সর্বনিম্ন কত টাকায় তিন বেলার খাবার জোটে? কত টাকায় জোটে শিক্ষা কিংবা চিকিৎসা? নিম্ন আয়ের মানুষেদের এই হিসাবগুলো কখনোই মেলে না সরকারি হিসাবের সঙ্গে। পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলে মূল্যস্ফীতিও বাড়ে। এটা অর্থনীতির হিসাব, কিন্তু আয়ের অভাবে যে দিনমজুর বাবা ঘরে ফেরে না, তার কাছে মূল্যস্ফীতি ক্ষুধার চাইতে বড় নয়।
নিম্নবিত্ত পরিবারের অবস্থা যে শুধু শোচনীয় তা নয়, পাশাপাশি এই সকল মানুষদের জীবনও হয়ে দাঁড়িয়েছে শোচনীয়। দিন দিন তাদের অবস্থা দিশেহারা অবস্থায় পতিত হচ্ছে। করোনার কারণে আগে থেকেই দ্রব্যমূল্য অধিকাংশ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ মূল্য পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
যাদের আয় ৫০০০ থেকে ১৫০০০ টাকার মধ্যে, তাদের পক্ষে বাসাভাড়াসহ প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য কেনাও অসম্ভব হয়ে উঠেছে। তার ওপর করোনা ও অন্যান্য কারণে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, আবার অনেকের আয়-রোজগারও আগের চেয়ে কমেছে।
ফলে টিকে থাকতে অনেকে ঝুঁকছেন ঋণের দিকে। হিসেব বলছে, বর্তমান সমাজে টিকে থাকতে নিম্ন আয়ের ৫৫ শতাংশ পরিবার ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে।
একটি শীর্ষ জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ছয় মাসে আয় কমেছে নিম্ন আয়ের ৪২ শতাংশ পরিবারের। যার মধ্যে সিলেটে নিম্ন আয়ের মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
খাদ্য, স্বাস্থ্য ও জ্বালানির ব্যয় বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দারিদ্র্য বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়ছে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে ঝুঁকি এড়াতে বা টিকে থাকতে ঋণ নিচ্ছে প্রায় ৫৫ শতাংশ পরিবার। সব মিলিয়ে দেশের প্রায় ৬৮ শতাংশ পরিবার খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে।
এদিকে, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডাব্লিউএফপি) এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছয় মাসের ব্যবধানে সিলেটের ৫৭ শতাংশ ভাগ নিম্ন আয়ের পরিবারের আয় কমে গেছে। এছাড়া বরিশালের ২৬ শতাংশ এবং সিলেটের ৩৫ শতাংশ পরিবার মাঝারি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার শিকার।
এই দুই বিভাগে আর্থিক ও খাদ্য সংকট বৃদ্ধির কারণে সঞ্চয় ভাঙার চাপে রয়েছে ৭৫ শতাংশ পরিবার। সব মিলিয়ে দেশের প্রায় ৬৮ শতাংশ পরিবার খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। এ ছাড়া সামুদ্রিক খাবারসহ পুষ্টিকর উপাদান সমৃদ্ধ খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে পারছে না ৮৩ শতাংশ পরিবার।
সংস্থাটির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গেল ছয় মাসে ৮ বিভাগের ৮৮ শতাংশ মানুষ খাদ্যের চড়া দামকে বড় আঘাত হিসেবে উল্লেখ করেছে। এছাড়াও রোগ ও চিকিৎসা ব্যয়, তেলের দাম ও পরিবহন ব্যয় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ-এসব জিনিসকেও বড় আঘাত হিসেবে মনে করছেন তারা।
এদিকে, চট্টগ্রামের মানুষ খাদ্য মূল্যস্ফীতির চাপ সবচেয়ে বেশি অনুভব করছে বলে জানা গেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতির চাপে আছে বিভাগটির ৯৩ শতাংশ পরিবার। এছাড়া একই চাপ অনুভব করছে বরিশালের ৯১ শতাংশ ও খুলনার ৮৯ শতাংশ পরিবার।
এছাড়া উক্ত প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ৪২ শতাংশ পরিবারের আয় কমে যাওয়ার কারণে এই ছয় মাসে মানুষের জীবনযাত্রা ও খাদ্য পরিস্থিতির মান কমে গেছে। এর মধ্যে ৩ শতাংশ পরিবারের আয় বিপজ্জনক মাত্রায় কমেছে; উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে ১৮ শতাংশ পরিবারের এবং সামান্য পরিমাণে কমেছে ২১ শতাংশ পরিবারের।
মূলত খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে বহুমুখী মূল্যবৃদ্ধি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগবালাইয়ের প্রকোপ বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য ব্যয় বৃদ্ধিকেই দায়ী করছেন জরিপে অংশগ্রহণকারীরা।
এসডব্লিউএসএস১৯৪০
আপনার মতামত জানানঃ