বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে এগিয়ে বিশ্বের শিল্পোন্নত অনেক দেশ। আর এই দূষণের কারণে শিশু মৃত্যুর নিরিখে চীন চতুর্থ স্থানে রয়েছে। তবে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে গত ১০ বছর ধরে চীনের রাজধানী শহর বেইজিং বিশেষ পদক্ষেপ করছে। তবু চীন সহ বর্তমান বিশ্বে উদ্বেগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই বায়ুদূষণ।
সারা বিশ্বেই প্রাণহানির অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে বায়ুদূষণ। চীনে বায়ুদূষণ এমন মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, রেহাই পাচ্ছে না গর্ভস্থ ভ্রূণও। বছরে ৬৪ হাজার ভ্রুণের মৃত্যু হয় কেবল বায়ুদূষণের কারণে।
শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও এক সমীক্ষা রিপোর্টে এমনই তথ্য প্রকাশ করেছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট। সেই সমীক্ষা রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে, প্রতি বছর চীনে বায়ুদূষণের কারণে গর্ভের মধ্যেই মৃত্যু হয় ৬৪ হাজার শিশুর।
বায়ুদূষণের কারণে শিশু মৃত্যুর নিরিখে চীন চতুর্থ স্থানে। তবে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে গত ১০ বছর ধরে চীনের রাজধানী শহর বেইজিং বিশেষ পদক্ষেপ করছে বলে সমীক্ষা রিপোর্টে উল্লিখিত। পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানান, চীনসহ ১৩৭টি দেশের বায়ুর মান তুলনামূলকভাবে ভালো হয়েছে।
তবে গর্ভস্থ ভ্রূণের উপর বায়ুদূষণের প্রভাব ঠেকাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে বৈঠক করা হয়েছে। চীনা সরকারও ভ্রূণের মৃত্যু ঠেকাতে বায়ুদূষণ মোকাবিলায় বিশেষ পদক্ষেপ করেছে।
বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য ২০১৩ সালে নেয়া দেশটির জাতীয় অভিযান শুরু পরও এই পরিসংখ্যান উদ্বেগ তৈরি করেছে।
গবেষণায় ১৩৭টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষকরা বায়ু দূষণের জন্য বায়ুবাহিত বস্তুকণাকে দায়ী করেছেন। এই সূক্ষ্ণ বায়ুকণার ব্যাস ২ দশমিক ৫ মাইক্রনের কম হয়।
বৈজ্ঞানিক জার্নাল নেচার কমিউনিকেশনসে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে, বাতাসে অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা পিএম ২ দশমিক ৫ মাইক্রনের কারণে বিশ্বের ৯৮ শতাশং শিশু মাতৃগর্ভে মারা যায়। বায়ু দূষণের কারণে গর্ভে শিশুর মৃত্যুতে বিশ্বে চতুর্থ স্থানে রয়েছে চীন।
জু তাওয়ের নেতৃত্বে পিকিং ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন। গত দশকে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে চীন সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর কারণে এ ধরনের মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।
এদিকে বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৮০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন। বায়ু দূষণের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা। অথচ ইটভাটা বন্ধ করতে গেলে প্রভাবশালীদের মার খেতে হয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যসচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।
রোববার (৪ ডিসেম্বর) বিশ্বব্যাংক এক প্রতিবেদনে বলেছে, শুধু ইটভাটা নয়, যানজট, মেট্রোরেল’সহ বিভিন্ন নির্মাণকাজ ঢাকা শহরে বায়ু দূষণ বাড়িয়েছে।
২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক বলছে, দিনে ২টি সিগারেট খেলে মানবদেহের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, বায়ু দূষণের কারণে প্রতিদিন সেই পরিমাণ ক্ষতির শিকার হন নগরবাসী। বিশেষ করে নবজাতক থেকে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু এবং ষাটোর্ধ্বরা রয়েছেন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে।
এ ছাড়া প্রতিনিয়তই বাড়ছে হাঁচি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট। এসবের কারণে প্রতিবছর প্রায় ৮০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে বছরে গড়ে জিডিপির ক্ষতি প্রায় সাড়ে চার শতাংশ।
উল্লেখ্য, জলবায়ুর পরিবর্তন অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। জীবাশ্ম জ্বালানির কারণে বায়ুদূষণে বিশ্বে প্রতিবছর ৭০ লাখ অপরিণত নবজাতকের মৃত্যু হয় ও প্রতি মিনিটে মারা যান ১৩ জন। বাংলাদেশে বছরে বায়ুদূষণে প্রতি ১ লাখে ১৪৯ জন (মোট মৃত্যু ২ লাখ ৪০ হাজার) মারা যান।
ধারণা করা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অপুষ্টি, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া ও হিট স্ট্রেসে ২০৩০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে বিশ্বে বছরে অতিরিক্ত আড়াই লাখ মানুষ মারা যাবে।
এসডব্লিউএসএস/১৮৫৫
আপনার মতামত জানানঃ