রোবট দিনদিন অনেকটাই জায়গা কেড়ে নিচ্ছে মানুষের। কর্মসংস্থান হারাচ্ছে মানুষ। আকারে, বুদ্ধিতে, চিন্তায় অনেক আগে থেকেই মানুষের সমপর্যায়ে বা এগিয়ে ছিল রোবট। তবে এবার এসবের পাশাপাশি জৈবিক বিষয়েও এগোচ্ছে এই প্রযুক্তি। যা আদতে মানুষের জন্য কতটা সুখকর ভবিষ্যৎ নিয়ে আসবে সেটাই অনেক বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন।
প্রযুক্তির দিক থেকে বরাবরই বেশ এগিয়ে জাপানি বিজ্ঞানীরা। টোকিওর একদল গবেষক দাবি করেছেন, তারা এমন এক প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন, যার মাধ্যমে রোবটের শরীরে মানুষের শরীরের মতো ত্বক বা টিস্যু গজিয়ে উঠেছে। শুধু এখানেই শেষ নয়, এই টিস্যু ও তৎসংলগ্ন ত্বক নাকি নিজে থেকেই সারিয়ে ফেলতে পারে ক্ষত!
সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত একটি বিজ্ঞানবিষয়ক পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে টোকিয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল বিজ্ঞানীর এই সাম্প্রতিকতম গবেষণার কথা। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বায়ো-হাইব্রিড নামক একটি পদ্ধতিতে তাঁরা তৈরি করেছেন অবিকল মানুষের মতো টিস্যু ও ত্বক। এই টিস্যু তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে এক ধরনের হালকা কোলাজেন ম্যাট্রিক্স, নাম—হাইড্রোজেল। এই উপাদানটির ভিতর ফাইব্রোব্লাস্ট ও কেরাটিনোসাইট নামক কোষের বিস্তার ঘটানো হয়।
মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে গবেষকদের মন্তব্য উদ্ধৃত করে বলা হয়, সাধারণত রোবটে কৃত্রিম ত্বক বা চামড়া ব্যবহার করা হয়। তবে কোষ ব্যবহার করে নতুন যে ত্বক তৈরি করা সম্ভব হয়েছে, তা মানুষের ত্বকের মতোই জীবন্ত।
গবেষক দলের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়টির মেকানিক্যাল অ্যান্ড বায়োফাংশনাল সিস্টেম বিভাগের অধ্যাপক শোজি তাকুচির দাবি, অভাবনীয় এ আবিষ্কারের ফলে রোবটকে জীবন্ত প্রাণীর চেহারা ও স্পর্শের অনুভূতি দেওয়া সম্ভব হবে।
তার দাবি, যেহেতু এই ধরনের টিস্যু অবিকল মানুষের মতো, তাই চিকিৎসা শাস্ত্রে এই ধরনের রোবট যুগান্তকারী হয়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি, ভবিষ্যতে এই ধরনের টিস্যু ব্যবহার করে তাঁরা বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম অঙ্গ ও ত্বকও গড়ে তুলতে চান বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, জটিল এ পরীক্ষার জন্য তাকুচির দল একটি রোবোটিক আঙুল বেছে নেন। দীর্ঘ প্রচেষ্টার মাধ্যমে মানব ত্বকের গঠনশৈলী অনুসরণ করেই রোবটের জন্য ত্বক তৈরি করা হয়।
রোবোটিক ওই আঙুলটিকে কোলাজেন বা আঁশযুক্ত প্রোটিনের একটি দ্রবণে ডোবানো হয়। ওই দ্রবণ ও মানব ত্বকের ফাইব্রোব্লাস্ট সেল একত্রিত হয়ে মানবত্বক গঠন করে।
আঙুলে দ্রবণটি লাগানোর পর তাকুচি সৃষ্ট হওয়া ত্বকের বাইরের অংশে মানুষের এপিডার্মাল কেরাটিনোসাইট প্রয়োগ করেন। কেরাটিনোসাইট হল এক ধরনের কোষ, যা ত্বকের উপরিভাগের প্রথম স্তর গঠনের প্রধান নিয়ামক।
পরীক্ষা চলাকালে রোবটিক আঙুলটি মানুষের আঙুলের মতোই বিভিন্নভাবে ঘুরতে সমর্থ হয়। এমনকি বিজ্ঞানীরা জল প্রতিরোধী মানবসদৃশ ত্বক তৈরিতেও সাফল্যের মুখ দেখে।
হিউম্যানয়েড হলো সেসব রোবট, যেগুলো মানুষের পাশপাশি থেকে চিকিৎসা, নার্সিং কেয়ার এবং সেবা শিল্পে কাজ করে থাকে।
শোজি তাকুচির দাবি, যেহেতু এ ধরনের টিস্যু অবিকল মানবদেহের টিস্যুর মতো, তাই চিকিৎসাশাস্ত্রে এ ধরনের রোবট যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারে। ভবিষ্যতে এ ধরনের টিস্যু ব্যবহার করে কৃত্রিম অঙ্গ ও ত্বক গড়ে তোলাও সম্ভব হবে।
এসডব্লিউএসএস/১৯০০
আপনার মতামত জানানঃ