স্প্যানিশ ক্যাথলিক চার্চের পাদরি এবং নন-ক্লারিক্যাল স্টাফদের দ্বারা শিশুদের যৌন নির্যাতনের একটি তদন্ত ১৯৪০ সাল থেকে চলছে। তার প্রথম প্রতিবেদন অনুসারে ৭২৮ অভিযুক্তকে চিহ্নিত করা গেছে যাদের হাতে ৯২৭ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
স্প্যানিশ বিশপস কনফারেন্সের মুখপাত্র জোসে গ্যাব্রিয়েল ভেরা বলেছেন, “আমরা এই চরম ক্ষতি স্বীকার করি। আমরা সমস্ত ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করতে চাই… তাদের ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করতে চাই ।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ড এবং ফ্রান্সের মতো দেশে যৌন নিপীড়নের কেলেঙ্কারিগুলি চার্চকে নাড়া দেওয়ার কয়েক বছর পর এল পাইস সংবাদপত্র ১২০০টিরও বেশি কথিত মামলার রিপোর্ট করার পরে ২০২১ সালে স্পেনে বিষয়টি আলোড়ন ফেলে দেয় ।
দেশের ন্যায়পালের নেতৃত্বে একটি এবং চার্চের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ তদন্তসহ বেশ কয়েকটি অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে। ভেরা বলেছেন, ”আমরা জানতে চাই যে, যাজক পদের জন্য প্রার্থীদের বাছাইয়ে কী ভুল হয়েছিলো, তাদের প্রশিক্ষণের সময় কী ভুল হয়েছিলো …কী কারণে একজন ব্যক্তি নিজেকে ঈশ্বরের কাছে বিলিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে নিজেকে যৌন নির্যাতনের মতো ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত করেছেন।”
প্রতিবেদনে, ভুক্তভোগীদের সাক্ষ্য তুলে ধরা হয়েছে। জানা গেছে অভিযুক্ত অপরাধীদের ৯৯% এরও বেশি পুরুষ এবং অর্ধেক নির্যাতক ছিলেন ধর্মগুরু। রেকর্ডকৃত বেশিরভাগ ঘটনাই ১৯৬০-৮০ দশকে ঘটেছিল। অভিযুক্ত নির্যাতনকারীদের ৬৩% এরও বেশি ইতিমধ্যেই মারা গেছে।
চার্চ নিয়ে এ ধরণের ঘটনা এই নতুন নয়। এর আগে জার্মান ক্যাথলিক চার্চের ধর্মযাজকরা সেদেশের ৩ হাজার ছয়শোর বেশি শিশুকে নানাভাবে নির্যাতন করেছেন বলে ফাঁস হয় একটি প্রতিবেদন। প্রায় ৭০ বছর ধরে, ১৯৪৬ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত সময়ে এসব ঘটনা ঘটেছে।
চার্চের নিজেদের করা তদন্তেই এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। ২৫শে সেপ্টেম্বর ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়ার কথা রয়েছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটির ১৬৭০ জন যাজক ৩৬৭৭ নাবালকের ওপর যৌন হামলা করেছেন। জার্মান সংবাদপত্র স্পিগেল অনলাইন এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
সারা বিশ্বের রোমান ক্যাথলিক চার্চে যে দশকের পর দশক ধরে যৌন নির্যাতনের ঘটনার তথ্য প্রকাশ হয়ে আসছে, তারই ধারাবাহিকতায় জার্মানির এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাত্র ৩৮ শতাংশ অভিযুক্ত নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে হালকা ধরণের শৃঙ্খলা ভঙ্গের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অথচ প্রতিটি ছয়টি অভিযোগের মধ্যে একটি অন্তত ধর্ষণের ঘটনা রয়েছে। নির্যাতনের শিকার বেশিরভাগই ছেলে শিশু, যাদের বয়স গড়ে ১৩ বছরের নীচে।
অনেক সময় এসব নির্যাতনকারী নতুন এলাকায় কাজ করতে গিয়েছেন, যেখানে কাউকে তাদের আগের অপরাধের বিষয়ে কোন সতর্ক করা হয়নি। জার্মানির তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে চার্চের ওপর ওই অনুসন্ধানী গবেষণাটি করেছে। এর লেখকরা বলছেন, সত্যিকারের নির্যাতনের ঘটনা হয়তো আরো অনেক ব্যাপক, কারণ অনেক তথ্যই ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে বা বিকৃত করা হয়েছে।
পর্তুগিজ ক্যাথলিক চার্চে ১৯৫০ সাল থেকে কমপক্ষে ৪ হাজার ৮১৫ শিশুকে যৌন নির্যাতন করা হয়েছে। নতুন এক তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য। খবর আল-জাজিরার। বিষয়টি তদন্তকারী কমিশন বলেছে, ৭৭ শতাংশ অপরাধীই যাজক এবং নিহতদের বেশিরভাগই পুরুষ।
এই কমিশনের প্রধান এবং শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘(আমরা চাই) যারা শৈশবকালে নির্যাতিতদের শিকার হয়েছিলেন এবং নীরবতা ভেঙ্গে প্রতিবাদ করার সাহনী উদ্যোগ নিয়েছেন তাদের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাতে। এগুলি একটি পরিসংখ্যানের চেয়ে অনেক বেশি।’
তিনি বলেন, চার্চের বাইরে অন্যান্য জায়গার মধ্যে শিশুদের ক্যাথলিক স্কুল, যাজকদের বাড়িতে এবং কনফেসনের স্থানেও নির্যাতন করা হয়েছিল। প্রতিবেদনে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা অক্টোবরে বলেছিলেন, অনুমান অনুযায়ী যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তাদের কাছ থেকে ৪২৪টি বৈধ রেকর্ড সংগ্রহ করেছেন। তারা সতর্ক করে বলেছিলেন, তাদের সাক্ষ্য ইঙ্গিত করে যে শিকারের সংখ্যা ‘অনেক বেশি’।
এরকম গুরুতর পরিস্থিতি কয়েক দশক ধরে চলমান ছিল এবং কিছু ক্ষেত্রে মহামারির আকারও ধারণ করেছে। চার্চে শিশু নির্যাতনের হাজার হাজার প্রতিবেদন বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমানভাবে প্রকাশিত হয়েছে, এই সমস্যাটি মোকাবেলায় পোপ ফ্রান্সিসের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
এসডব্লিউএসএস/১৯৫৫
আপনার মতামত জানানঃ