শুধু মহাকাশের অজানা রহস্যের অনুসন্ধানই নয়, বর্তমানে মহাকাশযাত্রার আরও একটি দিক ক্রমশ ফুটে উঠছে। আর কিছু নয়, এই বিষাক্ত পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোথাও যদি মানুষের বসতি গড়ে তোলা যায়!
আসলেই দ্রুত বদলে যাচ্ছে পৃথিবীর পরিবেশ, জলবায়ু। বাড়ছে কার্বন নির্গমনের হার। ইতিহাসের ষষ্ঠ গণ-অবলুপ্তির ঠিক দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছে পৃথিবী।
আর সেই জন্যই আরও তাগিদ বেড়েছে পৃথিবীর বাইরে অন্য কোনো গ্রহ কিংবা উপগ্রহ উপনিবেশ স্থাপনের। তার জন্য জোর কদমেই চলছে বৈজ্ঞানিক গবেষণা। কিন্তু মানুষ না হয় প্রযুক্তির ওপর ভর করেই বাস বাঁধল ভিনগ্রহে। কিন্তু অন্যান্য প্রাণীরা?
এবার তার জন্যই অভিনব উদ্যোগ নিলেন গবেষকরা। চাঁদের মাটিতে তৈরি করা হবে বিশেষ সংগ্রহশালা। তাতে সংরক্ষিত হবে মানুষসহ ৬৭ লক্ষ প্রজাতির শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু।
হ্যাঁ, এমনই এক স্পার্ম-ব্যাঙ্ক তৈরি করার প্রকল্প নিয়েছেন অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং গবেষকরা। সম্প্রতি এরোস্পেস সম্মেলনে ঘোষণা করা হয়েছে এই পরিকল্পনার কথা। প্রকল্পটির নামকরণ করা হয়েছে ‘আধুনিক বৈশ্বিক বিমা নীতি’।
মানব সভ্যতার ভবিষ্যৎ সংরক্ষণের জন্যই এই উদ্যোগ। কিন্তু হঠাৎ পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদই কেন? আর কীভাবেই বা জীবনের বীজ সংরক্ষিত হবে সেখানে?
চাঁদে কোনো বায়ুমণ্ডল নেই। নেই জল-ও। এক কথায় কোনো প্রাণীরই বেঁচে থাকা সম্ভব নয় সেখানে। আর ঠিক এই কারণের জন্যই বেছে নেওয়া হয়েছে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহকে। ঠিক বোধগম্য হল না নিশ্চয়ই বিষয়টি?
আসলে চাঁদে কোনো অণুজীবেরই অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। কাজেই সেখানে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না সংরক্ষিত ডিম্বাণু বা শুক্রাণুগুলি। পরে প্রয়োজন মতো তা ব্যবহার করা যাবে জীবন সৃষ্টিতে।
তবে প্রতিবন্ধকতা একেবারেই যে নেই, তা নয়। সূর্যের তেজস্ক্রিয় রশ্মির কারণে নষ্ট হয়ে যেতে পারে সেগুলি। আর সেজন্যই চাঁদের একটি ক্র্যাটারকে স্পার্ম-ব্যাঙ্ক হিসাবে বেছে নিয়েছেন মূল গবেষক জেকান থাঙ্গা।
যা ভূপৃষ্ঠ থেকে অন্ততপক্ষে ৮০-১০০ মিটার গভীরে। ফলে সূর্যের আলো কোনোভাবেই সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না। পাশাপাশি দ্রুত বদলাবে না তাপমাত্রাও।
প্রসঙ্গত, পৃথিবীর মতো বায়ুমণ্ডল নেই চাঁদের। আর সেই কারণেই সৃষ্টির আদিকাল থেকে বিভিন্ন উল্কা এবং ধূমকেতুর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়ে চলেছে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহের। তৈরি হয়েছে অসংখ্য ক্র্যাটার বা গর্ত। সাধারণ মানুষের কাছে যা চাঁদের ‘কলঙ্ক’ নামেই পরিচিত।
এই ক্র্যাটারের মধ্যেই বীজ ভল্ট স্থাপন করে শুক্রাণুর সংরক্ষণ করা হবে বলেই জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। শুধু শুক্রাণু কিংবা ডিম্বাণুই নয়, জীবনের একেবারের আদি ফর্ম ছত্রাক, শৈবাল ইত্যাদি প্রজাতিরও সংরক্ষণ হবে এই ভল্টে।
তবে পুরো প্রক্রিয়াটিই বেশ সময় এবং খরচ সাপেক্ষ। মাত্র ৫০টি প্রজাতির জন্যই খরচ হবে কয়েক মিলিয়ন ডলার। ফলত বলার অপেক্ষা থাকে না ৬৭ লক্ষ প্রজাতির সংরক্ষণে কতটা বিপুল আকার নেবে এই অঙ্ক।
এর আগে আর্কটিক অঞ্চলে ভালবার্ড সি-ভল্টে হয়েছে এই ধরণের সংরক্ষণের প্রকল্প। তবে পৃথিবীর বাইরে এমন ঘটনা এই প্রথম। এই প্রকল্প সুচারুভাবে সম্পন্ন করতেই বর্তমানে মুখিয়ে রয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
এসডব্লিউ এসএস /১৯২৫
আপনার মতামত জানানঃ