বর্তমান সময়ে বিশ্ব সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ নিয়েছে। অন্যদিকে প্রযুক্তি খাতে এখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গুঞ্জন চলছে। তবে এটি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন এ খাতের অন্যতম পথপ্রদর্শক জিওফ্রে হিন্টন।
তিনি বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জলবায়ু পরিবর্তনের চেয়েও বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। জিওফ্রে হিন্টন, যিনি ‘এআই-এর গডফাদার’ হিসাবে পরিচিত, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গুগলে কাজ করেছেন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অগ্রগতিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক প্রযুক্তি আনার ক্ষেত্রে জিওফ্রে হিন্টন প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি, তার দুই ছাত্রের সাথে, একটি নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন যা ChatGPT, Bing এবং Bard চ্যাটবটগুলির ভিত্তি হিসাবে কাজ করেছে। যাইহোক, হিন্টন শীঘ্রই তার নিজের সৃষ্টির বিপদ বুঝতে পেরেছিলেন এবং উদীয়মান প্রযুক্তির বিপদ সম্পর্কে বিশ্বকে সতর্ক করার জন্য গুগলে তার চাকরি ছেড়ে দেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের তুলনায় এআই বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। হিন্টন এআই খাতে একজন গডফাদার হিসেবে পরিচিত। এক যুগের বেশি সময় থাকার পর সম্প্রতি অ্যালফাবেট ত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তার বক্তব্য, সাবেক কর্মক্ষেত্রের কোনো ক্ষতি না করে তিনি এআই প্রযুক্তির ক্ষতিকর বিষয় নিয়ে কথা বলতেই অব্যাহতি নিয়েছেন।
এআইয়ের বিকাশে হিন্টনের সমসাময়িক কাজকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। ১৯৮৬ সালে তিনি সেমিনাল পেপার ‘লার্নিং রিপ্রেজেন্টেশনস বাই ব্যাক-প্রপোগেটিং এররস’-এর সহলেখক হিসেবে কাজ করেছেন। এআই প্রযুক্তির অধীনে নিউরাল নেটওয়ার্কের উন্নয়নে এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। ২০১৮ সালে গবেষণায় সফলতা অর্জনের কারণে জিওফ্রে হিন্টনকে টুরিং পুরস্কার দেয়া হয়।
বর্তমানে যেসব প্রযুক্তি নেতা জনসমক্ষে এআইয়ের মাধ্যমে হুমকি তৈরির কথা বলছেন তাদের মধ্যে অন্যতম জিওফ্রে হিন্টন। নেতাদের উদ্বেগ এআই যদি মানুষের থেকে বেশি বুদ্ধিমত্তা অর্জন করে তাহলে সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে। হিন্টন বলেন, ‘আমি জলবায়ু পরিবর্তনকে অবমূল্যায়ন করছি না। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ভাবার দরকার নেই এমন কিছুই বলতে চাই না। এটা অনেক বড় সমস্যা। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়টি আরো গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত।’
তিনি আরো বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কি সেটি সহজেই বলে দেয়া যাচ্ছে। যেমন জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ, কার্বন নিঃসরণ কমানো। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা গেলে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ সম্ভব। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য করণীয় নির্ধারণ সহজ নয়।’
প্রযুক্তিগত অস্ত্রের দৌড়ে প্রথমেই আঘাত হানে ওপেনএআই। গত নভেম্বরে এআই-নির্ভর চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি প্রকাশ্যে আনার পরই এটি সবার আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয়। এরপর দুই মাসে ১০ কোটি ব্যবহারকারী নিয়ে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া অ্যাপের খেতাব অর্জন করে। এপ্রিলে ওপেনএআইয়ের জিপিটি ৪-এর তুলনায় আরো শক্তিশালী প্রযুক্তির উন্নয়ন ছয় মাস বন্ধ রাখার পক্ষে স্বাক্ষর করেন টুইটারের সিইও মাস্ক। এছাড়া স্ট্যাবিলিটি এআইয়ের সিইও ইমাদ মোস্তাক, অ্যালফাবেটের মালিকানাধীন ডিপমাইন্ডের গবেষকসহ এআইয়ের উন্নয়নে অন্যতম ইওশুয়া বেঙ্গিও ও স্টুয়ার্ট রুসেল এতে স্বাক্ষর করেন।
হিন্টন স্বাক্ষরিত বিষয়ের সঙ্গে একমত পোষণ করে জানান, এআই হয়তো ভবিষ্যতে মানবজাতির জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তবে তিনি এর গবেষণা বন্ধের পক্ষে নন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে আইনপ্রণেতাদের একটি কমিটি মাস্কের চিঠির উত্তর দিয়েছে। তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনের সঙ্গে প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে একটি বৈশ্বিক সম্মেলন করার আহ্বান জানান। গত সপ্তাহে কমিটি জেনারেটিভ এআইয়ের জন্য একসেট প্রস্তাব তৈরি করেছে। যার মাধ্যমে ওপেনএআইয়ের মতো কোম্পানিগুলোকে মডেল প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত কোনো কপিরাইট উপাদান প্রকাশ করতে বাধ্য করবে।
এসডব্লিউএসএস/১২২৫
আপনার মতামত জানানঃ