উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানের পদে আছেন, মন্ত্রী তাজুল ইসলামের পক্ষে সবধরনের আর্থিক লেনদেন করেন।
বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম হিরু ও ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ হুমায়ুন কবির পারভেজ ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর লাকসাম থেকে নিখোঁজ হন। এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে কানাঘুষা চলছে, এলাকায় প্রভাব বিস্তারের জন্য তাজুল ইসলাম সরাসরি এই গুমের সঙ্গে জড়িত। বিরোধী দলকে দমন করার প্রয়াসে মন্ত্রী তাজুল ইসলামের অর্থায়নে ও প্ররোচনায় হিরু ও হুমায়ূন ১০ বছর আগে নিখোঁজ হয় এবং আজ পর্যন্ত তাদের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও, তিনি বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক ফায়দা, টেন্ডারবাজি ও লুটপাটের সুবিধার জন্য তার নিজের দলের দুই কর্মীকে হত্যার প্ররোচনা দেন বলে স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতা-কমীদের থেকে সরাসরি অভিযোগ পাওয়া গেছে। মন্ত্রী তাজুল ইসলামকে লাকসামের ত্রাস ও মাফিয়া হিসাবেই লাকসামের সাধারণ মানুষ মূল্যায়ন করেন।
আপনার মতামত জানানঃ