নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলামের স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয়ের মানবাধিকার বিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হুমা খান ও মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টা জাহিদ হোসেন।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে এই দুই কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলামের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এর আগে গত ১৪ই ডিসেম্বর ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নিখোঁজ সাজেদুলের বাসায় যান। ওই দিন সাজেদুল ইসলামের শাহীনবাগের বাসা থেকে বের হওয়ার পর একদল লোক মার্কিন দূতের পথ আটকে তাকে স্মারকলিপি দেয়ার চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় মার্কিন দূতের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র।
সাজেদুল ইসলামের বোন সানজিদা ইসলাম জানিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাসায় আসার কারণে কী ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, কতটা চাপ এসেছে এবং কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন কি না এসব বিষয়ে খোঁজ নিয়েছে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল।
উল্লেখ্য, বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন ২০১৩ সালে নিখোঁজ হন। ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর বসুন্ধরার খালার বাসা থেকে র্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনকে। তিনি বিএনপির ঢাকা মহানগরের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির (বর্তমানে ঢাকা উত্তরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
এদিকে, বর্তমান দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিভীষিকাময় বলে জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। গত শনিবার রাজধানীর লালমাটিয়ায় আসকের কার্যালয়ে ২০২২ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক নূর খান এ মন্তব্য করেন।
নূর খান বলেন, দেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি বিভীষিকাময়। গণতন্ত্র সংকুচিত হলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। নির্বাচন কমিশন নিয়ে মানুষের আস্থা এখনও সঠিকভাবে আসেনি যে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে। দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি অনেকটাই মাকাল ফলের মতো।
গুমের ঘটনাগুলো ‘সেভাবে’ প্রকাশ পাচ্ছে না মন্তব্য করে নূর খান বলেন, “এটা খুবই উদ্বেগজনক। একজন ব্যক্তিকে যে সময়ে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে এবং যে সময়ে তাকে ধরে আনার কথা বলছে পরিবার, এর মধ্যে আমরা বিস্তর ফারাক পাচ্ছি। আমাদের নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানে এরকম অনেকগুলো ঘটনা উঠে এসেছে যে, অনেককে তুলে নেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি, গ্রেপ্তারের বিষয়টিই অস্বীকার করা হয়েছে।
“এটি খুবই উদ্বেগজনক। বিশেষ করে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে আমরা দেখেছি যে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক মানুষকে উঠিয়ে আনা হয়েছে। তাদের জঙ্গি তকমা দেওয়াও চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু আদালতের মাধ্যমে তাদের একটা বড় অংশ কিন্তু ইতিমধ্যে ছাড়া পেয়েছে।”
আসকের নির্বাহী পরিচালক বলেন, “তার মানে হচ্ছে জনগণের কিন্তু এখন পর্যন্ত জীবনের যে অধিকার সেগুলোর সবগুলোর ব্যত্যয় ঘটিয়ে ব্যক্তিকে ধরে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আটকে রাখা হচ্ছে। পরবর্তীতে বলা হচ্ছে, গতকাল বা গত পরশু তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের কাছে এরকম অনেকগুলো তথ্য এসেছে যে, যেভাবে বলা হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশিদিন তাদের আটক রাখা হয়েছে।”
তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে এলিট ফোর্স র্যাব এবং বাহিনীটির সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পরই বাংলাদেশের নানা প্রসঙ্গে দেশটি যেভাবে মন্তব্য করেছে তাতে এই ঘটনা দিয়ে যে কেউ চাইলে মায়ের চেয়ে মাসীর দরদ বাগধারার অর্থ বোঝাতে পারবে। কখনও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কখনও রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে, তো কখনও বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে।
বাংলাদেশে এরইমধ্যে নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে বাংলাদেশের জনগণকেই এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ দেশের জনগণ, সরকার ও সুশীল সমাজকে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। এটি ভালোভাবে সম্পন্ন করতে সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। এমনটাই বলছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এ প্রসঙ্গে বলেছেন, মূলত, নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশের জনগণ। আশা করছি, নির্বাচন কমিশন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেবে। নির্বাচন কমিশন তাদের স্বাধীন সত্তা প্রয়োগ করবে। মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় ছাড় দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি অনুযায়ী দেশটি মানবাধিকার এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আপস করবে না।
বাংলাদেশ নিয়ে গত বছর কয়েকের তুলনায় বেশ চিন্তিত যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসকে বেশ তৎপরই মনে হয়েছে। প্রতিদিনই তাগিদ দিয়েছেন সুষ্ঠু নির্বাচনের। কেবল সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নয়, সর্বজন গ্রহণযোগ্যসহ বিশেষায়িত নানা আকাঙ্খা যোগ করে চলেছেন। বারবার বলেছেন, সামনের নির্বাচন হতে হবে আন্তর্জাতিক মানের। মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়েও কথা বলেছেন সমানে। এমনকি জবাবদিহি ছাড়া র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুযোগ নেই- এমন খাসকথাও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন পিটার হাস।
এসডব্লিউএসএস/১৮৫৮
আপনার মতামত জানানঃ