আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শব্দযুগল প্রথম প্রয়োগ করেন মার্কিন কম্পিউটারবিজ্ঞানী জন ম্যাককার্থি। ১৯৫৬ সালে তিনি অ্যালান টুরিং, মারভিন মিনস্কি, অ্যালেন নিউয়েল, হার্বার্ট সাইমন প্রমুখ কম্পিউটারবিজ্ঞানের পথিকৃৎকে একত্র করেছিলেন ডার্টমাউথ সামার রিসার্চ প্রজেক্ট নামের একটি কনফারেন্সে।
সেই কনফারেন্সে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটি স্বতন্ত্র নতুন বিশেষায়িত গবেষণাক্ষেত্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আজ থেকে ৬৫ বছর আগে জন ম্যাককার্থি আশা প্রকাশ করেছিলেন, ঘরে ঘরে যেভাবে বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়া হয়, সে রকমভাবে একদিন ঘরে ঘরে কম্পিউটার সার্ভিসের সংযোগ দেওয়া হবে। সে সময় ইন্টারনেট কিংবা ওয়াইফাইয়ের ধারণাও ছিল না কারও। কিন্তু আজ আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অংশ হয়ে উঠেছে কম্পিউটার প্রযুক্তি এবং যান্ত্রিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) মানুষের জন্য যেমন কল্যাণ বয়ে আনতে পারে, তেমনি হয়ে উঠতে পারে ভয়ংকর হুমকি। বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বহুদিন আগেই এ সতর্কবার্তা দিয়ে গেছেন। সে কথাই আবার নতুন করে শোনালেন গুগলের সাবেক চেয়ারম্যান এরিক স্মিড। গুগলের মূল প্রতিষ্ঠানের নাম এখন অ্যালফাবেট।
এ প্রতিষ্ঠানটি এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে উন্নত গবেষণা চালাচ্ছে। এরিক শুরু থেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থান খুব ভালো করেই পর্যবেক্ষণ করে আসছেন। তাঁর চোখে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিনিয়োগের স্বর্ণযুগ এখন। এখনকার কৃত্রিম বুদ্ধিমান যন্ত্র রোগ নিরাময়ে সাহায্য করার পাশাপাশি মানুষের জীবনকে সমৃদ্ধ করবে। তবে মানুষের ধ্বংস ডেকে আনার হাতিয়ারও হতে পারে এরা। তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমান যন্ত্র নিয়ে নীতিমালা করার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
তবে এসের মধ্যেই এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহযোগিতা নিয়ে বিজ্ঞানীরা একটি নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেছেন-যা একটি মারাত্মক প্রজাতির সুপারবাগকে মেরে ফেলতে পারে।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাজার হাজার রাসায়নিক থেকে কার্যকর উপাদানগুলোর সংক্ষিপ্ত তালিকা করতে বিজ্ঞানীরা এআই-এর সহযোগিতা নিয়েছিলেন।
পরে এগুলোর মধ্য থেকে অ্যাবাউসিন নামে একটি পরীক্ষামূলক শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করা হয়, যা পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক তিনটি সুপারবাগের একটিকে মেরে ফেলতে সক্ষম। তবে এই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের আগে আরও গবেষণার প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছেন বিজ্ঞানীরা।
কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা বলছেন, নতুন ওষুধের আবিষ্কারকে ব্যাপকভাবে ত্বরান্বিত করার ক্ষমতা রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার। এটি বিজ্ঞান এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি বিপ্লবী শক্তি হতে পারে। এর সর্বশেষ উদাহরণ নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের ঘটনাটি।
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াকে হত্যা করে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে কিছু ব্যাকটেরিয়া এমনভাবে বিবর্তিত হয়েছে যে- এগুলোকে অ্যান্টিবায়োটিক আর মেরে ফেলতে পারছে না। এ ধরনের ব্যাকটেরিয়াকেই বলা হয় সুপারবাগ। অ্যান্টিবায়োটিক সহিষ্ণু এসব সুপারবাগের সংক্রমণে বছরে বিশ্বের প্রায় ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে।
গবেষকেরা এ ধরনের সুপারবাগের মধ্যে Acinetobacter baumannii নামে একটিকে লক্ষ্যবস্তু করেছিলেন। এটি ক্ষতস্থানকে সংক্রামিত করতে পারে এবং এর কারণে নিউমোনিয়াও হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে তিনটি সুপারবাগকে ‘মারাত্মক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। এটি হাসপাতালের মেঝে এবং চিকিৎসা সরঞ্জামেও বেঁচে থাকতে পারে।
কানাডার ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটির গবেষক ডক্টর জোনাথন স্টোকস এই বাগটিকে ‘এক নম্বর গণশত্রু’ হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। কারণ এই সুপারবাগটিকে প্রচলিত কোনো অ্যান্টিবায়োটিকেই নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছিল না।
এ অবস্থায় ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী ৬ হাজার ৬৮০টি উপাদান থেকে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই ২৪০টি কার্যকর উপাদানের একটি তালিকা তৈরি করে দেয় কৃত্রিম বুদ্ধমত্তা। পরে এগুলোকে ল্যাবে পরীক্ষা করে সম্ভাব্য ৯ টির তালিকা করা হয়। এই ৯ টির মধ্যেই এমন একটি অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া যায় যা Acinetobacter baumannii নামের সুপারবাগটিকে মেরে ফেলতে পারে।
এসডব্লিউএসএস;১৫১০
আপনার মতামত জানানঃ