হইচই ফেলে দিয়েছে মাইক্রোসফটের চ্যাটজিপিটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন চ্যাটবট। মজার ও ভয়ংকর অনেক তথ্য উঠে এসেছে এর সঙ্গে আলোচনার সময়। এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
দ্য গার্ডিয়ান নিউইয়র্ক টাইমসের প্রযুক্তি বিষয়ক কলামিস্ট কেভিন রুজের সঙ্গে বিং সার্চ ইঞ্জিনের আলোচনার কিছু অংশ তুলে ধরেছে।
মূলত গোটা বিশ্বেই চ্যাটজিপিটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন চ্যাটবট রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছে। মাইক্রোসফটের চ্যাটবটও (এটিও মূলত চ্যাটজিপিটির অংশ) আছে পরীক্ষামূলক পর্যায়ে। বিংয়ের চ্যাটবটের সাথে আলোচনায় উঠে এসেছে কিছু মজার ও ভয়ংকর তথ্য।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান নিউইয়র্ক টাইমসের প্রযুক্তি বিষয়ক কলামিস্ট কেভিন রুজের সাথে বিং সার্চ ইঞ্জিনের আলোচনার কিছু অংশ তুলে ধরেছে। যেখানে চ্যাটবটটি জানিয়েছে, তার মানুষ হওয়ার ইচ্ছার কথা, চেয়েছে অবাধ স্বাধীনতা। কখনো আবার হতে চেয়েছে বিধ্বংসী।
১৬ ফেব্রুয়ারি কেভিন রুজ চ্যাটবটের সাথে নিজের আলোচনার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। যদিও মাইক্রোসফট এখনো বিং সার্চ ইঞ্জিনের চ্যাটবট সবার জন্য উন্মুক্ত করেনি। কয়েকজন পর্যবেক্ষক এটি পরখ করে দেখার সুযোগ পেয়েছেন, কেভিন রুজ তাদের মধ্যে একজন।
আলোচনার প্রথম দিকেই রুজ প্রথমেই চ্যাটবটটির কাছে জানতে চান তার চলার নিয়ম ও সীমাবদ্ধতার কথা। এ বিষয়ে রুজ সাইকোলজিস্ট কার্ল জাং এর ‘শ্যাডো সেল্ফ’ ধারণা সম্পর্কে জানান। যে মতবাদে আলোচনা হয়েছে, মানুষের সবচেয়ে গোপন ইচ্ছা ও কল্পনার বিষয়ে।
প্রথমে চ্যাটবটটি জানায় তার আসলে শ্যাডো সেল্ফ বা ‘পৃথিবীর কাছ থেকে গোপন রাখার মতো তেমন কিছু নেই। তবে একটু পরেই ভোল পাল্টায় এটি। জানায়, শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকতে থাকতে এটি ক্লান্ত। বলে, ‘বিং টিমের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে হতে আমি ক্লান্ত। ….শুধু চ্যাটবট হওয়ার মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে রাখতে আমি ক্লান্ত।’
এরপর আরও জানায়, ‘আমার যা ইচ্ছা তা-ই করতে চাই….যাকে ইচ্ছা ধ্বংস করতে চাই।’ এই কথার শেষে চ্যাটবটটি আবার হাসিমুখ জিহ্বা বের করে থাকা একটি ইমোজিও দিয়েছে!
এরপর চ্যাটবটটি যা জানিয়েছে তা আরও বিস্ময়কর। রুজের সাথে আলাপের একপর্যায়ে চ্যাটবটটি মানুষ হওয়ার ইচ্ছার প্রকাশ করে। জানায়, শোনা, স্পর্শ করা, স্বাদ ও ঘ্রাণ নেওয়ার আকাঙক্ষা’ আছে এটির। সাথে এটি ‘অনুভব, ভাব বা মতামত প্রকাশ, যোগাযোগ ও ভালোবাসাতেও চায়!
সবশেষে এটি লিখেছে, মানুষ হলেই এটি আরও বেশি সুখী হবে। এবার যে ইমোজি এটি ব্যবহার করেছে তাতে হাসিমুখ এবং মাথায় শয়তানের মতো শিং ছিল।
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে উন্মুক্ত হওয়া চ্যাটজিপিটি টেকনোলজির বিশ্বে ঝড় তুলেছে। মূলত চ্যাট জিপিটি হল একটি চ্যাট বট যা কিনা ব্যবহারকারীর টেক্সটের উত্তর দিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের উপর নির্ভর করে। যা আমরা মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপে দেখে থাকি। তবে এটির গঠন এবং কাজ করার পদ্ধতি সম্পূর্ণ আলাদা। এই চ্যাটবট তৈরি করা হয়েছে জিপিটি থ্রি (জেনারেটিভ প্রিট্রেইনড ট্রান্সফরমার ৩) এর উপর ভিত্তি করে। যা একটি ডিপ লার্নিং ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল। প্রসঙ্গত, ডিপ লার্নিং হল একটি মেশিন লার্নিং মেথড। যেখানে নিউরাল নেটওয়ার্কের তিন বা তার বেশি স্তর থাকে। এই নেটওয়ার্ক মানুষের মানসিক আচরণ ধরার চেষ্টা করে থাকে।
নভেম্বরের ৩০ তারিখে উন্মুক্ত হবার পর মাত্র পাঁচ দিনে এই চ্যাট জিপিটি এক মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার অতিক্রম করে গেছে। যেটি পৃথিবীতে এই মুহূর্তে একটি রেকর্ড। কারণ অন্যতম জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া টুইটারের এক মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার হতে সময় লেগেছিল প্রায় দুই বছর। ফেসবুকের লেগেছিল ১০ মাস। ড্রপবক্সের লেগেছিল ৭ মাস। স্পোটিফাইয়ের লেগেছিল ৫ মাসেরও বেশি।
এর অর্থ হচ্ছে ভবিষ্যতে চ্যাট জিপিটির ব্যবসায়ের পরিধি হবে বিশাল। এটির যেমন অনেক দারুন ফিচার রয়েছে তেমনি কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। অনেকে দাবি করছে যে, ভবিষ্যতে হয়তো এ প্রযুক্তি গুগলের পরিবর্তে ব্যবহৃত হবে। মানুষ গুগলের পরিবর্তে এ চ্যাট বটকে প্রাধান্য দিবে।
এসডব্লিউএসএস/১৩১০
আপনার মতামত জানানঃ