অস্ট্রেলিয়ায় তেজস্ক্রিয়তা ধারণকারী ছোট একটি ক্যাপসুল হারিয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের এ ঘটনায় সবাইকে ওই ক্যাপসুল দেখলে তা স্পর্শ না করার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ক্যাপসুলটির খোঁজ চলছে।
হারিয়ে যাওয়া ক্যাপসুলটি বেশ ছোট। ক্ষুদ্র এই ক্যাপসুলের প্রস্থ ৬ মিলিমিটার ও উচ্চতা ৮ মিলিমিটার। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১০-১৬ জানুয়ারি সময়ে ট্রাকে পরিবহনের সময় নিউম্যান শহরের উত্তরে পিলবারার খনি অঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় পার্থের মধ্যবর্তী স্থানে ক্যাপস্যুলটি হারিয়ে যায়।
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১২ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের নিউম্যান শহরের একটি খনি থেকে তেজস্ক্রিয় ওই ক্যাপসুল সড়কপথে পরিবহন করা হচ্ছিল। এ সময় সেটি হারিয়ে যায়।
গতকাল শনিবার অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের ডিপার্টমেন্ট অব ফায়ার অ্যান্ড ইমারজেন্সি সার্ভিসেস (ডিএফইএস) এ–সংক্রান্ত একটি বিবৃতিও দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুপালি রঙের ক্যাপসুলটি গোলাকার। এর ব্যাস প্রায় এক ইঞ্চির এক-চতুর্থাংশ এবং লম্বায় এক ইঞ্চির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এতে খুব অল্প পরিমাণে সিজিয়াম-১৩৭ তেজস্ক্রিয়তা আছে। এটি খনির কাজে ব্যবহার করা হয়।
অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্য বিভাগ তেজস্ক্রিয় ওই ক্যাপসুলের কারণে ভয়ংকর স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা উল্লেখ করে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছে।
ডিএফইএস বিবৃতিতে বলেছে, ক্যাপসুলটি মেরামত করার জন্য নিউম্যান শহর থেকে পার্থের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় উপশহরে পাঠানো হয়েছিল। ১৬ জানুয়ারি সেটি পার্থে পৌঁছায়। সেখানে একটি সুরক্ষিত রেডিয়েশন স্টোরে রাখা হয়েছিল। ২৫ জানুয়ারি তা পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখা যায়, গেজটি ভাঙা এবং কিছু স্ক্রু নেই। আর সেখানে ওই ক্যাপসুলও নেই।
ডিএফইএস কাউন্ট্রি নর্থের চিফ সুপারিনটেনডেন্ট ডেভিড জিল বলেন, অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের পুলিশ ওই সন্ধ্যাতেই ডিএফইএস ও হ্যাজার্ড ম্যানেজমেন্ট এজেন্সিকে বিষয়টি জানিয়েছে। ক্যাপসুলটির খোঁজ চলছে।
গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে ডেভিড জিল বলেন, ডিএফইএস, স্বাস্থ্য বিভাগ, ডব্লিউএ পুলিশসহ মাল্টি-এজেন্সি ইনসিডেন্ট ম্যানেজমেন্ট টিম বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। তারা নিউম্যান থেকে ক্যাপসুলটি যাত্রার সঠিক রুট ও থামার জায়গাগুলো নিশ্চিত করছে।
জরুরি পরিষেবা বিভাগ দেশটির পিলবারা, মিডওয়েস্ট গ্যাসকোইন, গোল্ডফিল্ডস-মিডল্যান্ডস ও পার্থ মেট্রোপলিটন অঞ্চলের কিছু অংশে তেজস্ক্রিয় ক্যাপসুলটির ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, সিজিয়াম-১৩৭–এর তেজস্ক্রিয়তার কারণে পুড়ে যেতে পারে বা গুরুতর অসুস্থ হতে পারে। তবে এতে সাধারণ মানুষের ঝুঁকি কম।
দেশটির প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ও রেডিওলজিক্যাল কাউন্সিলের চেয়ার অ্যান্ড্রিউ রবার্টসন শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, কেউ যদি ক্যাপসুলটি বা ক্যাপসুলসদৃশ কিছু দেখতে পান, তাহলে এর কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে এবং অন্যদেরও দূরে রাখতে হবে। ক্যাপসুলটি স্পর্শ করা বা কুড়ানো যাবে না।
কেউ এটি দেখতে পেলে দ্রুত ডিএফইএসকে ফোনে জানাতে বলা হয়েছে। কেউ যদি একটু বেশি সময় ধরে ক্যাপসুলটি স্পর্শ করেন বা তার খুব কাছাকাছি যান, তাহলে তাঁকে চিকিৎসাসেবা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
ক্যাসিয়াম-১৩৭ তেজস্ক্রিয় পদার্থটি সাধারণত খনিতে ব্যবহৃত হয়। অগ্নি ও জরুরি সেবা বিভাগ (ডিএফইএস) বলেছে, এটি কোনো রাসায়নিক অস্ত্র নয়। তবে এটি তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ঘটাতে পারে। এতে ক্যান্সারের মতো দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি রয়েছে।
অ্যান্ড্রিউ রবার্টসন আরও বলেন, ‘আপনি যদি ক্যাপসুলটির খুব কাছাকাছি থাকেন বা এটি স্পর্শ করেন, তবে বিকিরণের ঝুঁকি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। এতে ত্বক পুড়ে যাওয়াসহ স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।’
এসডব্লিউএসএস/২১০৫
আপনার মতামত জানানঃ