আওয়ামী লীগের দুর্গ বলে পরিচিত ফরিদপুরে শেষ পর্যন্ত বিএনপি সমাবেশ করেছে। এমনকি সেখানে পরিবহন ধর্মঘট উপেক্ষা করে দলের শত শত নেতা-কর্মী যোগ দিয়েছেন। ফরিদপুর শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে কোমরপুর আব্দুল আজিজ ইন্সটিটিউশন মাঠে অনুষ্ঠিত হয় বিএনপির এই গণ-সমাবেশ।
মূলত নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন, গুম ও খুনের প্রতিবাদ, দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া মুক্তি ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশের ফেরার সুযোগ তৈরির জন্য সব মামলা প্রত্যাহারসহ নানা দাবিতে দলটি এ সমাবেশের এ ধারাবাহিক কর্মসূচি শুরু করেছে। এটি শেষ হবে ঢাকার সমাবেশের মধ্য দিয়ে।
অনেকে এই ছয় কিলোমিটার হেঁটে সমাবেশ স্থলে যোগ দেন। ফরিদপুর শহরের মোড়ে মোড়ে পুলিশের সতর্ক অবস্থান দেখা গিয়েছে। বিএনপির এর আগের গণ-সমাবেশগুলোর মতো এবার ফরিদপুরেও আগের দিন থেকে গণ-পরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে ফরিদপুর শহর কার্যত কার্যত সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। শহরে ইন্টারনেট সংযোগও কাজ করছিল না।
বিএনপি নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, তাদের সমাবেশ ঠেকাতেই পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। সমাবেশে আগত নেতাকর্মীরা বলেন, “ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যেসব সমাবেশ করছে সেখানে তারা প্রশাসনের পূর্ণ সহযোগিতা পাচ্ছে। শত শত বাসে করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাদের নেতাকর্মীদের আনা হচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপি যাতে সমাবেশ সফল করতে না পারে সেজন্য পরিবহন মালিকদের দিয়ে সরকার ধর্মঘট করাচ্ছে।”
ফরিদপুর থেকে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছে, শনিবার সকাল আটটা থেকেই শহরে কোনরকম ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। মোবাইল বা ব্রডব্যান্ড, কোথাও ইন্টারনেট সেবা নেই। যদিও শুক্রবার বিকালের মধ্যেই কোমরপুরের ওই সমাবেশ স্থলে অসংখ্য নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন। তারা সেখানে খণ্ড খণ্ড মিছিল করছেন। সব মিলিয়ে সেখানে একটি উৎসবের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
সূত্র মতে, বাস ধর্মঘট থাকায় দু’দিন আগ থেকেই নেতাকর্মীরা ফরিদপুর শহরে ভিড় করেন। তাদের অধিকাংশ সমাবেশের মাঠেই রাত-যাপন করেন। সেখানেই চলে খাওয়া-দাওয়া।
ফরিদপুরকে বিএনপি তাদের সাংগঠনিক বিভাগ হিসেবে বিবেচনা করে। মূলত ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ি এই ৫টি জেলা থেকেই বেশিরভাগ নেতাকর্মী সমাবেশ স্থলে ভিড় করেন।
এসব জেলায় আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান থাকলেও বিএনপির সমাবেশে জমায়েত ছিল চোখে পড়ার মতো। এর আগে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর ও বরিশালে সমাবেশ করেছিল বিএনপি।
শনিবার সমাবেশের দিন আব্দুল আজিজ ইন্সটিটিউশন মাঠে ব্যাপক জন সমাগম দেখা যায়। সব মিলিয়ে এই সমাবেশকে সফল হিসেবে দাবি করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
সমাবেশ দুপুর ২টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মানুষের ব্যাপক জমায়েতের কারণে বেলা ১১টা থেকেই নেতারা বক্তব্য দিতে শুরু করেন। এদিকে ঢাকায় পাল্টা সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। সেখানে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, এখন বিএনপিকে তারা ছাড় দিলেও ডিসেম্বরে তাদের কোন ছাড় দেয়া হবে না।
এ ব্যাপারে বিএনপির গণ-সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির সমন্বয়ক এবং দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, আওয়ামী লীগ পাল্টা সমাবেশ করে পরিস্থিতি অস্থির করতে চাইছে।
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ কেন মাঠে থাকবে, তাদের ইস্যুটা কি? আমরা সংঘাত করতে চাই না। আওয়ামী লীগ খেলতে চায়, আওয়ামী লীগ মাঠে থাকতে চায়। তারা তো ১৪ বছর ক্ষমতায় থেকে দেশকে শোষণ করে চলেছে। এই শোষণের কারণেই দেশে অর্থনৈতিক ধস।”
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশ চলছে। যদি সংঘাতময় পরিস্থিতি হয়, এর দায়দায়িত্ব বিএনপির নেবে না। এই দায় সরকারতেই বহন করতে হবে।”
এসময় নেতাকর্মীরা দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনাসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন।
এদিকে, ফরিদপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণ-সমাবেশ শেষ হতেই অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে।
এসডব্লিউ/এসএস/১২০৩
আপনার মতামত জানানঃ