ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন শাসকদের রাজ্য শাসনের গল্প আমরা সবাই কমবেশি জানি। বর্তমানে প্রাচীন শাসকদের প্রতিকৃতি হয়তো বইয়ের পাতায় পেইন্টিং আকারে কিংবা ঐতিহাসিক স্থানে তৈরিকৃত ভাস্কর্যের মাধ্যমে দেখা যায়।
তবে সম্প্রতি একজন শিল্পী প্রাচীন এ শাসকদের প্রতিকৃতি নিয়ে ভিন্নভাবে চিন্তা করেছেন। তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে প্রাচীন বেশ কয়েকজন শাসকের প্রতিকৃতি পুনরায় ছবির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন।
আর টুইটারে পোস্টকৃত ভিন্নধর্মী এ প্রতিকৃতি নিয়ে নেটিজেনদের মাঝে চলছে চরম বিতর্ক।
আলোচিত এ শিল্পী মোট ২১ জন শাসকের প্রতিকৃতি তৈরি করেছেন। এদের মধ্যে বিন্দুসারা, পৃথ্বীরাজ চৌহান, আশোকা, শিবাজি, রঞ্জিত সিং, শাহজাহান ও সিকান্দার লোদি অন্যতম।
প্রাচীন শাসকদের নিয়ে আঁকা নতুন এ প্রতিকৃতিগুলো একদিকে কিছু নেটিজেনের ভাষ্য অনুযায়ী, ইতিহাসের প্রাণ ফিরিয়ে এনেছে। অন্যদিকে অন্য নেটিজেনরা প্রতিকৃতিগুলো বিশ্লেষণ করে একের পর এক ভুল বের করছেন।
সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হচ্ছে মুঘল শাসকদের ঘিরে। যদিও বহু মুঘল শাসক বংশসূত্রে মিশ্র, তবুও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরিকৃত প্রতিকৃতিতে একতরফাভাবে শুধু মঙ্গোলীয় ছাপ প্রকাশ পেয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য মূলত মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরিকৃত নতুন প্রতিকৃতিতে চন্দ্রগুপ্তের গায়ের রঙ ধূসর দেখানো হয়েছে। একইসাথে তাকে বড় কালো চুল ও গহনা পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়।
অন্যদিকে মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছত্রপতী শিবাজি মহারাজের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় আঁকা প্রতিকৃতিতে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। ইন্টারনেটে থাকা নানা পেইন্টিং এর মত করেই এ শাসককে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
অন্যদিকে মুঘল শাসকদের মধ্যে বাবর, হুমায়ূন ও আকবরের প্রতিকৃতিতে অনেকটা মঙ্গোলিয়ান বংশোদ্ভূত বলে মনে হয়। এ তিনজন শাসকের প্রতিকৃতিতেই তির্যক চোখ ও দাড়ি রয়েছে। ‘ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী শাসকেরা’ এই ক্যাপশনে ছবিগুলো টুইটারে শেয়ারের পর এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৭ হাজার ভিউ ও ৮০০ লাইক এসেছে।
সাধারণভাবে বহু নেটিজেন এমন মন্তব্য করেছেন যে, “বংশগত ও ভৌগলিকভাবে মুঘল শাসকদের মধ্যে ভিন্নতা ছিল। কিন্তু এআই ব্যবহার করে আঁকা প্রতিকৃতিতে সকল মুঘল শাসকদের তীক্ষ্ণ নাক ও চেহারার মধ্যে একই ধাঁচ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
ছবিগুলো দেখে এক নেটিজেন লিখেছেন, “একদিকে বিন্দুশালা, আশোকা ও রাজা রাজা ছোলা এবং অন্যদিকে ফিরোজ শাহ ও সিকান্দার লোদির গোঁফে সামান্য পরিবর্তন ছাড়া সবার চেহারা প্রায় একইরকমভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।”
অন্য আরেক নেটিজেন বলেন, “বাবর, হুমায়ুন ও আকবরকে দেখে মনে হচ্ছে তারা সবাই চীন থেকে এসেছেন!”
অন্যদিকে প্রতিকৃতিগুলো মোটামুটি যথাযথ আছে বলে মন্তব্য করেছেন আরেকদল নেটিজেন। এক ব্যক্তি বলেন, “আমি মনে করি, মোঘলদের প্রতিকৃতিগুলো ঠিকই আছে। কেননা তাদের চেহারায় কখনো ভারতীয় ছাপ ছিল না। তারা প্রকৃতপক্ষে মঙ্গলই!”
সম্প্রতি ওপেন এআই প্ল্যাটফর্ম চ্যাটজিপিটি হুট করেই ব্যাপক আলোচনায় আসে। চ্যাটবটটি একদিকে অজস্র তথ্যকে গুছিয়ে একসাথে সাজিয়ে দিতে পারার ক্ষমতার জন্য এবং অন্যদিকে নানা জটিল বিষয়ের যৌক্তিক ও বিন্যাস্ত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের জন্য বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
চ্যাটজিপিটির আলোড়নের পর এবার নতুন করে হৈচৈ সৃষ্টি করলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি শাসকদের এ প্রতিকৃতি!
এসডব্লিউএসএস/০৭২৫
আপনার মতামত জানানঃ