ক্যামব্রিয়ান এক্সপ্লোশন পৃথিবীতে প্রাণের ইতিহাসে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। প্রায় ৫৫ কোটি ৪১ লাখ বছর আগে, ক্যামব্রিয়ান যুগে পৃথিবীর জীবজগতে বেশ বড়সড় একটা পরিবর্তন দেখা গিয়েছিল।
আধুনিক প্রাণীরা যেসব পর্বের অন্তর্গত, সেসব পর্বের সূচনা হয়েছিল এই সময়টায়। এর আগের যেসব প্রাণী ছিল পৃথিবীতে, সেগুলোর বেশির ভাগই ছিল আণুবীক্ষণিক, এককোষী এবং অপেক্ষাকৃত সরল। ক্যামব্রিয়ান বিস্ফোরণের প্রায় আড়াই কোটি বছরের এই সময়টায় হুট করে একের পর এক বহুকোষী প্রাণীর দেখা মিলতে শুরু করে।
পৃথিবীর জীবজগতের বিবর্তনের ইতিহাসে সে জন্য ক্যামব্রিয়ান বিস্ফোরণকে খুবই অনন্য একটা ঘটনা হিসেবে মনে করা হয়। বলে রাখা ভালো, এখানে বিস্ফোরণ শব্দটা আসলে কোনো গ্রহাণু বা উল্কাপিণ্ড পৃথিবীতে এসে পড়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, সে জন্য আসেনি, এসেছে প্রাণিজগতের আকারের এই উল্লম্ফন থেকে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে সায়েন্স ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র পুরো প্রাণিজগতের ইতিহাসকেই ওলটপালট করে দিয়েছিল।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী ইলয়া বভরভস্কি, জোচেন ব্রকস ও তাঁদের দলের চালানো এক গবেষণা থেকে দেখা গেল, এই ক্যামব্রিয়ান বিস্ফোরণেরও আগে, প্রায় ৫৫ কোটি ৫৮ লাখ বছর আগে ইডিয়াক্যারান যুগেই জটিল গঠনের প্রাণীদের অস্তিত্ব ছিল।
ইডিয়াক্যারান যুগে যেসব ম্যাক্রোফসিল পাওয়া গিয়েছিল, নানা কারণেই সেগুলির সঠিক জাতিজনিত শ্রেণিবিন্যাস করা যাচ্ছিল না। বভরভস্কির গবেষণা থেকে দেখা গেল, পৃথিবীর প্রথম প্রাণীর উত্থান আসলে ক্যামব্রিয়ান যুগেরও বহু আগের এই ইডিয়াক্যারান যুগে।
ডিকিনসোনিয়া নামের এই প্রাণীদের কথা মানুষ প্রায় ৭৫ বছর ধরে জানে। এদের বেশির ভাগ ফসিলের সন্ধান পাওয়া গেছে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার ইডিয়াক্যারা পাহাড়শ্রেণিতে। এই পাহাড়শ্রেণির নাম থেকেই ইডিয়াক্যারান যুগের নামকরণ করা হয়েছে। ওই সময়টায় থাকা অনেক বহুকোষী জীবের ফসিলের সন্ধান এই জায়গায় পাওয়া গেছে।
এই পাওয়াটা আলোচ্য বিষয় নয়। আলোচ্য বিষয় এই বৈচিত্র্যতা। এরই ধারাবাহিকতায় জীবজগতে আরও এক উপপ্রজাতির সংযোজন। এতদিন অস্তিত্ব ছিল লোককথায়। এ বার মিলছে বৈজ্ঞানিক বৈধতা।
কয়েকশো বছর ধরে লোককথায় তাদের আনাগোনা ছিল। মানুষ জনের মুখে মুখে ফিরত নানা কাহিনী। কিন্তু সবকিছুকেই আজগুবি বলে উড়িয়ে দেওয়া হতো।
কিন্তু তথাকথিত সেই আজগুবি আখ্যানই এ বার বৈজ্ঞানিক বৈধতা পেতে চলেছে। জীবজগতে ‘ক্যাট-ফক্স’ নামের নয়া উপপ্রজাতির আগমন ঘটছে।
ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের অন্তর্গত কর্সিকা দ্বীপের লোককথায় ‘ক্যাট-ফক্স’-এর উল্লেখ পাওয়া যায়। সেখানকার রাখাল ছেলেদের মুখে মুখে ফিরত তার রূপ, আচরণের বর্ণনা।
ভেড়া এবং ছাগলের মাংস খেয়ে ‘ক্যাট-ফক্স’রা বেঁচে থাকত বলে শোন যায় কর্সিকার লোককথায়। ২০১৯ সালে এমন একটি হামলার ঘটনাও উঠে আসে সংবাদমাধ্যমে।
এত দিনে ‘ক্যাট-ফক্স’ বৈজ্ঞানিক বৈধতা পেতে চলেছে। ১৯২৯ সালে প্রথম বার ‘ক্যাট-ফক্স’-এর অস্তিত্ব সম্পর্কে নথিবদ্ধ উল্লেখ পাওয়া যায়। তার প্রায় ১০০ বছর পর, এ বার সেটিকে উপপ্রজাতি ঘোষণা করা হচ্ছে।
এই ‘ক্যাট-ফক্স’ হল আসলে কর্সিকার এক ধরনের বন্য় বিড়াল। তাদের গায়ের রং শেয়ালের মতো। পুরুষ্টু, লম্বা লেজও রয়েছে।
তবে নাম শুনে যা-ই মনে হোক না কেন, এরা মোটেই বিড়াল বা শেয়ালের শঙ্কর প্রজাতি নয়। বরং তাদেরকে বিড়াল বলারই পক্ষপাতী গবেষকরা। বনবিড়াল এবং গার্হস্থ্য বিড়ালের সারিতেই ‘ক্যাট-ফক্স’-কে রাখার পক্ষপাতী তাঁরা। তবে তাদের প্রজনন সংক্রান্ত বিষয়ে আরও গবেষণা চলছে।
‘ক্যাট-ফক্স’-কে সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতি বলে খবর ছড়ায়। কিন্তু তাতে সত্যতা ছিল না। কারণ মলিকিউলার ইকোলজি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়, কর্সিকার ‘ক্যাট-ফক্স’ আসলে একটি উপপ্রজাতি।
এই বিষয়ে দীর্ঘ দিন ধরে গবেষণা চালাচ্ছিল ফ্রান্সের জীববৈচিত্র্য বিভাগ। সম্প্রতি তার একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। তাতে ‘ক্যাট-ফক্স’-এর প্রজননের সঙ্গে সার্ডিনিয়ার বনবিড়ালের মিল রয়েছে বলে জানানো হয়।
তবে কর্সিকার ‘ক্যাট-ফক্স’-এর শরীরে ইউরোপীয় বিড়ালের তুলনায় কম ডোরাকাটা দাক রয়েছে। তাদের মধ্যে ঠিক কী কী পার্থক্য, তা-ও গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে। তবে কর্সিকার ‘ক্যাট-ফক্স’ নদীতে নেমে মাছও ধরতে পারে বলে জানা গিয়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১১১৫
আপনার মতামত জানানঃ