গাছও হাঁটতে পারে! শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। ইকুয়েডরের গভীর ট্রপিকাল রেইন ফরেস্টে এমন গাছের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। গাছটির নাম ক্যাশাপোনা। এর বৈজ্ঞানিক নাম Socratea exorrhiza বা walking palm।
এখন প্রশ্ন কীভাবে চলে বেড়ায় এই গাছ? স্লোভাকিয়ার রাষ্ট্রীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের এক উদ্ভিদবিজ্ঞানী এই গাছটি নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি হলেন ব্রাতিস্লাভার স্লোভাক অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সের প্যালিওবোটানিস্ট পিটার ভ্র্যানস্কি।
ইকুয়েডরের রাজধানী কুইটো থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বের বন সুমাকো বায়োস্ফেয়ার রিজার্ভ। ইউনেস্কো ঘোষিত সংরক্ষিত এ বনটিকে বলা হয় ‘হার্ট অব দ্য ইউনেস্কো’। এখানেই এক অদ্ভুত গাছের সন্ধান পেয়েছেন স্লোভাক ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সেস ব্রাতিস্লাভার জীবাশ্মবিদ পিটার ভ্র্যানস্কি।
এক দিনে প্রায় ৩ ঘণ্টা গাড়িতে আর ১৫ ঘণ্টা নৌকায় চড়ে, পায়ে হেঁটে ও খচ্চরের গাড়িতে করে জঙ্গলের গভীরে প্রবেশ করে এগুলোর দেখা পান তিনি। এগুলো এক ধরনের পাম গাছ।
এই বনের গাছগুলো জে আর আর টলকিনের মহাকাব্য ‘লর্ড অব দ্য রিংস স্যাগা’য় বর্ণিত গাছের মতো সারা বন হেঁটে বেড়ায়! বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন ভ্রসাঙ্কসি। শুরুতেই তিনি পান অনাবিষ্কৃত ৩০ মিটারের একটি জলপ্রপাত, নতুন একটি টিকটিকি ও ব্যাঙের প্রজাতি।
ভ্র্যানস্কি জানান, মাটি ক্ষয় হয়ে যাওয়ার কারণে গাছগুলোর শিকড় থেকে জন্ম নেয় নতুন নতুন শিকড়। নতুন শিকড়গুলো মাটির প্রায় ২০ মিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে এবং সেগুলো থেকে জন্ম নেয় নতুন গাছ। তিনি বলেন, ‘ঠিকমতো সূর্যের আলো এবং উর্বর মাটি থাকলে একটি গাছ জন্ম নিতে সময় লাগে প্রায় দুই বছর।’
ভ্র্যানস্কি জানান, দুই মাসের এ বিপজ্জনক অভিযানে তিনি প্রায় ১৫০ প্রজাতির নতুন জীবের সন্ধান পান। তবে এজন্য তাকে ১০ কেজি ওজন হারাতে হয়।
তিনি জানিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরের বনাঞ্চলে প্রায়ই ভূমিক্ষয় হয়। ফলে গাছের শেকড় আলগা হয়ে ভিত নড়বড়ে হয়ে যায়। তাই শক্ত মাটির জন্য তড়িঘড়ি নতুন শিকড় তৈরী করে শক্ত মাটিতে গাছটি ক্রমশ গেঁথে যেতে থাকে এবং পুরোনো শিকড় ধীরে ধীরে মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে থাকে। মূলত এক দিকে যখন সেই নতুন শিকড় শক্ত মাটিতে ক্রমশ গেঁথে যেতে থাকে, অন্য দিকে তখন পুরোনো শিকড়গুলো মাটি থেকে ক্রমশ তুলে নেয় এরা৷ এ ভাবেই গাছটি একটু একটু করে আগের জায়গা থেকে সরে যায়৷
এদের এই আনাগোনাকে অনেকে ‘মানুষের হাঁটার’ সাথে তুলনা করা হয়েছে। হুট করে অনেক দুরত্ব অতিক্রম করে না এই গাছ। প্রতিদিন দুই-তিন সেন্টিমিটার করে বছরে প্রায় কুড়ি মিটার দুরত্ব অতিক্রম করে এই গাছ। এর উচ্চতা হয় ১৫- ২০ মিটার, আর এর গোলাকার ডায়ামিটার হয় প্রায় ১৬ সেন্টিমিটার।
শোনা যায়, অন্যান্য পড়শী গাছ গায়ে হেলে পড়া একেবারেই পছন্দ করে না ক্যাশাপোনা। সেক্ষেত্রে নিজের স্থান বদল করে নেয় এই পাম গাছ।
তবে চলমান উদ্ভিদই সুমাকো বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের একমাত্র আশ্চর্য নয়৷ গাছের রকম-সকম নথিবদ্ধ করতে গিয়ে বনবাদাড়ে ঘুরতে ঘুরতে মেরুদণ্ডী পর্যায়ভুক্ত দু’টি নতুন ধরনের প্রাণীর অস্তিত্বও আবিষ্কার করেছেন ভ্র্যানস্কি ও গার্সিয়া৷ একটি গিরগিটি জাতীয়, অন্যটি নতুন এক প্রজাতির ব্যাঙ৷ আর ভ্র্যানস্কি জানান, যে দিন হঠাৎ জঙ্গলের মধ্যে একটি জায়গায় প্রায় দেড়শো রকমের আরশোলার সন্ধান পেয়েছিলেন, সেই দিনটির অভিজ্ঞতা তিনি হয়তো কোনও দিনই ভুলতে পারবেন না৷
কারণ, গোটা ইউরোপ মহাদেশ ধরে হিসেব করলেও আরশোলার এতগুলি জীবিত প্রজাতি পাওয়া যাবে না৷ আরশোলাগুলোর রঙের বাহারও তাক লাগানো৷ কোনওটা অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে, কোনওটা আবার পাতার সঙ্গে নিজেকে এমন নিখুঁত ভাবে মিশিয়ে ফেলতে পারে যে, এক নজরে আলাদা করে ঠাহর করাই ভার৷
এসডব্লিউ/এসএস/১১৩৭
আপনার মতামত জানানঃ