ডাইনোসর বলতে জনপ্রিয় ধারণায় একটি অধুনা অবলুপ্ত, সাধারণত বৃহদাকার মেরুদণ্ডী প্রাণীগোষ্ঠীকে বোঝায়। এরা পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের প্রাগৈতিহাসিক অধিবাসী এবং বৈজ্ঞানিকদের ধারণা এই প্রভাবশালী প্রায় ১৬ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে রাজত্ব করেছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, আনুমানিক ২৩ কোটি বছর পূর্বে প্রথমে ডায়নোসরের আবির্ভাব হয়েছিল।
ক্রিটেশিয়াস যুগের শেষ দিকে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি বছর আগে এক মহাপ্রলয়ে বিলুপ্ত হয়ে যায় ডায়নোসর। ফসিলে লেখা ইতিহাস বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ১৬ কোটি বছর পৃথিবীতে রাজত্ব করার পর একরকম হুট করেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে ডাইনোসর। সেই সঙ্গে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে পৃথিবীর তিন-চতুর্থাংশ প্রাণ।
ডাইনোসরদের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার অনেক অনেক বছর পর পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ মানুষের হাতে আসে। তাই প্রশ্ন ওঠে, ডাইনোসর বিলুপ্ত না হলে কি মানুষ আদৌ আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে পারতো! এই উত্তর জানতে চলুন ঘুরে আসা যাক সাড়ে ৬ কোটি বছর আগে। পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিশালদেহী ব্রকিয়োসোরাস (লম্বা গলার তৃণভোজী ডাইনোসর)। তীক্ষ্ম চোখে শিকারের খোঁজে বেরাচ্ছে। শুরু হয়েছে পৃথিবীজুড়ে নিত্যব্যস্ততা। চলছে অসংখ্য জীবনের স্পন্দন। ঠিক এ সময় হাজার কিলোমিটার দূরে মহাশূন্যে একটি গ্রহাণু কক্ষচ্যুত হয়।
প্রচণ্ড গতিতে ধেয়ে আসে পৃথিবীর দিকে ১২ কিলোমিটার প্রশস্ত গ্রহাণুটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে জ্বলে ওঠে। আসতে আসতে গতি বাড়তে থাকে আর কমতে থাকে ভূমি থেকে গ্রহাণুটির দূরত্ব। একসময় তা আছড়ে পড়ে ভূমিতে, এখনকার মেক্সিকো উপসাগরের চিক্সচুলুব এলাকায় সেটি আঘাত করে আর পাল্টে যায় পৃথিবীর রুপ।
প্রায় ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে আমাদের গ্রহে যে ছয় মাইল প্রশস্ত গ্রহাণু ছড়িয়ে পড়েছিল শুধু তা নয়, অন্যান্য পরিবেশগত হুমকির মধ্য দিয়ে,তীব্র আগ্নেয়গিরি, নাটকীয় সমুদ্রপৃষ্ঠের পরিবর্তন এবং তাপমাত্রায় ওঠানামার মধ্যে ডাইনোসরগুলি মহাবিপদের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করছিল।
গবেষকরা বলেছেন যে, আমাদের গ্রহে গ্রহাণুটি বিধ্বস্ত হওয়ার প্রায় ৪০০,০০০ বছর আগে ভারতে প্রচুর আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ শুরু হয়েছিল, যা বিশ্বব্যাপী দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী ছিল। এটি, বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তনের সাথে একত্রিত হয়ে ডায়নোসরগুলিকে দুর্বল করে দিয়েছিল।
একটি গবেষণায় গবেষকরা বলেছেন, এটি ছিল এক বিশাল মহাকাশ শিলা যা পৃথিবীকে মারাত্মকভাবে ধাক্কা দিয়েছে। “ডাইনোসররা প্রায় দেড় মিলিয়ন বছর ধরে ছিল। তাদের বৈচিত্র্য সর্বদা পরিবর্তনশীল ছিল, তারা সবসময় সব পরিস্থিতিতে নিজেদের মানিয়ে নিতো।ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসের একদল বিজ্ঞানী ওই সাড়ে ৬ কোটি বছর পূর্বে সেই বিপর্যয় না ঘটলে কি ঘটতে পারতো সেই বিষয়ে নতুন দিগন্ত খোঁজার চেষ্টা করছে।
তাদের মতে সেই বিপর্যয় যদি শুধু আটলান্টিক মহাসাগরে সীমাবদ্ধ থাকতো তাহলে হয়তো সারা পৃথিবীর সব ডাইনোসর একসাথে বিলুপ্ত হয়ে যেতো না। আজও কিছু ডাইনোসর পৃথিবীর বুকে টিকে থাকতো। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যদি ডাইনোসর টিকে থাকতো তাহলে মানুষ কি আদৌ আজকের অবস্থানে আসতে পারতো? মানুষ ডাইনোসরের বশে থাকতো নাকি ডাইনোসর মানুষের বশে থাকতো? সেসব প্রশ্নের উত্তরই খুঁজছে গবেষকরা।
কিছু কিছু গবেষক ডাইনোসর সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে বলেছেন যে, যদি ওই সময় সেই মহাবিপর্যয় নাও হতো তবুও আজ পৃথিবীর বুকে ডাইনোসর এর কোনো অস্তিত্বই থাকতো না। ডাইনোসর যে তাপমাত্রায় পৃথিবীতে টিকে ছিল তখনকার তুলনায় এখনকার তাপমাত্রা বহুগুন বেশি।
তবে মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক টম হল্টসের ধারণা ওই সময়ে ডায়নোসররা বিলুপ্ত না হলে আজও পৃথিবীর তাপমাত্রায় নিজেদের মানিয়ে নিয়ে টিকে থাকতো তারা৷ ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের গবেষক স্টিফেন ব্রুস্যাটেও টমের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।
তার ধারণা, ডাইনোসরদের অভিযোজন ক্ষমতা খুবই ভালো ছিল তাই তারা ১৬ কোটি বছর পৃথিবীতে রাজত্ব করতে পেরেছিল। গবেষকদের মতে এখনো পৃথিবীতে ডাইনোসর থাকলে হয়তো পৃথিবীর রাজত্ব তাদের হাতেই রয়ে যেতো। যদিও এখনো পৃথিবীতে ডাইনোসর থাকলে তারা পৃথিবীতে কেমন প্রভাব বিস্তার করতো তা নিয়ে কেউই সঠিক প্রমাণ দিতে পারেননি না।
এসডব্লিউএসএস/০৮১০
আপনার মতামত জানানঃ