যুক্তরাষ্ট্রে বইছে তীব্র শীতকালীন ঝড়, যাকে বলা হচ্ছে ‘বোম্ব সাইক্লোন’। এই ঝড়ের কারণে তাপমাত্রা শুধুই নামছে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক জায়গার তাপমাত্রা মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে চলে গেছে। যে কারণে যুক্তরাষ্ট্র এখন ‘ডিপ ফ্রিজে’ পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল।
বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক এলাকা এখন মঙ্গল গ্রহের চেয়ে শীতল হয়ে গেছে। পরিস্থিতি এমন যে, মন্টানা অঙ্গরাজ্যে গরম পানি উপরে ছুড়ে মারলে মুহূর্তের মধ্যে তা বরফে পরিণত হচ্ছে।
দেশটিতে নজিরবিহীন এই তুষারপাতে এখন পর্যন্ত ৫০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে বাড়ি-ঘর থেকে বের হতে পারছেন না নাগরিকরা। প্রভাব পড়েছে ভ্রমণে। খবর এনবিসি নিউজের।
বোম্ব সাইক্লোন বলতে এমন এক ঝড়কে বোঝায়—যার প্রকোপ খুব অল্প সময়ের মধ্যে তীব্র থেকে তীব্রতর হয়, এর কেন্দ্রীয় বায়ুচাপ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমপক্ষে ২৪ মিলিবার কমে যায়। এক প্রজন্মে এ ধরনের ঝড় সম্ভবত একবারই দেখা যায়।
এই শীতকালীন ঝড়ের কারণে আবহাওয়া সতর্কতার মুখে রয়েছে ২০ কোটির বেশি মানুষ। এই সতর্কতা এক উপকূল থেকে আরেক উপকূল পর্যন্ত, সর্ব দক্ষিণে মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্ত এবং সানশাইন রাজ্য ফ্লোরিডা পর্যন্ত জারি করা হয়েছে।
নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হচুল বলেছেন, নিউইয়র্কের পশ্চিমাঞ্চলে ঝড়ের আঘাত বেশি অনুভূত হচ্ছে। তাছাড়া বেশ কিছু এলাকায় লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে। জরুরি যানবাহন দিয়ে রাস্তা বন্ধ রাখা হয়েছে।
বাফেলোর পুলিশ জানিয়েছে, শহরটিতে যে দশজন মারা গেছেন তাদের মধ্যে কয়েকজনকে গাড়ির ভেতর ও তুষারাবৃত রাস্তা থেকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
বাফেলো ছাড়াও ভেরমন্ট, ওহাইও, মিসৌরি, উইসকনসিন, কানসাস ও কলোরাডোতে ঝড়- ঠাণ্ডায় মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।
বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ঠাণ্ডা পড়েছে পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্য মন্টানাতে। এখানে তাপমাত্রা মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও নিচে নেমে গেছে।
ঝড়ের কারণে এখনো স্বাভাবিক হয়নি দেশটির বিমান চলাচল। অসংখ্য ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় পরিবারের সঙ্গে বড়দিন উদযাপনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন অনেকেই।
গ্রেট লেক অঞ্চলের কানাডা সীমান্তবর্তী একটি এলাকার এক দম্পতি এএফপিকে বলেন, রাস্তাগুলো দিয়ে একেবারেই চলাচল করা যাচ্ছে না। বড়দিন উপলক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে গাড়ি চালিয়ে ১০ মিনিটের পথও যেতে পারছেন না তাঁরা।
আবহাওয়া কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলে সপ্তাহজুড়ে আবহাওয়ার এই ভয়াবহ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী সপ্তাহে তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার আভাস দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া বিভাগ বলছে, পরিস্থিতি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তুষারঝড়কবলিত এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের বাড়িতে অবস্থানের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার আবহাওয়া বিভাগ বলেছিল, তাপমাত্রা মাইনাস ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে গেছে।
এ তুষার ঝড়ের তীব্র প্রভাব পড়েছে পাশের দেশ কানাডাতেও। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্য লাগোয়া কানাডার বিভিন্ন অংশেও হয়েছে ভারি তুষারপাত। ঝড়ের কারণে কানাডার কিউবেক ও ওন্টারিও প্রদেশের জনজীবনও স্থবির হয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি শহরে বিমান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। গত শুক্রবার এক দিনেই ৪ হাজার ৪০০-এর বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, সিয়াটল-টাকোমা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, নিউ ইয়র্কের লাগর্ডিয়া এবং শিকাগোতে। নিউ ইয়র্কের বাফালো নায়াগ্রা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিমান ওঠা-নামা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শুক্রবার ৫ হাজার ৭৫০টির বেশি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে।
শুধু বিমান নয়, বাস চলাচলও বিঘ্নিত হচ্ছে। ভারী তুষারপাতের কারণে নিউ ইয়র্ক, সাউথ ডাকোটা ও মিনেসোটার রাস্তায় অনেক গাড়িচালক আটকা পড়েছেন। যাদের জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধারের প্রচেষ্টা চলছে।
এসডব্লিউএসএস/২০০৫
আপনার মতামত জানানঃ