আয়তনের দিক থেকে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মহাসাগর হলো ভারত মহাসাগর, যা ইন্ডিয়ান ওশেন নামে পরিচিত। প্রাচীনকালে গ্রীকদের কাছে এটি এরিথ্রিয়ান সাগর নামেও পরিচিত ছিল, যা পরবর্তীকালে ভারত মহাসাগর হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
পৃথিবীর মোট জলভাগের ২০ শতাংশ জুড়ে রয়েছে এই মহাসাগরের উপস্থিতি। ভারত মহাসাগরের মোট আয়তন প্রায় ৭৩,৪২৭,০০০ বর্গ কিলোমিটার। ভারত মহাসাগরের প্রধান তিনটি বাহু হিসেবে পরিচিত সাগরগুলো হলো- আরব সাগর (লোহিত সাগর, এডেন উপসাগর ও পারস্য উপসাগর), বঙ্গোপসাগর এবং আন্দামান সাগর। আজকে ভারত মহাসাগরেরই এক রহস্য আমরা জানব।
সমুদ্র এবং মহাসাগরগুলি আমাদের গ্রহের অর্ধেকেরও বেশি এলাকা দখল করে, কিন্তু তারা এখনও মানবজাতির জন্য গোপনীয়তায় আবৃত। আমরা মহাকাশ জয় করার চেষ্টা করি এবং বহির্জাগতিক সভ্যতা খুঁজছি, কিন্তু একই সময়ে, বিশ্বের সমুদ্রের মাত্র ৫ শতাংশ মানুষ অন্বেষণ করেছে।
ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সমুদ্রের তলদেশে প্রায় এক অজানা জগতের সন্ধান পেয়েছেন৷ সেই প্রাচীর প্রায় ১০০ মিটার উঁচু ও ৪০০ কিলোমিটার বিস্তৃত৷ শীতল পানির প্রবাল দিয়ে সেটি তৈরি৷ এই প্রবাল হাজার হাজার মিটার গভীরে কোনো আলো ছাড়াই বেঁচে থাকে৷ গবেষক দলের সদস্য ড. ক্লাউডিয়া ভিনব্যার্গ বলেন, ‘‘সমুদ্রের গভীরে নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে তারা থাকে৷ স্রোতের মাধ্যমে ক্ষুদ্র খাদ্যকণা আগমনের উপর তারা নির্ভর করে৷ সেই খেয়েই তারা বাঁচে৷”
কিন্তু এমনকি এই তথ্যগুলিও আতঙ্কিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট যে কোন কোন প্রাণীরা জলের গভীরে বাস করে, যেখানে সূর্যের আলো প্রবেশ করে না। আর প্রতিদিনই নতুন নতুন প্রজাতির উদ্ভিদ এবং প্রাণী আবিষ্কৃত হচ্ছে। মহাসাগরগুলি হলো অজ্ঞাত রহস্যময় প্রাণীদের একটি বিশাল উৎস। ভারত মহাসাগরের গভীরে পানির নিচে আগ্নেয়গিরির ঠিক কাছাকাছি এক অদ্ভূত প্রাণীর সন্ধান মিলেছে।
মিউজিয়ামস ভিক্টোরিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ও গবেষকরা চোখবিহীন ঈল মাছের মতো দেখতে এক প্রাণীর সন্ধান পেয়েছেন যেটিকে দেখতে খানিকটা বাদুড়ের মতো। এদের ক্ষুরের মতো ধারালো দাঁত রয়েছে। খানিকটা লিজার্ডফিশের সাথেও এদের মিল রয়েছে।
ডেইলি স্টার অনুসারে, এই প্রাণীগুলি অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যন্ত কোকোস দ্বীপপুঞ্জ মেরিন পার্কে একটি অভিযানের সময় আবিষ্কৃত হয়েছিল। জায়গাটি অস্ট্রেলিয়ার পার্থের ২,৭৫০ কিলোমিটার উত্তরপশ্চিমে। ২৭টি ছোট ছোট দ্বীপ দিয়ে তৈরি এই ভূখণ্ড। সাদা বালির বিচ, পাম গাছ আর লেগুনে পরিপূর্ণ এক ভৌগোলিক অঞ্চল।
সেখানেই অভিযান চালাতে গিয়ে বিজ্ঞানীদের চোখে ধরা পড়েছে প্রাণীগুলি। এর আগেও সমুদ্রের তিন মাইল গভীরে অনাবিষ্কৃত এলাকায় সন্ধান চালিয়ে জিলেটোনিয়াস ত্বক সম্পন্ন এক ধরনের ঈলের সন্ধান পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।
এগুলি এমন একটি মাছ যাদের একই সাথে ডিম্বাশয় এবং শুক্রাশয় উভয়ই রয়েছে। অর্থাৎ একই সাথে নারী ও পুরুষের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে এই প্রাণী।
আরেকটি আবিষ্কার ছিল ফ্ল্যাটফিশ। যাদের মাথার একপাশে চোখ রয়েছে, সমুদ্রের তলায় শুয়েও এদের দৃষ্টিশক্তি অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারে। গভীর সমুদ্রে ব্যাটফিশগুলিও আবিষ্কৃত হয়েছে। এই মাছগুলি তাদের বাহু-সদৃশ পাখনার দ্বারা সমুদ্রের তলদেশে ঘুরে বেড়ায়।
মূলত গভীর সমুদ্রের মাছ সম্পর্কে সবকিছু জানা যায় না, কারণ তলদেশের অধিকাংশই অধ্যয়ন করা হয়নি। তাই সমুদ্র একটি রহস্য হয়ে রয়ে গেছে, যা বহু শতাব্দী ধরে অনেক রহস্যময় প্রাণীকে তার মধ্যে ধারণ করে রেখেছে রেখেছে।
এসডব্লিউএসএস/১৮০৫
আপনার মতামত জানানঃ