আদালতে নিজের মক্কেলের হয়ে এবার সওয়াল-জবাব করতে নামবে রোবট আইনজীবী। বিষয়টি আজগুবি মনে হলেও বিশ্বে এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এ দাবি করেছে ব্রিটেনের ‘নিউ সায়েন্টিস্ট’ পত্রিকা।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে রোবট আইনজীবীকে আইনি পরামর্শদাতার ভূমিকায় দেখা যেতে পারে। তবে আদালতে আইনজীবীর বেশে আসবে না কোনো রোবট। বরং আইনজীবীর কাজ চালাবে ‘ডুনটপে’ নামে একটি অ্যাপ। যা থাকবে মক্কেলের স্মার্টফোনে।
যুক্তরাষ্ট্রের কোন আদালতে কী ধরনের মামলা লড়বে ডুনটপে অ্যাপ, তা অবশ্য খোলসা করেনি সংস্থাটি। তবে আদালত কক্ষে মক্কেলের স্মার্টফোনের মাধ্যমে তাকে আইনি পরামর্শ বা সওয়াল-জবাবের কাজ চালানোয় সাহায্য করবে বলে জানিয়েছে তারা। মক্কেলকে আইনি পরামর্শ দিতে কাজে লাগানো হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই)-চালিত রোবটকে।
এক প্রতিবেদনে নিউ সায়েন্টিস্ট জানিয়েছে, এআই-চালিত ওই রোবট মামলার শুনানির সময় হাজির থাকবে তার মক্কেলের স্মার্টফোনে। ওই ফোনের মাধ্যমেই শুনানির সময়কার প্রশ্নোত্তর শুনে মক্কেলকে যথাযথ আইনি পরামর্শ দেবে রোবটটি।
২০১৫ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় এই অ্যাপ সংস্থাটি শুরু করেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানী জোশুয়া ব্রাউডার। এই মুহূর্তে ডুনটপের সিইও হিসেবে কাজ করছেন তিনি।
জোশুয়ার দাবি, মামলা-মোকদ্দমার খরচ বাঁচাতেই অ্যাপটি তৈরি করেছে ডুনটপে। সংস্থার বিজ্ঞাপনও বেশ চমকদার। সেখানে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রথম রোবট আইনজীবী হল ডুনটপে অ্যাপ। একটি বাটন চেপেই কর্পোরেশনের সঙ্গে লড়ুন, আমলাতন্ত্রকে হারান অথবা যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করুন।
এর আগে পোশাক শিল্পে রোবটিক্স প্রযুক্তি যোগ করার কাজে জোট বেঁধেছে জার্মানির প্রযুক্তি কোম্পানি সিমেন্স এজি এবং মার্কিন ডেনিম কোম্পানি লেভি স্ত্রস।
স্যান ফ্রান্সিসকোর সিমেন্স ল্যাবের প্রকল্প প্রধান ইউজেন সোলোজাওয়ে বলেন, “পোশাক হচ্ছে সেই লাখ কোটি ডলারের শিল্পখাত, যা এখনও অটোমেটেড হয়নি।”
রয়টার্স লিখেছে, পোশাক উৎপাদন প্রক্রিয়ার রোবট ব্যবহারের এই প্রযুক্তি নিয়ে ২০১৮ সাল থেকেই গবেষণা করছে সিমেন্সের ওই ল্যাবরেটরি। তবে বিদেশি শ্রমের ওপর নির্ভর না করে নিজেদের ভূখণ্ডে রোবট দিয়ে কাপড় সেলাই করার এ ধারণা পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর কাছে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে মহামারীর কারণে।
২০২০ সালে করোনাভাইরাস ঠেকাতে দেশে দেশে লকডাউনের বিধিনিষেধ শুরু হলে কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে ভোক্তা পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা। তখনই দূর দেশে উৎপাদন কারখানার ওপর নির্ভর করার ঝুঁকির বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে এসব কোম্পানির কাছে।
রয়টার্স লিখেছে, পশ্চিমা কোম্পানিগুলো উৎপাদন প্রক্রিয়া নিজেদের ভূখণ্ডে ফেরানোর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে মনোযোগী হলেও বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় প্রকাশ্যে এ নিয়ে খুব বেশি আলোচনা করছে না।
জিনস সেলাই কারখানার কিছু কাজে অটোমেশন ও রোবটিক্স প্রযুক্তি প্রয়োগের কৌশল তৈরি করে ইতোমধ্যে অনলাইনে সমালোচনার মুখে পড়েছেন মার্কিন উদ্ভাবক জনাথান জোর্নোউ; এমনকি মৃত্যু হুমকিও তিনি পেয়েছেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, রোবট ব্যবহারের পরীক্ষামূলক এক প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ে অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি লিভাইসের মুখপাত্র।
এদিকে, স্পাইডারম্যানের মতো দেয়াল বেয়ে উঠবে—এমন রোবট তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হাউসবট। রোবটটির নাম দেওয়া হয়েছে এইচবি১। বর্তমানে উঁচু ভবনের বিপজ্জনক কাজগুলো শ্রমিকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করেন। এই রোবটের মাধ্যমে সেই কাজগুলো করিয়ে নেওয়া যাবে।
প্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েবসাইট টেকইব্লগের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ছোট আকারের দালানের দেয়াল বেয়ে ওঠার সক্ষমতা থাকলেও ভবিষ্যতে এ রোবট সুউচ্চ দালানও বেয়ে উঠতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দেয়াল বেয়ে ওঠার জন্য রোবটটির শক্তিশালী বৈদ্যুতিক পাখাগুলো ৯২ পাউন্ড বল দিয়ে বাতাস শুষে নেয়। একই সময় রোবটের চারটি রাবারের চাকা কন্ট্রোল ইউনিটের সঙ্গে সংযুক্ত। কন্ট্রোল ইউনিটকে একটি ১১০ ভোল্টের টেথার দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। রোবটে থাকা ফ্যানগুলোর ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক কম্প্যাটিবিলিটি (ইএমসি) রোবটটিকে সুরক্ষিতভাবে পৃষ্ঠের সঙ্গে যুক্ত করে রাখে। যার ফলে রোবটটি কাজ করার সময় নিচে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
এসডব্লিউএসএস/১০৪৫
আপনার মতামত জানানঃ