স্পাইডারম্যানের মতো দেয়াল বেয়ে উঠবে—এমন রোবট তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হাউসবট। রোবটটির নাম দেওয়া হয়েছে এইচবি১। বর্তমানে উঁচু ভবনের বিপজ্জনক কাজগুলো শ্রমিকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করেন। এই রোবটের মাধ্যমে সেই কাজগুলো করিয়ে নেওয়া যাবে।
প্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েবসাইট টেকইব্লগের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ছোট আকারের দালানের দেয়াল বেয়ে ওঠার সক্ষমতা থাকলেও ভবিষ্যতে এ রোবট সুউচ্চ দালানও বেয়ে উঠতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দেয়াল বেয়ে ওঠার জন্য রোবটটির শক্তিশালী বৈদ্যুতিক পাখাগুলো ৯২ পাউন্ড বল দিয়ে বাতাস শুষে নেয়। একই সময় রোবটের চারটি রাবারের চাকা কন্ট্রোল ইউনিটের সঙ্গে সংযুক্ত। কন্ট্রোল ইউনিটকে একটি ১১০ ভোল্টের টেথার দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। রোবটে থাকা ফ্যানগুলোর ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক কম্প্যাটিবিলিটি (ইএমসি) রোবটটিকে সুরক্ষিতভাবে পৃষ্ঠের সঙ্গে যুক্ত করে রাখে। যার ফলে রোবটটি কাজ করার সময় নিচে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
হাউসবটসের সিইও ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক কর্নে বলেন, আমরা হাউসবট তৈরির জন্য তিন বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। সিঙ্গাপুরের একটি কোম্পানির কাছে আমাদের প্রথম রোবটটি বিক্রি করতে পেরে অনেক খুশি। আশা করছি, এটি কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমাতে সাহায্য করবে।
আমরা ভবিষ্যতে ওয়ারউইক ম্যানুফ্যাকচারিং গ্রুপ “ডব্লিউএমজি”–এর সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব। অন্যান্য ব্যবহারের জন্য আমরা আরও রোবট তৈরি করার পরিকল্পনা করছি যা মানুষের ক্ষতি কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
এদিকে সম্প্রতি পোশাক শিল্পে রোবটিক্স প্রযুক্তি যোগ করার কাজে জোট বেঁধেছে জার্মানির প্রযুক্তি কোম্পানি সিমেন্স এজি এবং মার্কিন ডেনিম কোম্পানি লেভি স্ত্রস।
রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পোশাক সেলাইয়ের জন্য বাংলাদেশ বা চীনের মত দেশের শ্রমিকদের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে উৎপাদন প্রক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বাজারে ফেরাতে চাইছে কোম্পানিগুলো।
স্যান ফ্রান্সিসকোর সিমেন্স ল্যাবের প্রকল্প প্রধান ইউজেন সোলোজাওয়ে বলেন, “পোশাক হচ্ছে সেই লাখ কোটি ডলারের শিল্পখাত, যা এখনও অটোমেটেড হয়নি।”
রয়টার্স লিখেছে, পোশাক উৎপাদন প্রক্রিয়ার রোবট ব্যবহারের এই প্রযুক্তি নিয়ে ২০১৮ সাল থেকেই গবেষণা করছে সিমেন্সের ওই ল্যাবরেটরি। তবে বিদেশি শ্রমের ওপর নির্ভর না করে নিজেদের ভূখণ্ডে রোবট দিয়ে কাপড় সেলাই করার এ ধারণা পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর কাছে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে মহামারীর কারণে
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উৎপাদনমুখী শিল্প বন্ধ হয়ে গেলে স্থানীয় শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, যৌক্তিকভাবেই এমন আশঙ্কা বাড়বে তখন।
জিনস সেলাই কারখানার কিছু কাজে অটোমেশন ও রোবটিক্স প্রযুক্তি প্রয়োগের কৌশল তৈরি করে ইতোমধ্যে অনলাইনে সমালোচনার মুখে পড়েছেন মার্কিন উদ্ভাবক জনাথান জোর্নোউ; এমনকি মৃত্যু হুমকিও তিনি পেয়েছেন।
নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পিটসবার্গের ‘অ্যাডভান্সড রোবটিক্স ফর ম্যানুফ্যাকচারিং ইনস্টিটিউট’-এর সঙ্গে কাজ করছে সিমেন্স। যুক্তরাষ্ট্রের পুরনো উৎপাদন শিল্পে নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগের সম্ভাব্য উপায় খুঁজতে এ ইনস্টিটিউট খোলা হয়েছে, যেখানে তহবিল দিচ্ছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
রোবটের জন্য কাপড়ের নমনীয়তা নিয়ে জটিলতার সমাধান করতে একটি স্টার্টআপ কোম্পানিকেও চিহ্নিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। রোবটকে ভিন্ন ভিন্ন বুননের কাপড় নাড়াচাড়া করা শেখানোর বদলে রাসায়নিক প্রয়োগ করে পোশাকের কাপড়কে শক্ত করে তোলার প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেছে ‘সিউবো ইনকর্পোরেটেড’ নমের ওই স্টর্টআপ কোম্পানি।
এদিকে, পোশাক শিল্পে রোবট ব্যবহারের বিষয়ে কোম্পানিগুলোর আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। এ তালিকায় লিভাইস ছাড়াও আছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর জন্য ইউনিফর্ম উৎপাদক ব্লুওয়াটার ডিফেন্স এলএলসি।
ইতোমধ্যে পিটসবার্গের রোবটিক্স ইনস্টিটিউট থেকে ১৫ লাখ ডলারের অনুদান পেয়েছে সিমেন্সের গবেষণা প্রকল্পটি।
এসডব্লিউএসএস/১৪০৫
আপনার মতামত জানানঃ