প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কুমিল্লার চান্দিনায় আয়োজিত মাহফিলে বিনা দাওয়াতে গোপনে অংশগ্রহণ করেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। গোপনে মাহফিলে গিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী ও উষ্কানিমূলক বক্তব্য এবং সেখানে দাঙ্গার পরিবেশ তৈরি করার অভিযোগে মামুনুল হকসহ তার সহযোগী আরো ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
জানা যায়, শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেন বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী। যিনি ওই মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে গিয়েছিলেন। তিনি জানান, ১৫ ডিসেম্বর তাকে কুমিল্লার চান্দিনা থানার জোয়াগ পশ্চিমপাড়া এলাকায় দুই দিনব্যাপী ইসলামী মহাসম্মেলনের দ্বিতীয় দিন প্রধান অতিথি হিসেবে দাওয়াত দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী তিনি বক্তব্য শেষ করে রাত ১১টায় ঢাকার পথে রওনা হন। ঢাকায় পৌঁছার পর তিনি জানতে পারেন সেখানে শেষ সময়ে মাওলানা মামুনুল হকও গিয়েছিলেন এবং বক্তৃতা রাখেন। মামুনুল হকের অংশগ্রহণের বিষয়টি গোপন রেখে ওই মাহফিলে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বলে জানান তিনি। এমনকি মাহফিলের পোস্টারের কোথাও মামুনুল হকের নাম ছিলো না বলেও জানান তিনি। দাওয়াত ছাড়া মাহফিলে গিয়ে ইসলামের ভাবমূর্তি নষ্ট করে দেশের মধ্যে একটি অরাজকতা তৈরি করতেই বিএনপি-জামায়াতের মদদে মামুনুল হক এসব করছেন বলে লিখিত বক্তব্যে দাবি করেন তিনি।
এ-বিষয়ে চান্দিনা থানার ওসি সামছুদ্দিন মোহাম্মদ ইলিয়াস জানান, করোনা মহামারির কারণে গণজমায়েত নিষিদ্ধ করেছে সরকার। তার মধ্যে প্রশাসনের কাছে তথ্য পোপন করে মাহফিলের আয়োজন করেছে অভিযুক্তরা। ওই মাহফিলের পোস্টার ও ব্যানারে খেলাফত মজলিশের মহাসচিব হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হকের নাম ছিল না। কিন্তু আয়োজকদের যোগসাজেসে ওই মাহফিলে মামুনুল হক এসে রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার, উস্কানিমূলক এবং মানুষের মধ্যে প্রপাগন্ডা ছড়ানোর মতো বক্তব্য প্রদান করেছেন বলে আমরা মনে করছি। যার কারণে ১৭ ডিসেম্বর মাহফিলের আয়োজক মোশারফ হোসেন মাহমুদকে ১ নম্বর এবং হেফাজত নেতা মামুনুল হককে ২ নম্বর আসামি করে ৬ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবীকেও।
তিনি আরও বলেন, গত ১৫ ডিসেম্বর কুমিল্লার চান্দিনা থানাধীন জোয়াগ পশ্চিমপাড়া এলাকায় দুই দিনব্যাপী ইসলামী মহাসম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে আয়োজকরা মাওলানা মামুনুল হক আসার বিষয়টি পরিকল্পিতভাবে সম্পূর্ণ গোপন রাখেন। কিন্তু, ওই মাহফিলে মামুনুল হককে ডেকে এনে বক্তব্য দেওয়ানোর মাধ্যমে সেখানে তারা দাঙ্গার পরিবেশ তৈরি করেছিলেন।
রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসা বিতর্কিত মামুনুল হক ও তার সহযোগীরা দেশে নতুন কোনো অরাজকতা তৈরী করার পরিকল্পনা করছেন। প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে গোপনে মাহফিল করার বিষয়টাকে অনেক বড় করেই দেখছেন তারা। তারা মনে করেন, মামুনুল হক ও তার অন্যান্য সহযোগীরা গোপনে নতুন কোনো ট্রামকার্ডে শাণ দিচ্ছেন। করোনা দ্বারা উদ্ভব আতঙ্কিত এই পরিস্থিতির মধ্যে তারা যেকোনো সময় দেশে অরাজকতা তৈরীর সুযোগ নিতে পারেন বলে আশঙ্কা করেন তারা।
এর আগেও হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমীর আল্লামা আহমেদ শফীকে হত্যার অভিযোগে এবং বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার উস্কানিদাতা হিসেবে মামুনুলের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলা ঘাড়ে নিয়েও গোপনে মাহফিলে যোগদান বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহল সরকারের প্রশ্রয়কে দায়ী করছেন। এবং একই সাথে দাবী করছেন মামুনুল হকের এহেন গোপন ষড়যন্ত্রের সুষ্ঠু তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ারও। মামুনুল হক এবং তার গংদের দমিয়ে রাখতে সরকারের স্বার্থে কেবল মামলার জন্য মামলা নয়, এর কার্যত দিকটিও দেখতে চান বলে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান সংশ্লিষ্ট মহল।
এসডাব্লিউ/কেএইচ/১৭১৫
আপনার মতামত জানানঃ