জাপান, ব্রিটেন এবং ইতালি যৌথভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে পরিচালিত হতে পারে এমন এক অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান তৈরি করার চুক্তিতে সই করার কথা ঘোষণা করেছে। ২০৩৫ সালের মধ্যে তারা অত্যাধুনিক ক্ষমতাসম্পন্ন যুদ্ধবিমান তৈরির কাজ শেষ করতে চায়।
তিনটি দেশই বলছে, এর মধ্য দিয়ে তারা তাদের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চায় কারণ সারা বিশ্বে আক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এই সমঝোতার ফলে ব্রিটেন ও জাপানের বর্তমান দুটো প্রকল্প – ব্রিটেনের টেম্পেস্ট এবং জাপানের এফএক্স- একীভূত হবে।
বলা হচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য এমন একটি যুদ্ধবিমান তৈরি করা যা হবে অত্যন্ত দ্রুতগতির, শত্রু পক্ষের নজর এড়িয়ে চলতে সক্ষম, এমনকি কোনো চালক ছাড়াও এটি উড়তে পারবে।
বলা হচ্ছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে ইউরোপ ও এশিয়ার দেশগুলোর যৌথ অংশীদারত্বে এটাই সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা প্রকল্প।
এই দেশ তিনটির মধ্যে চুক্তির বিষয়টি গত জুলাইয়েই জানা গিয়েছিল। শুক্রবার তিন দেশ এক বিবৃতি দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের ফিউচার এয়ার সিস্টেম প্রজেক্ট (টেমপেস্ট), জাপানের গ্লোবাল কম্ব্যাট এয়ার প্রোগাম (জিসিএপি) ও ইতালির লিওনার্দো এই প্রকল্পে যুক্ত আছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলছেন, যৌথ এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য তার দেশে হাজার হাজার কর্মসংস্থান এবং একই সঙ্গে নিরাপত্তা সম্পর্ককে আরো জোরদার করা।
ধারণা করা হচ্ছে, এর ফলে ব্রিটেনের অস্ত্র রপ্তানিও বৃদ্ধি পাবে। তিনটি দেশের মধ্যে হওয়া এই সমঝোতা অনুসারে নতুন প্রজন্মের এই যুদ্ধবিমানটি তৈরি করা হবে ২০৩৫ সালের মধ্যে যা টাইফুন জেটকে প্রতিস্থাপন করবে।
তারা আশা করছে যে নতুন এই টেম্পেস্ট জেট সর্বাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র বহন করতে পারবে। এটি নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
বলা হচ্ছে, এই জঙ্গি বিমান একদিকে যেমন দ্রুত গতিতে উড়তে পারবে তেমনি এটি শত্রুপক্ষের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে আক্রমণ চালাতে সক্ষম হবে।
এতে থাকবে অত্যাধুনিক সেন্সর প্রযুক্তি। এছাড়াও থাকবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যা চালককে বিপদের সময় সাহায্য করবে। এমনকি প্রয়োজন হলে এই যুদ্ধবিমান চালক ছাড়াও উড়তে পারবে। এখান থেকে হাইপারসনিক মিসাইল ছোঁড়াও সম্ভব হবে।
তবে এতো জটিল একটি বিমান তৈরি করা অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। এর আগে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান তৈরি করতে সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে পেন্টাগনের।
আর একারণে ব্রিটেন অত্যাধুনিক এই যুদ্ধবিমানটি তৈরি করার জন্য সহযোগী খুঁজছিল। এই প্রকল্পে ইতোমধ্যে যোগ দিয়েছে ইতালি। এখন জাপানের অংশগ্রহণের ঘোষণাও তাৎপর্যপূর্ণ।
রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর জাপান ও তাইওয়ানকে ঘিরে চীনের সামরিক তৎপরতা বেড়েছে। তাই জাপানও প্রতিরক্ষা খাত নিয়ে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছে।
বলা হচ্ছে, যুদ্ধবিমান তৈরির এ চুক্তি জাপানকে প্রতিবেশী চীনকে মোকাবিলায় সাহায্য করবে। এ ছাড়া এই অঞ্চলের নিরাপত্তায় যুক্তরাজ্যের ভূমিকাও বাড়বে।
তিন দেশের নেতাদের পক্ষ থেকে গতকাল দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা নিয়মতান্ত্রিক, অবাধ ও উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই নীতিগুলো এখন হুমকির মুখে। ফলে স্থিতিশীল একটি বিশ্বের জন্য এসব প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি জরুরি।’
আঞ্চলিক নিরাপত্তার অবনতি ঘটছে জানিয়ে সামরিক খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে জাপান। চলতি মাসের শুরুর দিকে জাপান সরকার ঘোষণা দিয়েছিল, সামরিক খাতে বরাদ্দ বাড়াবে তারা। আগামী পাঁচ বছরে সামরিক খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে জিডিপির প্রায় ২ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা আছে।
যুক্তরাজ্যও তাদের সামরিক বাহিনীকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ক্ষমতাসম্পন্ন করার পদক্ষেপ নিয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বারবার বলে আসছেন, প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে সর্বাধুনিক যেসব প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ আছে, সেসব কাজে লাগানো তাঁর দেশের জন্য জরুরি। এই চুক্তি নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি করবে।
জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অত্যানুধিক এ যুদ্ধবিমানের নকশা তৈরিতে নেতৃত্ব দেবে যুক্তরাজ্যের বিএই সিস্টেমস পিএলসি, জাপানের মিৎসুবিসি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ ও ইতালির লিওনার্দো।
এই যুদ্ধবিমানে ডিজিটাল ক্ষমতাসম্পন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সাইবার ওয়ারফেয়ার–সংক্রান্ত প্রযুক্তি সুবিধাও থাকবে। এ ছাড়া এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকবে ইউরোপের ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এমবিডিএ, রোলস রয়েস পিএলসি, আইএইচআই করপোরেশন ও অ্যাভিও অ্যারো।
এসডব্লিউএসএস/১০৫০
আপনার মতামত জানানঃ