ইরান সরকারের বিরুদ্ধে তিন দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচির জন্য তৈরি হচ্ছিলেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু তার ঠিক আগে খাবারে বিষক্রিয়ার জেরে অসুস্থ হয়ে পড়লেন অন্তত ১২০০ জন শিক্ষার্থী।
ধারণা করা হচ্ছে, হিজাব বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ার অপরাধে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের খাবারে বিষ মিশিয়ে দিয়েছে দেশটির ক্ষমতাসীন ইসলামি সরকারের প্রশাসন!
জানা গিয়েছে, একযোগে বিশাল আন্দোলনের পরিকল্পনা করেছিল ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। পূর্ব নির্ধারিত সেই আন্দোলনের কথা জানতে পেরেই বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে খাবারের সঙ্গে বিষ খাইয়ে দেওয়া হয়।
আক্রান্তরা সকলেই গায়ে ব্যথা ও মাথা ঘোরার সমস্যায় ভুগছেন। পেটের সমস্যাও রয়েছে তাদের। অসুস্থরা যেন চিকিৎসা না পান, সেই জন্য স্থানীয় হাসপাতালগুলোতেও চিকিৎসা পরিষেবা কার্যত বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে ইরানে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে সরকারের বিরুদ্ধে তিন দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচির জন্য তৈরি হচ্ছিলেন দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তার ঠিক আগেই খাবারে বিষক্রিয়ার জেরে অসুস্থ হয়ে পড়লেন অন্তত ১২০০ শিক্ষার্থী।
ইরানের জাতীয় ছাত্র সংগঠনের দাবি, সরকারের লোকরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খাবারে বিষ দিয়েছে। একটি ট্রেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করে তারা জানায়, গত কয়েকদিনে খারাজমি এবং আর্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচুর শিক্ষার্থী বমি, দুর্বলতা, ব্যাথা এমনকি ঘোরের মধ্যে রয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর থামিয়ে দিতেই ষড়যন্ত্র করে তাদের খাবারে এই বিষক্রিয়া ঘটানো হয়েছে। অন্যদিকে, কর্তৃপক্ষের দাবি, পানিবাহিত জীবাণুর জেরেই খাবারে এই বিষক্রিয়া হয়েছে।
এর কয়েকদিন আগে, বিক্ষোভের আরও দুই কেন্দ্র আল জাহরা ও ইসফাহান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও একইভাবে খাবারে বিষক্রিয়ার জেরে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যান্টিনের খাবার থেকেই সেই বিষক্রিয়া শুরু হয়েছিল। অভিযোগ, সেই সময় অদ্ভুতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রগুলো হয় বন্ধ ছিল অথবা ডায়রিয়ার ওষুধ পাওয়া যাচ্ছিল না।
কিছুদিন আগেই জানা গিয়েছিল, আন্দোলনের চাপে পড়ে নীতি পুলিশ বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে ইরানের প্রশাসন। কিন্তু সেদেশের শিক্ষার্থীদের দাবি, এমন কোনও পদক্ষেপ নেয়নি কট্টরপন্থী শাসকরা। বিশ্বের দরবারে মিথ্যা কথা প্রচার করার প্রতিবাদে ইসলামি শাসকদের বিরুদ্ধে টানা তিনদিন ধরে ধর্মঘটের পরিকল্পনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আর সেই কথা জানতে পেরেই আন্দোলন দমিয়ে রাখতে প্রাণপন চেষ্টা শুরু করে প্রশাসন। খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দেওয়া হয়। তাতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন হাজার হাজার শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জানিয়েছেন, যেহেতু প্রতিবাদ কর্মসূচির কথা আগে থেকে প্রশাসনের জানা ছিল, সেই জন্য হাসপাতালের পরিষেবা অকেজো করে রাখা হয়েছে। চিকিৎসা পাচ্ছেন না অসুস্থরা। সাবধান থাকতে আপাতত বাইরের খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন শিক্ষার্থীরা।
তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, কোনও কারণে খাবার পানিতে বিষক্রিয়া হয়েছিল। সেই পানি খেয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, সাম্প্রতিক সরকারবিরোধী অস্থিরতায় দোষী সাব্যস্ত এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কথা জানিয়েছে ইরান। বিপ্লবী আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার সকালে মোহসেন শেকারির ফাঁসি কার্যকর করা হয় বলে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি দাঙ্গাকারী হিসেবে সেপ্টেম্বরে তেহরানের একটি প্রধান সড়ক অবরোধ করে বড় ছোরা দিয়ে আধাসামরিক বাহিনীর এক সদস্যকে আঘাত করেছিলেন।
তবে ইরানের এক আন্দোলনকারী জানান, “যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়াই লোকদেখানো বিচারে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।”
নরওয়েভিত্তিক ইরান হিউম্যান রাইটসের পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দেম টুইটারে লিখেছেন, ইরানের কর্তৃপক্ষ যদি শিগগিরই কার্যকর আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি না হয়, তাহলে বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর চলতেই থাকবে।
ইরানের বিচারবিভাগ সংশ্লিষ্ট বার্তা সংস্থা মিজানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোহসেন শেকারি গত ২৫ সেপ্টেম্বর তেহরানের সাত্তার খান সড়ক অবরোধ করে রাখার পাশাপাশি বাসিজ রেসিস্ট্যান্স ফোর্সের এক সদস্যের উপর হামলায় একটি বড় ছোরাও ব্যবহার করেছিল বলে জানায় ইরানের বিপ্লবী আদালত।
তবে যাই হোক, ইরান আর আগের অবস্থায় নেই। নীতি পুলিশ হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুর পর থেকে ফুঁসছে জনগণ। বিক্ষোভ থামাতে মরিয়া সরকার। বেছে নিয়েছে দমনপীড়নের পথ। তবে এই পথ তাদের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।
পাশাপাশি ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে ড্রোন দিয়েও সহায়তা করছে দেশটি। তাদের এই রাশিয়া–ঘেঁষার বিষয়টিকেও সহজভাবে নিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র। তাদের চোখে, ইরান রাশিয়ার যত ঘনিষ্ঠ হবে, তত তারা বাকি বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, ইরান এক ‘চক্রে’ আটকা পড়ে গেছে।
এসডব্লিউএসএস/১৯৫৫
আপনার মতামত জানানঃ