State Watch
    Facebook Twitter Instagram
    সর্বশেষ প্রকাশিত
    • গুম, খুন, মিথ্যা মামলায় জড়িত ওসি এসপিদের তথ্য সংগ্রহ করছে বিএনপি
    • ডিভোর্স ডুয়েল: মধ্যযুগে বিচ্ছেদের জন্য পরস্পরকে হত্যার চেষ্টা করতেন স্বামী-স্ত্রী
    • রুশ কারাগারের যে বর্বরতা হার মানায় দোজখকেও
    • মহাকাশে সবচেয়ে বড় নক্ষত্র
    • আট দশক ধরে স্প্যানিশ ক্যাথলিক চার্চে প্রায় হাজার শিশুকে নির্যাতন
    • সমুদ্রের তলায় ১৮ হাজার বছর আগের আগ্নেয়গিরি: জানুন বিস্তারিত
    • জ্বালানির কথা না ভেবেই বিদ্যুৎকেন্দ্র বানানো হয়েছে
    • ৯ হাজার বছর আগেও চাবানো হতো চুয়িং গাম
    State Watch
    • প্রধান পাতা
    • আইনপ্রয়োগ
      1. গুম-অপহরণ
      2. গ্রেপ্তার-নিপীড়ন
      3. নিপীড়নমূলক আইন
      4. প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি
      5. বিচার বহির্ভূত হত্যা
      6. রাষ্ট্রীয় বাহিনী
      Featured
      মার্চ ১২, ২০২৩

      সরকারি অর্থায়নের হাসপাতালে বেসরকারি ফি, বিপাকে রোগীরা

      Recent
      জুন ১, ২০২৩

      উধাও হাসপাতাল: কয়েক কোটি টাকার দুর্নীতিতে যুক্ত পাউবি

      মে ২৮, ২০২৩

      নিখোঁজ বাবাকে ১০ বছর ধরে খুঁজছে শিশু হৃদি

      মে ১৪, ২০২৩

      বাংলাদেশের এতিমখানায় করা অনুদান তদন্ত করবে চ্যারিটি কমিশন

    • আক্রান্ত জনগোষ্ঠী
      1. আদিবাসী
      2. গণমাধ্যম
      3. ধর্মীয় সংখ্যালঘু
      4. নারী ও শিশু
      5. প্রাণ-প্রকৃতি-কৃষি
      6. ভিন্ন মতাবলম্বী
      7. রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ
      8. শ্রমজীবী
      Featured
      ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৩

      বাংলাদেশে গণমাধ্যম কতটা স্বাধীন মনিটর করবে যুক্তরাষ্ট্রসহ ৯ রাষ্ট্র

      Recent
      মে ২, ২০২৩

      প্রধানমন্ত্রীর কারণে বাংলাদেশে আতঙ্কে সাংবাদিকরা: দ্য গার্ডিয়ান

      এপ্রিল ২৯, ২০২৩

      ভারতে রাস্তায় ঈদের নামাজ পড়ায় ২০০০ মুসল্লির বিরুদ্ধে মামলা

      এপ্রিল ১২, ২০২৩

      কেন বান্দরবানে নিজের গ্রাম থেকে পালাচ্ছে বম জনগোষ্ঠির মানুষ?

    • বিশেষায়িত
      1. করোনাভাইরাস
      2. ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট
      3. নির্বাচন
      4. বিশ্ব
      5. মানবাধিকার
      6. রোহিঙ্গা জাতি
      7. সীমান্ত ইস্যু
      Featured
      মার্চ ২৬, ২০২৩

      রাহুল গান্ধীর জেল যাওয়া কি মোদিকে সিংহাসন থেকে নামাতে পারবে?

      Recent
      জুন ৪, ২০২৩

      আট দশক ধরে স্প্যানিশ ক্যাথলিক চার্চে প্রায় হাজার শিশুকে নির্যাতন

      জুন ৩, ২০২৩

      ভারতে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা: নিহত ২০৭, আহত ৯০০

      জুন ২, ২০২৩

      সব ডলার শেষ, গলা পর্যন্ত ঋণে ডুবে আমেরিকা! কী প্রভাব পড়তে পারে ভারতে?

    • রাজনীতি-প্রশাসন
      1. অর্থনীতি ও বাণিজ্য
      2. আইন-আদালত
      3. ক্ষমতাসীন দল
      4. জাতীয় সংসদ
      5. রাজনীতি
      6. রাষ্ট্র-সরকার
      Featured
      মার্চ ২৫, ২০২৩

      রমজানেও ব্যবসায়ীদের লোভ-লালসায় দ্রব্যমূল্যের চাপে নিম্নমধ্যবিত্তরা

      Recent
      জুন ৫, ২০২৩

      গুম, খুন, মিথ্যা মামলায় জড়িত ওসি এসপিদের তথ্য সংগ্রহ করছে বিএনপি

      জুন ৩, ২০২৩

      করযোগ্য আয় না থাকলেও দিতে হবে কর, আরো যত অসঙ্গতি

      জুন ২, ২০২৩

      অর্থনীতির পুনরুদ্ধার নাকি বেহাল পরিস্থিতির সূচনা?

    • মতামত
      • বিশ্লেষণ
      • সম্পাদকীয়
      • সাক্ষাৎকার
    • গবেষণা ও প্রতিবেদন
      1. বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন
      2. চলতি প্রবণতা
      3. নীতি নির্দেশনা
      Featured
      জানুয়ারি ৩১, ২০২৩

      আবারো অবনমন: সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১২

      Recent
      মে ৩০, ২০২৩

      চিন্তা করার ক্ষমতা হারাচ্ছে মানুষ: গবেষণা

      মে ২০, ২০২৩

      মহামারিতে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে দেড় কোটি মানুষ: বিআইডিএস

      মে ১৬, ২০২৩

      গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮৮৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

    • আর্কাইভ
    State Watch
    অন্যান্য খবর

    আমরা কি হারিয়ে ফেলছি সুন্দরবন?

    ডেস্ক রিপোর্টBy ডেস্ক রিপোর্টনভেম্বর ১৮, ২০২২No Comments9 Mins Read

    ব্রাজিলের চিরসবুজ বিস্তৃত অ্যামাজন গহীন বনাঞ্চলকে বলা হয় বিশ্বের ফুসফুস, তেমনি সুন্দরবনও বাংলাদেশের শ্বাস-প্রশ্বাসের এক অঙ্গ। এই ঘন বনাঞ্চল বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগেরও এক প্রতিরোধক। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে সুন্দরবন। সাম্প্রতিক বছরে একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ে জীবন ও সম্পত্তির বিপুল ক্ষতি হয়েছে বিপন্ন সুন্দরবন এই এলাকায়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সুন্দরবনের আবহাওয়া পাল্টে যাচ্ছে ক্রমশ। তাতে বিপদ বাড়ছে।

    জিরো কার্বন অ্যানালিটিক্স নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা জলবায়ু সংক্রান্ত যে সমীক্ষা চালিয়েছে, তাতে শোনা যাচ্ছে সেই বিপদঘন্টি। এই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গত চার দশকে ২ লক্ষ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে সুন্দরবনে। এর মধ্যে দেড় লক্ষ কোটি টাকার বেশি জীবন ও সম্পত্তিজনিত ক্ষতি হয়েছে গত তিন বছরে। এ জন্য দায়ী চারটি বড় আকারে ঘূর্ণিঝড়।

    জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাড়ছে ভয়াল ঝড়ের সম্ভাবনা। গত ২১ বছরে সুন্দরবনে ১৩টি বড় মাপের ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর স্মৃতি ধরা আছে বাংলাদেশের উপকূলবাসীদের মনে। ২০০৭ সালে সেদেশে হানা দিয়েছিল সিডর। গত মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর তার ১৫ বছর পূর্তি হয়েছে।

    একেই এই অরণ্যের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ঝড়ের তকমা দিচ্ছেন ডব্লিউডব্লিউএফ-এর সুন্দরবন প্রোগ্রাম অধিকর্তা অনামিত্র অনুরাগ দণ্ড। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, “সিডরের মতো ঝড় কিন্তু আমরা এখনো টের পাইনি। এই ধরনের ঝড়ে গাছপালার বিপুল ক্ষতি হয়। ওই ঝড় বাংলাদেশের দিকে ছিল, আমাদের দিকে আসেনি।”

    ১৮৮১ থেকে ২০০১ সালে সুন্দরবনে ঘূর্ণিঝড় ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০৪১ থেকে ২০৬০ সালের মধ্যে ঝড়ের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে ৫০ শতাংশ। তার ফলে সুন্দরবনের প্রকৃতি ও মানুষের স্থায়ী ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

    জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রাও বাড়ছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, গত এক শতকে এখানে তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। অথচ বদলের প্রক্রিয়া এতো দ্রুত হচ্ছে যে ২১০০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা বাড়তে পারে প্রায় চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। জলের তাপমাত্রা বাড়লে ভূমিক্ষয়ের সম্ভাবনাও বেশি থাকে।

    প্রকৃতির পরিবর্তনের ফলে গত দুই দশকে ১১০ বর্গ কিলোমিটার ম্যানগ্রোভ অরণ্য উধাও হয়ে গিয়েছে। যেখানে ভূমি টিকে আছে, সেখানেও ম্যানগ্রোভ বিপন্ন। এই বনভূমি হারিয়ে যাওয়ার ফলে বাঁধ দুর্বল হচ্ছে। বাঁধ সহজেই ভেঙে পড়ছে দুর্যোগের সময়। এতে নোনা জলের গ্রাসে চলে যাচ্ছে জমি, যা চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। এর ফলে ৭২ লক্ষ মানুষের বাসস্থান ক্রমশ বেঁচে থাকার জন্য কঠিন এক কুরুক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে।

    এ সবের অনিবার্য ফল স্থানীয় স্তরে কাজের সুযোগ হ্রাস। বছরের পর বছর ধরে যে এই পরিস্থিতি ঘোরালো হয়েছে, তা স্বীকার করেছেন রাজ্যের সাবেক সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, “এখানকার ছেলেরা পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে যায়। দক্ষিণ ভারত, গুজরাত, মহারাষ্ট্রে চলে যায়। খেতমজুরি থেকে আয় খুব কম। অন্যান্য জীবিকা থেকেও আয় কমছে। তাই ৬০-৭০ শতাংশ তরুণ ভিন রাজ্যে চলে যায়।”

    জিরো কার্বন অ্যানালিটিক্স-এর সমীক্ষা বলছে, দুই বাংলাতেই জল ও জমিতে লবণের পরিমাণ অনেকটা বেড়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ১৯৮৪ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে কোনো কোনো এলাকায় ছয় থেকে ১৫ গুণ বেশি লবণাক্ত হয়েছে জমি। এর ফলে জীবিকায় টান পড়েছে। গত আড়াই দশকে ১৫ লক্ষ মানুষ সুন্দরবন ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন।

    এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞানের অধিকর্তা, অধ্যাপক তুহিন ঘোষ। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, “রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। ঝড় এলে অনেকের লাভ হয়। তাই সুন্দরবন রক্ষায় না আছে সঠিক নীতি, না আছে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ। ২০০৯ সালে আয়লার পর থেকে চাল বিলি হচ্ছে। কিন্তু মানুষের দুর্দশার স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা নেই।”

    সুন্দরবনের ক্ষেত্রে বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি পরিবেশবিদদের চিন্তায় ফেলেছে। রাজ্য জীববৈচিত্র পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোককান্তি সান্যাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, “প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে গাছ ধ্বংস হয়। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী মারা পড়ে। জমি দুর্যোগের গ্রাসে চলে যায়। সব মিলিয়ে কত ক্ষতি, তা আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় আঁচ করা যাচ্ছে।”

    ক্ষতির খতিয়ান যে দুই লক্ষ কোটিরও বেশি, এমনটা আগে অনুমান করা যায়নি। এই অঙ্ক যত বাড়বে, ততই বিপন্ন হবে সুন্দরবন।

    সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী, সুন্দরবনের বর্তমান আয়তনের (দশ হাজার বর্গ কিঃ মিঃ) ষাট ভাগ রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাকীটা ভারতে। কিন্তু অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতেও সুন্দরবনের আয়তন ছিল বর্তমান আয়তনের প্রায় দ্বিগুণ। বনের উপর মানুষের সৃষ্ট অন্যায় চাপ ক্রমান্বয়ে এর আয়তন সংকুচিত করে ফেলেছে। তথ্যমতে, সুন্দরবন অঞ্চলে রয়েছে প্রায় ৪৫ লক্ষ অধিবাসী। একটি বনের জন্য জনসংখ্যাটি অস্বাভাবিকভাবে বেশী। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, কেন এবং কিভাবে এতো মানুষ এরকম একটি দুর্ভেদ্য অঞ্চলে বসতি স্থাপন করলো? এর উত্তর পেতে হলে, আমাদের চলে যেতে হবে ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনমলে, এমনকি তারও আগে।

    এই বনের দিকে প্রথম নজর পড়েছিল মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময়েই। তার রাজত্বকালে বাংলায় কৃষি সম্প্রসারণ শুরু হয়েছিল দ্রুত গতিতে। আর তখন থেকেই এর চারপাশ জুড়ে গড়ে উঠতে থাকে জনবসতি। জীবনধারণের জন্য অনেকেই চলে আসে এ দুর্গম এলাকার আশেপাশে বসতি স্থাপনের জন্য। জীবনযুদ্ধে তারা কতটুকু জয়ী হয়েছিল তা’ জানা না গেলেও, এটুকু বলা যায় যে, হেরেছে সুন্দরবন। মোগল রাজত্বকালেও এই সুন্দরবন ছিল অভেদ্য। তাই মোগলরা সুন্দরবনের তেমন একটা ক্ষতি করতে পারে নি। বরং তারা এ’র আশেপাশে বিকশিত করেছিলো তাঁত শিল্প। এর সাথে সাথে শুরু হলো তাঁতিদের বসবাস। সে সময় বাংলার তাঁত শিল্প ছিল খুবই উন্নত। মসলিন, জামদানি ও মিহি সুতি বস্ত্রের ছিল বিশ্বজুড়ে খ্যাতি। এমনকি, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পূর্বকালে শুধু দেশেই নয়, বহিঃবাণিজ্যেও বিশেষ স্থান দখল করেছিল এই বাংলার তাঁত। প্রাচীন কাল থেকেই রোম ও গ্রীসের সাথে বাংলার ছিল নৌবাণিজ্য।

    কিন্তু বাংলায় তাঁতের সেই স্বর্ণযুগ স্থায়ী হলো না বেশী দিন। পরবর্তীতে ব্রিটিশ আমলে অসম কর ব্যবস্থা, তাঁতের ওপর আরোপিত নানা অযৌক্তিক বিধি-নিষেধ এবং ব্রিটেনের শিল্প বিপ্লবের ফলে বাংলাদেশের তাঁত শিল্প হয় ধ্বংস। ইংরেজরা পরিকল্পনা করেই ত্বরান্বিত করেছে এই ধ্বংসকে।

    তাঁত ছাড়াও সে সময় সুন্দরবনের আশেপাশে বাংলার লবন উৎপাদন ছিল একটি অন্যতম শিল্প। বাংলায় এতো পরিমানে লবণ উৎপাদিত হতো যে, দেশীয় চাহিদা পুরণের পর তা’ রপ্তানী করে সমগ্র বিশ্বের লবণের চাহিদা পূরণ হতো। কিন্তু আবারও ব্রিটিশদের অতিরিক্ত কর এবং অন্য দেশের সস্তা লবণ ভারতের বাজারে প্রবেশের ফলে এই লবণ শিল্পেরও হয় ধ্বংস। এভাবে ব্রিটিশরা পরিকল্পিতভাবে সুন্দরবনের আশেপাশের বাংলার ছোট ছোট শিল্পগুলোকে ধ্বংস করে এলাকার মানুষগুলোকে করে ফেলে কর্মহীন। যে কারণে জীবিকার তাগিদে ঐ মানুষগুলো কৃষিকে অবলম্বন করতে আরম্ভ করে। ব্রিটিশদের নীল নকশার পরের ধাপ ছিল, ভূমিহীন মানুষগুলোর জন্য কৃষিকাজের জন্য জমি অধিকৃত করা। এ’রই ফলশ্রুতিতে তখন তারা সুন্দরবনকে বৃক্ষশূন্য করে চাষযোগ্য জমিতে রুপান্তরিত করে। কুটিরশিল্প ভিত্তিক এলাকাটিকে রূপান্তর করা হয় কৃষিপ্রধান অঞ্চলে। বাংলার এক সময়ের শিল্পের দক্ষ কারিগররা হয়ে যায় ভূমিহীন কৃষি মুজুর।

    ভারতবর্ষে ব্রিটিশ রাজের অবস্থান শক্তিশালী করতে বিভিন্ন রাজ্যের সাথে তাদের করতে হতো প্রায়ই যুদ্ধ। এর জন্য তাদের প্রয়োজন ছিল প্রচুর অর্থের। অর্থ যোগানের জন্য তাদের দৃষ্টি তখন পড়ে সুন্দরবনের উপর। সুন্দরবন অঞ্চলকে চাষযোগ্য জমিতে রুপান্তরিত করে রাজস্ব আয় বাড়ানো হয়। ১৭৯৩ সালে ব্রিটিশ সরকারের গভর্নর-জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিস রাজস্ব আয় আরো বৃদ্ধির জন্য বাংলা ও বিহারে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথার প্রবর্তন করেন। এই প্রথার মাধ্যমে ব্রিটিশ-অনুগত এক জমিদার-গোষ্ঠী তৈরি করা সহজ হয় তাদের। জমিদার-গোষ্ঠীর সমৃদ্ধির সাথে সাথে কৃষকদের সমৃদ্ধি হয়নি একেবারেই। জমিদার ও মধ্যস্বত্বভোগীরা খাজনা ও নানা ধরনের চাঁদার মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে কেড়ে নেয় চাষীর উদ্বৃত্ত আয়। এক পর্যায়ে চাষীরা জমিদারের খাজনা পরিশোধ করতে না পেরে হয়ে পড়ে ভূমিহীন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে জমি হারিয়ে অনেকে হয় নিঃস্ব। ১৭৭৩ সালে যশোরের ম্যাজিস্ট্রেট টিলম্যান হ্যাংকেল সুন্দরবনের একটি বৃহৎ অংশ বৃক্ষশূন্য করার এক নতুন পথ খুঁজে বের করলেন। প্রথম তিন বছর কোন রকম রাজস্ব ছাড়া, পরবর্তী তিন বছর ৫০% রাজস্ব, এবং সপ্তম বছর থেকে পুরো রাজস্ব প্রদান করার শর্তে সাধারণ মানুষকে চাষাবাদ করার অনুমতি দেওয়া হলো। এভাবে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সুন্দরবনকে মোটা রাজস্বের উৎস হিসেবে গড়ে তুলেছিলো। একের পর এক নতুন কূট-কৌশল এবং আইন প্রণয়ন করে ইংরেজরা অতি উৎসাহের সাথে বন উজাড় করে সুন্দরবনের করলো প্রচুর ক্ষতি।

    শেষ তো এখানেই নয়। ১৮৩০ সালের দিকে সুন্দরবন কমিশনার উইলিয়াম ড্যাম্পিয়ের বর্ণনায়, মেঘনা নদীর মোহনার বাকেরগঞ্জ এলাকায় প্রায় ৮৫ হাজার একর সুন্দরবনের গাছপালা কেটে ফেললে, এই বিশাল এলাকা হয়ে পড়লো বৃক্ষহীন। বনাঞ্চল ছাড়াও যে সব অঞ্চলে আগে লবণের চাষ ও তাঁতের কাজ হতো, ব্রিটিশদের ভ্রান্ত নীতিতে সেগুলোও ব্যবহার হওয়া শুরু হলো কৃষি কাজে। তাঁত ও লবন শিল্প ধ্বংস হবার কারণেই এলাকার বিপুল পরিমানের অধিবাসী বাধ্য হয়ে মেঘনার মোহনায় শুরু করে বসতি স্থাপন। এভাবেই শুরু হয় সুন্দরবনের বৃক্ষ নিধন এবং মানুষের ক্রমাগত আবাসন নির্মাণ।

    গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহাউসির আমলে কলকাতা বন্দরে হুগলি ও ভাগীরথী নদীর পলি জমার কারনে নব্যতা হ্রাস পায়। ফলে বড় জাহাজ এই বন্দরে আসা-যাওয়া করতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়। শুরু হয়, কলকাতা বন্দরের ভবিষ্যত নিয়ে আশঙ্কা। ব্যবসা বাণিজ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বিকল্প হিসেবে তৎকালীন ব্রিটিশ-ভারতের গভর্নর জেনারেল চার্লস ক্যানিং (Charles Canning) মাতলা নদীর সাথে সুন্দরবন অঞ্চলে একটি বন্দর গড়ে তোলে। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিলীন করা হয় সুন্দরবনের অগণিত বৃক্ষ। কোন রকম বাধা বিপত্তি ছাড়াই ৮,৬৫০ একর বন উজাড় করে লর্ড ক্যানিং-এর নাম অনুসারে ক্যানিং বন্দর নির্মাণ করা হয়।

    ব্রিটিশদের সুন্দরবন ধ্বংস করে বন্দর নির্মাণের সময় তৎকালীন শীর্ষ ঘূর্ণিঝড় বিশেষজ্ঞ হেনরী পিডিংটন এই বন্দর নির্মাণের তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন। পিডিংটন ছিলেন ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন শব্দটির জনক। তিনি তখন একটি চিঠিতে ইংরেজদের জানান যে, প্রতিবছর সুন্দরবনে সাইক্লোন চারপাশের এলাকাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এ বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে তিনি মাতলা নদীর উপর কোন বন্দর নির্মাণ না করার পরামর্শ দেন গভর্নর-জেনারেল ক্যানিংকে। তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, সুন্দরবনে একদিকে যেমন ভীষন লোনা পানি, অন্যদিকে তেমনি ভয়ংকর ঝড়। এখানে বন্দর নির্মাণ কোন ভাবেই উচিৎ হবে না। ইংরেজরা তখন তার পরামর্শে কর্ণপাত করে নি। এর কয়েক বছর পরই হেনরী পিডিংটনের আশঙ্কা ফলে গিয়েছিল বাস্তবে। ১৮৬৭ সালের ১ নভেস্বর আসে এক ভয়ঙ্কর হারিকেন-জলোচ্ছাস, যা সবকিছুকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সাগরের পানি উঠেছিল ১৫ ফুট উঁচুতে। ভেঙ্গে গিয়েছিল বন্দর, ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সবকিছু । অপচয় হয় অর্থের। এরপর তারা আর সুন্দরবনে বন্দর নির্মাণের কোন আগ্রহ দেখায় নি।

    এত বড় বিপর্যয়ের পরেও ইংরেজদের বন উজাড় করার কাজ কিন্তু থেমে থাকেনি। এত কিছুর পরেও ১৯১০ সালে নয় হাজার একর বন উজাড় করে একজন স্কটিশ ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠা করে জামিন্দারি এবং গোসাবা সমবায়। বাংলায় দূর্ভিক্ষের কারণে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার হাজার হাজার অসহায় মানুষ চলে আশে সুন্দরবন অঞ্চলে, বসতি স্থাপন করে সেখানে। এভাবে বিভিন্ন কারণে ধীরে ধীরে মানুষ সুন্দরবনমুখী হয়েছে সময় সময়, ক্রমাগত বেড়েছে সুন্দরবনে মানব বসতি।

    বিভিন্ন প্রাচীন ইতিহাসে সুন্দরবনের উল্লেখ আছে নানাভাবে। যেমন, বিশিষ্ট চৈনিক পর্যটক হিউয়েন সাং ৬৩৯ থেকে ৬৪৫ সাল পর্যন্ত ভারতবর্ষে অবস্থান করার সময় সুন্দরবনকে তিনি বর্ণনা করেন এভাবে, “সাগর সীমানায় নান্দনিক ফসলি নিম্নভূমি”। সুন্দরবনের কিছু এলাকায় প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরোনো বসতির সন্ধান মিলেছে। বনের নলিয়ান রেঞ্জের আদাচাই নামের বনখণ্ডে ইট, সুরকি এবং চুন দিয়ে বানানো অনেক পুরোনো বসতির ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে এখনো। সুন্দরবনে হয়তো এমন আরো অনেক অনাবৃত মূল্যবান ইতিহাস রয়েছে, যা’ খুঁজে বের করার কাজটি জরুরী।

    ব্রিটিশরা তো চলে গিয়েছে প্রায় পঁচাত্তর বছর আগেই। এখন তো আমরা স্বাধীন। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আমাদের বন্ধু সুন্দরবনকে রক্ষা করার বড় রকমের কোন পদক্ষেপ আজও নেই নি, বরং করছি উল্টোটি। মানুষের বসতি বাড়ছে দিন দিন, ট্যুরিস্ট রিসোর্টের সংখ্যা বেড়ে চলেছে ক্রমাগত। আইলা, বুলবুল এবং আম্ফানের ধ্বংস থেকে রক্ষাকারী সুন্দরবনকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। এর সাথে জড়িত রয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আমাদের রক্ষার প্রতিরোধ। ইতিহাস থেকে আমাদের এখনো নেয়া হয় নি শিক্ষা। যারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে পারে না, তাদের জন্য অপেক্ষা করছে আরো বড় বিপর্যয়। প্রকৃতির নিয়ম উপেক্ষা করে বন কেটে বসতির পর বসতি তৈরি করার মতো গর্হিত কাজ আমরা করছি অনায়াসে।সুন্দরবনের সম্পদ লুট করতে করতে ছোট করে ফেলছি আমরা এর আয়তন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বনের প্রতিরোধ ক্ষমতা হয়ে যাচ্ছে দূর্বল। ক্রমাগত সংকুচিত হয়ে আসা বনে কোনঠাসা হয়ে পড়ছে প্রাণীকুল। ভেঙে পড়ছে এ’র শত শত বছরে গড়ে উঠা ইকোসিস্টেম। আমাদের অত্যাচার থেকে লোক-শ্রুতির বনবিবিও মনে হচ্ছে রক্ষা করতে পারছে না আর সুন্দরবনকে। লোভের বশে ধ্বংস করে দিচ্ছি আমাদের প্রাকৃতিক শ্বাসনালী সুন্দরবনকে।

    এসডব্লিউ/এসএস/১৫৩০

    ছড়িয়ে দিনঃ

    আপনার মতামত জানানঃ

    State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
    Donate
    সুন্দরবন

    Related Posts

    রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র: উন্নয়নের নামে বন ধ্বংস ও উপেক্ষিত সুন্দরবন

    সুন্দরবনে প্রাচীন মানবসভ্যতা!

    সুন্দরবনকে ভালোবাসার দিন আজ; কতটা বেঁচে আছে আমাদের সুন্দরবন?

    বিজ্ঞাপন

    সর্বশেষ প্রকাশিত
    জুন ৫, ২০২৩

    গুম, খুন, মিথ্যা মামলায় জড়িত ওসি এসপিদের তথ্য সংগ্রহ করছে বিএনপি

    জুন ৫, ২০২৩

    ডিভোর্স ডুয়েল: মধ্যযুগে বিচ্ছেদের জন্য পরস্পরকে হত্যার চেষ্টা করতেন স্বামী-স্ত্রী

    জুন ৫, ২০২৩

    রুশ কারাগারের যে বর্বরতা হার মানায় দোজখকেও

    জুন ৫, ২০২৩

    মহাকাশে সবচেয়ে বড় নক্ষত্র

    জুন ৪, ২০২৩

    আট দশক ধরে স্প্যানিশ ক্যাথলিক চার্চে প্রায় হাজার শিশুকে নির্যাতন

    বিজ্ঞাপন

    সর্বাধিক পঠিত
    • যেভাবে পৃথিবী থেকে উধাও হয়েছিল রহস্যময় জনপদ আনজিকুনি
      জুন ৩, ২০২৩
      By ডেস্ক রিপোর্ট
      ১৯৩০ সালের আগের কথা, কানাডার কিভালিক অঞ্চলে ছিল এক তুষার-স্নিগ্ধ হ্রদ। নাম তার আনজিকুনি। একদিন এক অনুসন্ধিৎসু বৃদ্ধ জেলের আগমন...
    • হাত পাখায় দিলে ভোট, ভোট পাবে আল্লাহ পাক: চরমোনাই পীর
      জুন ১, ২০২৩
      By স্টেটওয়াচ ডেস্ক
      মোহাম্মদ রুবেল বাংলাদেশের গদিনশীল পীরদের মধ্যে চরমোনাই শায়েখ অন্যতম। বিশাল আশেকান গোষ্ঠীর প্রশ্নবিহীন আনুগত্য ও হাদিয়ায় টুইটুম্বুর চরমোনাইয়ের অর্থভান্ডার। এবার...
    • বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ: কেন নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র?
      মে ৩০, ২০২৩
      By ডেস্ক রিপোর্ট
      যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে লঙ্ঘন করে বা উপেক্ষা করে বলে যেসব দেশকে মনে করে তাদের বিরুদ্ধেই নিষেধাজ্ঞা বা স্যাংশন আরোপ করে তারা।...
    • জঙ্গলের গভীরে ৪১৭ টি প্রাচীন মায়া শহর আবিষ্কার
      মে ৩০, ২০২৩
      By ডেস্ক রিপোর্ট
      আমাজনের ২ মিলিয়ন বর্গমাইল আয়তনের বিশাল জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে আছে এক রহস্যময় প্রাচীন সভ্যতা, পৃথিবীর ইতিহাসে যা মায়া সভ্যতা নামে...
    • নির্দেশদাতাকেও হত্যা করতে পিছপা হয় না এআই রোবট!
      জুন ৩, ২০২৩
      By ডেস্ক রিপোর্ট
      স্টিফেন হকিং থেকে শুরু করে ইলন মাস্ক- বিশ্বের শীর্ষ কয়েকজন বিজ্ঞানী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এটি একসময়...
    আজকের ভিডিও
    https://youtu.be/1ht6kl7Mly4
    আমাদের সম্পর্কে
    আমাদের সম্পর্কে

    স্টেট ওয়াচ, বাংলাদেশের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণামূলক একটি প্রয়াস।
    বিস্তারিত...

    ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

    Donate Us!
    statewatch.net (Karigor Media Network), Hamburg, Germany. Email: statewatch.sa@gmail.com © ২০২৩ State Watch. Designed by @.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.