সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সংক্রান্ত খবরাখবর কভার করেন, এমন কয়েকজন সাংবাদিকের অ্যাকাউন্ট স্থগিত করেছে টুইটার। তবে একে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং বাকস্বাধীনতার সঙ্গে যুক্ত করে দেখছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ। আজ শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি।
এক টুইটবার্তায় জাতিসংঘ বলেছে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কোনো তামাশার বিষয় নয়। আর ইইউ এর আগেই নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি দিয়েছে টুইটারকে।
যা ঘটেছে
ইলন মাস্কের সমালোচনা করে প্রতিবেদন প্রকাশের কারণে স্বনামধন্য কয়েকজন সাংবাদিকের টুইটার অ্যাকাউন্ট স্থগিত করা হয়েছে৷
গত বৃহস্পতিবার মাস্ক সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে তার পরিবারকে বিপন্ন করার অভিযোগ এনে কোনো ধরনের আগাম সতর্কতা ছাড়াই এই স্থগিতাদেশ জারি করেন৷
মাস্ক নিজেকে মুক্ত কথার সাংবাদিক বলে দাবি করেন৷ সাংবাদিকদের অ্যাকাউন্ট স্থগিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের ব্যাপারটা সাংবাদিকদের জন্যও প্রযোজ্য৷
এর আগে গত বুধবার মাস্কের ব্যক্তিগত জেট প্লেন ট্র্যাক করে এমন একটি প্রোফাইল বন্ধ করে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ারও হুমকি দেয়া হয়৷
বিবিসির খবর অনুযায়ী, টুইটারে ব্লক হওয়াদের মধ্যে রয়েছেন নিউইয়র্ক টাইমস, সিএনএন ও ওয়াশিংটন পোস্টের মতো নামি মাধ্যমের সাংবাদিকরা। দ্য ইন্টারসেপ্ট, ম্যাশেবলের সাংবাদিক এবং ফ্রিল্যান্সার অ্যারন রুপার ও টনি ওয়েবস্টারও রয়েছেন এই তালিকায়। গত ১৫ ডিসেম্বর থেকেই টুইটারে ব্লকড রয়েছেন তারা।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
এ ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের গ্লোবাল কমিউনিকেশন বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মেলিসা ফ্লেমিং। টুইটার থেকে সাংবাদিকদের অ্যাকাউন্ট স্থগিত করায় তিনি ভীষণ বিরক্ত। ফ্লেমিং বলেছেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কোনো তামাশার বিষয় নয়। মুক্ত গণমাধ্যম হলো গণতান্ত্রিক সমাজের ভিত্তি। এবং বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটিই প্রধান অস্ত্র।
এর আগে গতকাল শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কমিশনার ভেরা জোরোভা তাদের নতুন ডিজিটাল পরিষেবা আইনের কথা জানিয়ে টুইটারকে নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
মিডিয়ার স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান আশা করে তিনি বলেন, ইলোন মাস্কের সে বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত। তিনি সীমা অতিক্রম করতে পারেন না।
এদিকে টুইটারের এই কাণ্ডকে ‘সন্দেহজনক ও দুর্ভাগ্যজনক’ বলে অভিহিত করেছেন নিউইয়র্ক টাইমসের এক মুখপাত্র। সংবাদমাধ্যমটি বা রিপোর্টার রায়ান ম্যাক কেউই এই পদক্ষেপের জন্য কোনো ব্যাখ্যা পাননি বলেও জানানো হয়। অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করাকে ‘অযৌক্তিক’ বলেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
যা বলছে টুইটার
ঘটনাটি নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য না করলেও ইলোন মাস্ক বলেছেন, সারাদিন আমার সমালোচনা করেন, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু আমার সার্বক্ষণিক অবস্থান প্রকাশ করা এবং আমার পরিবারের ক্ষতি করা ঠিক নয়।
অবশ্য সাংবাদিকদের অ্যাকাউন্ট ব্লক করার পক্ষে সাফাই গেয়ে প্রতিষ্ঠানটির একজন মুখপাত্র সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি কারো অবস্থানের লাইভ ডেটা শেয়ারিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত।
অর্থাৎ কারো অবস্থান বা তাদের দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপ প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের অভিযুক্ত করছে মাইক্রো ব্লগিং সাইটটি।
এদিকে এ ঘটনা নিয়ে টুইটারের নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান এলা আরউইন জানান, গত বুধবার টুইটারের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কিছু নিয়ম সংশোধন করা হয়েছে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী কেউ কারো রিয়েল টাইম অবস্থান এবং ভ্রমণের তথ্য সরাসরি টুইটারে শেয়ার করতে পারবে না। এ নিয়ম লঙ্ঘন করলে সাত দিনের জন্য অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হতে পারে।
এসডব্লিউএসএস/১৯৩০
আপনার মতামত জানানঃ