করোনার নতুন ধরন (স্ট্রেইন) শনাক্ত হওয়ার পর যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এখনো আরোপ করা হয়নি। ফলে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে নিয়মিতই যাত্রী আসছে। গতকাল বৃহস্পতিবারও(৩১ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্য থেকে একটি ফ্লাইটে ২৩৭ যাত্রী নিয়ে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময় ফ্লাইটে থাকা ২০৫ জন যাত্রী সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। পরে বিমান বাকি ৩২ যাত্রী নিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিলেট থেকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়।
ওসমানী বিমানবন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৩১ মিনিটে বিজি-২০২ ফ্লাইটে ২০৫ জন লন্ডন প্রবাসী সিলেটে আসেন। যাত্রীরা সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। ওই বিমানে আসা অপর ৩২ যাত্রী নিয়ে আধঘন্টা পর বিমানটি ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়।
এর আগেও বিভিন্ন দফায় যুক্তরাজ্য থেকে যাত্রীরা সিলেট আসে। গত ২৮ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে ১৬৭ যাত্রী নিয়ে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজ। যাদের ১৪৪ জনই সিলেটের। তারও আগে ২৪ ডিসেম্বর লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে একটি ফ্লাইটে ২০২ জন যাত্রী নিয়ে একটি বিমান সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। জানা যায়, সিলেট থেকে প্রতি সপ্তাহে বাংলাদেশ বিমানের দুটি ফ্লাইট যুক্তরাজ্য থেকে সিলেট অবতরণ করে। এ ছাড়া প্রতি বুধবার একটি ফ্লাইট সিলেট থেকে যুক্তরাজ্যে যায়। ডিসেম্বর মাসেই (বৃহস্পতিবার পর্যন্ত) যুক্তরাজ্য থেকে সিলেটে এসেছেন ১ হাজার ৩৬৯ জন।
বিমানবন্দরে আগত যাত্রীদের করোনা টেস্টের নির্দেশ থাকলেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। করোনা পজিটিভ সনদদারি যাত্রীর হাতেও ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে নেগেটিভের সনদ। বিমান বন্দরের অব্যবস্থাপনার কারণে যুক্তরাজ্য থেকে করোনার নতুন স্ট্রেইন ব্যাপক হারে আমদানি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
গত বুধবার যুক্তরাজ্যের সাথে বিমানের ফ্লাইট বন্ধের সুপারিশ করেছিলো সংসদীয় কমিটি। আর যুক্তরাজ্য থেকে আসা সব যাত্রীদের নিজ খরচে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। তবে এই নির্দেশনা ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। ফলে বৃহস্পতিবার সিলেটে আসা সব যাত্রীই নিজেদের বাড়ি চলে গেছেন। তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে নতুন ধরনের এবং অধিক সংক্রামক করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) লন্ডন থেকে আসা সব ফ্লাইট বন্ধের সুপারিশ করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। এছাড়া ফ্লাইট বন্ধ না করা পর্যন্ত লন্ডন থেকে দেশে ফেরা যাত্রীদের ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন পালনেরও সুপারিশ করা হয়।
অন্যদিকে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ শুক্রবার(০১ জানুয়ারি) থেকে যুক্তরাজ্যফেরত সব যাত্রীকে বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের সব খরচ যুক্তরাজ্যফেরত যাত্রীদের নিজ দায়িত্বে বহন করার কথাও বলা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যে এখন অধিক সংক্রামক আরও নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় এরই মধ্যে দেশটিতে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এদিকে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের মধ্যেও অধিকাংশই সিলেটের বাসিন্দা। এ কারণে বর্তমানে সিলেট অঞ্চলে করোনার নতুন স্ট্রেইনের সংক্রমণ ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কোভিড ভাইরাসের নতুন রুপটির আমদানি রোধ করতে হলে অতিসত্বর যুক্তরাজ্যের সাথে বিমান চলাচলে স্থগিত ঘোষণা করতে হবে। সরকার যদি যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধে কোনো সমস্যা মনে করে তবে যুক্তরাজ্য থেকে আগত যাত্রীদের সরকারি ব্যবস্থাপনায় বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখা উচিত বলে মনে করেন তারা। এমনকি যাদের নেগেটিভ সনদ থাকবে তাদেরও কোয়ারেন্টাইনে পাঠাতে হবে। কারণ সফরের সময় তারা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হতে পারেন বলে জানান।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৩৭
আপনার মতামত জানানঃ