ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমে সুষ্ঠুভাবে ভোট করতে যে চ্যালেঞ্জের কথা নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, সেটিই দেখা গেল গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে। আঙ্গুলের ছাপে ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর গোপন কক্ষে অবস্থান করে অন্য কেউ ভোট দিয়ে দেয়ার অভিযোগ আসতে থাকে সকাল থেকে।
বর্তমান কমিশন ভোট সুষ্ঠু করতে যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তার মধ্যে একটি হলো সব কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন। এই আসনে ১৪৫ টি কেন্দ্রের প্রতিটির গোপন কক্ষ ছাড়া সব কক্ষে মোট ১ হাজার ২৪২টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছে।
এই ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ঢাকায় বসে পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থাও করেছে নির্বাচন কমিশন। এতে দেখা যায়, বিভিন্ন কেন্দ্রে অননোমোদিত ব্যক্তিরা অবস্থান নিয়ে ভোটারদেরকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। এই চিত্র স্পষ্ট হওয়ার পর একে একে বিভিন্ন কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের সংখ্যা গিয়ে ঠেকে ৫০এ।
এদিকে, বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ভোট পর্যবেক্ষণের মনিটরিং সেলে বসে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ভোটের পরিস্থিতি নিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি মনে করেন, এই নির্বাচন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
আমরা দেখতে পাচ্ছি, আপনারাও দেখতে পাচ্ছেন। গোপন কক্ষে অন্যরা ঢুকছে, ভোট সুশৃঙ্খলভাবে হচ্ছে না। তবে কেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল, তা আমরা এখনো বলতে পারব না।’
সিইসি বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে অনেকটাই। আইন ভঙ্গ করে গোপন কক্ষে প্রবেশ করে ভোট দিয়ে দিতে আমরা সচক্ষে দেখেছি।’
নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে কেন চলে গেল, এ রকম এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে অনেকটা। আমরা দেখতে পাচ্ছি, আপনারাও দেখতে পাচ্ছেন। গোপন কক্ষে অন্যরা ঢুকছে, ভোট সুশৃঙ্খলভাবে হচ্ছে না। তবে কেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল, তা আমরা এখনো বলতে পারব না।’
পুরো নির্বাচন বন্ধের আশঙ্কা আছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে সিইসি বলেন, ‘কমিশন যদি মনে করে নির্বাচন সঠিকভাবে হচ্ছে না, তাহলে একটি কেন্দ্র বা সব কেন্দ্রে নির্বাচন বন্ধ করার দায়িত্ব কমিশনকে দেওয়া হয়েছে। সেই বিধানের আলোকে আমরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনাদের জানাব।’
নির্বাচনে যারা অনিয়ম করছেন, সে জন্য কী অ্যাকশন নেওয়া হবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে সিইসি বলেন, তারা প্রাথমিক পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ ব্যাপারে পুলিশ, জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন।
ইভিএম নিয়ে অভিযোগ এসেছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে সিইসি বলেন, ‘ইভিএমের কোনো দোষত্রুটি দেখতে পাচ্ছি না। মানবিক আচরণের ত্রুটির কারণে এমনটা হচ্ছে।’ একই ধরনের প্রতীক দেওয়া গেঞ্জি পরে অনেককে ভোট দিতে দেখেছেন বলে জানান সিইসি। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এসব কাজ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তারাই ভোটকেন্দ্রের ডাকাত কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে সিইসি বলেন, ‘এরাই ডাকাত। এরাই দুর্বৃত্ত। যারা আইন মানেন না, তাদেরই আমরা ডাকাত বলতে পারি, দুর্বৃত্ত বলতে পারি। আমাদের সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। নির্বাচন কমিশন এখানে বসে সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারবে না।’
গাইবান্ধা-৫ আসনে ভোটার আছেন মোট তিন লাখ ৩৯ হাজার ৯৮ জন। উপ-নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচজন প্রার্থী।
সকাল ৮টায় শুরু হওয়া এ ভোট একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলার কথা।
এ আসনের সংসদ সদস্য ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া গত ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নিয়ম অনুযায়ী এরপর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
নৌকার মার্কার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন চার জন। এরা হলেন লাঙ্গল নিয়ে জাতীয় পার্টির এ এইচ এম গোলাম শহীদ রনজু, কূলা প্রতীকে বিকল্পধারা বাংলাদেশের জাহাঙ্গীর আলম, আপেল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ (আপেল) ও ট্রাক প্রতীকে আরেক নির্দলীয় প্রার্থী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
তারা সবাই একজোট হয়ে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন জোর করে ভোট নিয়ে নেয়ার অভিযোগ এনে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশনকে যতই ক্ষমতা দেয়া হোক না কেন, তার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। প্রশাসন নিরপেক্ষ না থাকলে কখনোই সুষ্ঠু ভোট হতে পারে না। কারণ সবকিছুতেই রাজনৈতিক ছত্রছায়া থাকে। পুলিশ থেকে শুরু করে রিটার্নিং অফিসার। নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের আস্থা ফেরাতে পারেনি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫২৭
আপনার মতামত জানানঃ