২০২১ সালের ১০ই ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দফতরের ফরেন অ্যাসেটস কনট্রোল অফিস বিভিন্ন দেশের মোট ১০টি প্রতিষ্ঠান ও ১৫ জন ব্যক্তি যারা, তাদের ভাষায়, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়নের সাথে সংশ্লিষ্ট, তাদের উপর এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। এই নিষেধাজ্ঞারই অন্তর্ভুক্ত ছিল র্যাব ও এর ছয় জন কর্মকর্তা।
এছাড়া আলাদা আরেক বিজ্ঞপ্তিতে, বেনজির আহমেদ এবং র্যাব-৭ এর সাবেক কমান্ডার মিফতাহ উদ্দিন আহমেদের উপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল।
তবে রোববার ‘জঙ্গিবাদ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী র্যাবের প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশে পুলিশের বিশেষ বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন র্যাব এবং এর কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ‘ঘাবড়ানোর কিছু নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার ঢাকার কুর্মিটোলায় র্যাবের সদর দপ্তরে বাহিনীটির ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
র্যাব সদস্যদের ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, রমজান এলে আরেকটি কাজ হয়, সেটি হলো খাদ্যে ভেজাল দেয়া; এছাড়া নকল প্রসাধনী এবং জাল মুদ্রা তৈরির চক্র সক্রিয় হয়। এসবের বিরুদ্ধে র্যাব প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, র্যাবকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে র্যাব সদস্যরা আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। জঙ্গি দমনে র্যাব বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বের অনেক দেশই হিমশিম খাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখনো সে পর্যায়ে যায়নি, যাবেও না।
তিনি আরও বলেন, শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে হবে। অগ্নিসন্ত্রাস মোকাবিলা করে স্থিতিশীলতা ধরে রাখার কারণেই আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।
নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী
রোববার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, জঙ্গিবাদ ও দক্ষিণাঞ্চলে জলদস্যু দমন, মাদক এবং ভেজালবিরোধী অভিযানসহ বিভিন্ন ইস্যুতে র্যাবের ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
যুক্তরাষ্ট্রের নাম সরাসরি উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা জানি কিছুদিন আগে একটি দেশ র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল বলে অনেকেই প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। আমি বলেছিলাম এখানে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। কারণ এটা আমাদের দেশ।”
তিনি বলেন, আমাদের দেশে যারা কাজ করে তারা কী করে, না করে সেটা আমরা জানি। সেটার বিচার আমরা করবো।
পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ (সেটা) করে না। কিন্তু বাংলাদেশে যেকোনো অপরাধের বিচার হয়। কেউ কোন অপরাধ করলে আমরা নিজেরাই তা বলবো।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, ‘দেশ বিরোধী কিছু শক্তি’ বিদেশে বাংলাদেশের বদনাম করে বেড়াচ্ছে।
“দেশ বিরোধী কিছু শক্তি আছে, যারা বাংলাদেশ যতই ভালো কাজ করুক না কেন, কোন উন্নতি তাদের চোখে পড়ে না। আরেকটি শ্রেণী আছে তাদের কাজ হল বিদেশের কাছে বাংলাদেশের নামে বদনাম করা।”
এজন্য তারা আর্থিক বা অন্যান্য সুবিধা পায় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “যারা এ ধরণে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে, বাংলাদেশের বদনাম করে, বাংলাদেশের একেকটি প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে তাদেরকে আমাদের চিহ্নিত করতে হবে, যে তারা কেন, কোন উদ্দেশ্যে এমন করছে।”
একই সাথে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ‘কারো মনোকষ্টে থাকা উচিত না’ বলে আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “পরের কথা শুনে কেউ মন খারাপ করবেন না। নিজের আত্মমর্যাদা বোধ, আত্মবিশ্বাস নিয়ে সব সময় চলতে হবে। প্রথমে সবার মন একটু খারাপ থাকলেও এখন চিন্তা নাই।”
নিষেধাজ্ঞায় যা উল্লেখ ছিল
দুই হাজার একুশ সালে মার্কিন অর্থ দফতর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিল, ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার’ কারণে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
এর আওতায় নিষেধাজ্ঞাভুক্ত ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পান না এবং একই সাথে তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলেও বিবেচিত হন।
আর র্যাবও প্রতিষ্ঠান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের কাছ থেকে যেসব সহযোগিতা পেয়ে থাকেন সেগুলোও বাতিল হয়ে যায়। একই সাথে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তিদের বিদেশে সম্পদ থাকলে সেগুলো বাজেয়াপ্ত হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল যে, বাংলাদেশের বেসরকারি সংগঠনগুলো অভিযোগ করেছে যে র্যাব এবং অন্যান্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ২০০৯ সালে থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬০০টির মতো বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ৬০০র বেশি মানুষের অদৃশ্য হয়ে যাওয়া এবং নির্যাতনের জন্য দায়ী।
নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর থেকেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে নানা চেষ্টা, সংষ্কার এবং আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বিভিন্ন সময় জানিয়েছে বাংলাদেশের সরকার।
যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল তার আওতায় র্যাবের যে কর্মকর্তারা ছিলেন, তাদের কেউই এখন আর এ বাহিনীতে কর্মরত নেই।
বরং তাদের অনেকেই বিভিন্ন সামরিক বাহিনীতে উচ্চ পদে রয়েছেন কিংবা অবসরে গিয়েছেন।
তবে এ বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র জানায় যে, “বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ড’ বন্ধে র্যাবের কর্মকাণ্ডে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) খুশী।”
জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশে সফরে আসেন।
সেসময় তিনি বলেন, বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে র্যাবে বিশাল অগ্রগতি হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
এসডব্লিউএসএস/২১২৫
আপনার মতামত জানানঃ