তপন চাকমা : বাংলাদেশের একটি অংশ যার নাম “পার্বত্য চট্টগ্রাম”। পার্বত্য চট্টগ্রাম গঠিত মূলত তিনটি জেলা নিয়ে রাঙ্গামাটি,বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলা।গোটা পার্বত্য চট্টগ্রাম বলা যায় মনোরম পরিবেশের সুউচ্চ পাহাড়ে ঘেরা।পাহাড়ের নদ নদী,পাহাড়ীয়া ঝর্ণা,বিশাল বিশাল দৃষ্টিনন্দিত সুউচ্চ পাহাড়,পাহাড়ের বুকে প্রাণবন্ত সহজ সরল সাদামাটা পাহাড়ী মানুষদের “জুম চাষ” সবকিছু মিলিয়ে বলা যায় অন্যান্য থেকে পাহাড়ের প্রকৃতিক সৌন্দর্যের বৈচিত্রটা একদম আলাদা।
পাহাড়ের প্রাণবন্ত সাদামাটা সহজ সরল মানুষগুলো কঠিন প্রকৃতিপ্রেমী। তারা প্রতিনিয়ত পাহাড়ী প্রকৃতির সাথে পাগলের মত মিতালী ঘটিয়ে নিজেদের স্বকীয়তাকে খূঁজে নেয়, খূঁজে পায় আনন্দ।পাহাড়ের মানুষগুলো আসলেই অদ্ভূত। তারা বেশ পরোপকারীও বটে।
পাহাড় বেঁচে থাকুক চিরকাল। বেঁচে থাকুক পাহাড়ের বৈচিত্রময় প্রকৃতি। বেঁচে থাকুক স্বাধীন বাতাসের মুক্ত অধিকারে পাহাড়ের সাদামাটা প্রকৃতিপ্রেমী সহজ সরল পাহাড়ী মানুষগুলো।
দিন দিন সবকিছুতেই যেন একটা অকল্পনীয় বিকৃত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ের বাস্তবতার ভিতরে। পাহাড়ের মানুষগুলো আর নিজেদের মত করে চলতে পারে না, ঘুরতে পারে না, খেতে পারেনা, মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নিতে পারেনা– সবকিছুতে তাদের মধ্যে কি যেন একটা সঙ্কিত সঙ্কিত ভাব দেখা দেয়। তাছাড়া পাহাড়ের পথ ঘাট এখন আর সেই আগের মত নেই, অনেক সময় সেখানে লাল রঙের হোলি খেলা হয়। রাষ্ট্র কতৃক আরোপিত কঠিন এক বাস্তবতায় দিন অতিবাহিত হচ্ছে পাহাড়ে।
পাহাড়ে কখনো জারি করা হচ্ছে অপারেশন উত্তোরনের নামে “দাবানল”, আবার কখনো আইনপরিপন্থী বিকল্প সেনা শাসন। পাহাড়ের প্রতি রাষ্ট্রের একদিকে জাতিগত বৈষম্য, অন্যদিকে জাতিগত দমন-পীড়ন। সব মিলিয়ে এক অস্বাস্থ্যকর অস্বাভাবিক মানবেতর বাস্তবতার মধ্যে দিন অতিবাহিত করে ধ্বনিত হচ্ছে পাহাড়ের ক্রন্দন। বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার নেই, নেই স্বাধীনতা। পাহাড়ে বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী সেটেলার বাঙালীদের কতৃক নির্যাতন, নিপীড়নের মূখোমূখী হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত পাহাড়ের মানুষগুলোকে। রাষ্ট্র কতৃক হচ্ছে বিকল্প ধারার শোষন বঞ্চনার শিকার। নেই কোন স্বাধীনতার দীপ্ত আলো, পরাধীনতার দারুণ এক গোলকবৃত্তে আবদ্ধ পাহাড় এবং পাহাড়ের একবেলা খেয়ে বেঁচে থাকা সহজ সরল প্রাণবন্ত মানুষগুলো।
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু পাহাড়ের আদিবাসী মানুষগুলো স্বাধীনতার স্বাদ আদৌ পায়নি। পায়নি পরাধীনতার মুক্তি। রাষ্ট্রীয় বৈষম্য থেকে শুরু করে আদিবাসীদের উপর যে জাতিগত বৈষম্যমূলক আচরন রাষ্ট্রীয় সরকার কতৃক প্রায়োগিক অর্থে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেসব দিক বিবেচনায় পাহাড়ে আদিবাসী অস্তিত্ব এখন বিরাট হুমকির মূখে দাঁড়িয়ে আছে বা রয়েছে।
এসডব্লিউ/টিচা/নসদ/২৩৪৫
আপনার মতামত জানানঃ