নারী নয়, পুরুষেরও পিরিয়ড সংঘটিত হয় যদিও তারা কোনও রক্তপাত হয় না। পুরুষের টেস্টোস্টেরন দিনের বিভিন্ন সময় আবর্তিত হয়, আবর্তিত হয় প্রতি মাসে এবং এমনকি একটি ঋতু পর্যন্ত। এছাড়া বয়সের সাথে এ টেস্টোস্টেরন নিঃস্বরণের ফলে তাদের মধ্যে এমনকিছু ট্রিগার হয় যেটাকে বলে মেল মেনোপজ বা অ্যান্ড্রোপজ।
কিন্তু নারী ও পুরুষ উভয়েই জানেনা, কিভাবে এই হরমোনাল মেশিনেসন তাদের শরীরের উপর প্রভাব বিস্তার করে। কসমোপোলিটনে প্রকাশিত একটি আর্টিকেলে বলা হয়, পুরুষের পিরিয়ড জরায়ু এবং egg fertilization এর সাথে সম্পৃক্ত নয়। তবে পুরুষও নারীদের মতো তাদের হরমোনাল শিপট ও পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা লাভ করে।
প্রতিদিন সকালে পুরুষের টেস্টোস্টেরন লেভেল অনেক বেড়ে যায় এবং বিকেলের দিকে সেটা পতিত হয়। এক একদিন টেস্টোস্টেরন এক এক রকম হতে পারে। কেউ কেউ দাবি করেন, এই হরমোনাল ফ্ল্যাকচুয়েশনের কারণে এক প্রকার উপসর্গ দেখা যায়, যেটা আসলে প্রি-মেনিস্ট্রুয়াল সিন্ড্রোমেরই একটি অনুকরণ!
যখনই এই হরমোনাল বা বায়োকেমিক্যাল ফ্লাকচুয়েশন দেখা দেয় তখন পুরুষের মেজাজের মধ্যে বিভিন্ন তারতম্য দেখা যায়, যার মধ্যে ডিপ্রেসন, ক্লান্তি ও মুড সুইং অন্তর্ভুক্ত। অনেকে মনে করেন এ পর্যায়ে পুরুষ নারীদের PMS এর সময় যে উপলব্ধি হয় তা হয়তো অনুধাবন করতে পারেন।
কিন্তু আমরা এই মাসিক হরমোনাল স্যুইং’ কে কী “মেল পিরিয়ড” বলতে পারব? সাইকোথেরাপিস্ট এবং লেখক জেড ডায়মন্ড এর উত্তরে ”হ্যাঁ” বলেছেন। তিনি ‘Iʀʀɪᴛᴀʙʟᴇ Mᴀʟᴇ Sʏɴᴅʀᴏᴍᴇ’ নামে একটি বইও লিখেন।
তিনি বলেছেন, যে সকল হরমোনাল ফ্ল্যাকচুয়েশন ও উপসর্গ দেখা যায় সেগুলোর আসলে সত্যিকার জৈবিক প্রমাণ রয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন,সাইজেন্ডাররা নারীদের মত হরমোনাল সাইকেল অনুভব করেন যেটাকে বলে “mansaturation”!
নারী ও পুরুষের মেজাজের সাথে সম্পৃক্ত হরমোন সম্পূর্ণ পৃথক। ইস্ট্রোজেন নারীর মেজাজ নির্ধারণ করে আর পুরুষের হরমোন টেস্টোস্টেরন তাদের সেকচুয়াল তাড়না, উর্বরতা, মুড এবং বডি টাইপ তৈরির পেছনে ফুয়েল হিসেবে কাজ করে। টেস্টোস্টেরণের মাত্রা যে কোন উপায়ে পরিবর্তন হতে পারে। স্ট্রেস থেকে শুরু করে খাদ্যাভ্যাস। আর এর ফলেই পুরুষের PMS তৈরি হয়।
কেউ কেউ এটাকে সিম্পেথি পিএমএস ও বলে থাকেন। আসলে পুরুষের এ হরমোনাল ফ্ল্যাকচুয়েশন নারীর হরমোনাল ফ্ল্যকচুয়েশনের সাথে কিছু সিমিলারিটি প্রদর্শন করে আর এজন্য এটাকে আমরা male period বলতে পারি।
এ সময় পুরুষের নিউরাল সার্কিটে নারীর মনস্তত্বের কিছু অংশ প্রবেশ করে যার ফলে পুরুষ নারীর ম্যানিউস্ট্রুয়াল সাইকেলের সময়কে উপলব্ধি করে তার মস্তিষ্কের ভেতরেই! হয়তোবা টিকে থাকার স্বার্থেই নারী ও পুরুষের মাঝে আন্ডারেস্টেন্ডিং প্রয়োজনীয় ছিল আর এ জন্য যে সকল আদিম পূর্বসূরি তার সঙ্গীনীর মনস্তত্ব অনুধাবন করতে পারদর্শী ছিল তারাই তাদের জিনকে ভবিষ্যত প্রজন্মে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছিল।
যেহেতু নারীদের মধ্যে আজ থেকে দুই মিলিয়ন বছর পূর্বেই সর্ব প্রথম মেনোপজ বিবর্তিত হয়েছিল, অতএব আমরা বলতে পারি যে হোমো এরেক্টাস পুরুষদের মাঝেও অ্যান্ড্রোপজ বিবর্তিত হয়েছিল ঠিক সে সময় আর এটা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, হোমো এরেক্টাস পুরুষরা মুড স্যুইং ও ডিপ্রেসনে পতিত হয়েছিল বা তাদের মধ্যে হরমোনাল রোটেশন কাজ করতো।
IMS বা Irritable Male Syndrome কী? এটা মূলত টেস্টোস্টেরনের পরিবর্তনের কারণে হয়ে থাকে। যদিও আইএমএস এর কোন মেডিকাল প্রমাণ নেই। এটা সত্য যে টেস্টোস্টেরন শরীর ও মনের স্বাস্থ্যের উপর ভালো প্রভাব বিস্তার করে। এটি মানব দেহকে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু IMS ফ্যাক্টর টেস্টোস্টেরনের হার পরিবর্তন করে দেয়। আর এর ফলে বিভিন্ন অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪৫০
আপনার মতামত জানানঃ