মহাকাশ নিয়ে মানুষ গবেষণা করে সামান্য কিছুই জানতে পেরেছে। গবেষকরা চাঁদ বা মঙ্গল গ্রহে প্রাণী বসবাসের উপযোগী পরিবেশ আছে কিনা বা পরিবেশ তৈরি করা যায় কিনা সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে।
চাঁদের বুকে কোনো উদ্ভিদ নেই। এখন পর্যন্ত মানুষ চাঁদের বুকে উদ্ভিদের অস্তিত্ব খুঁজে বের করতে পারেনি।
খুঁজে পায়নি তাতে কি, তাই বলে কি চাঁদে উদ্ভিদ থাকবে না? এমন অবাস্তব ধারণার বাস্তব রূপ দিতে অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা নতুন এক অভিযানের অংশ হিসেবে ২০২৫ সাল নাগাদ চাঁদে গাছ লাগানোর চেষ্টা করছেন।
এএফপির খবরে বলা হয়, আজ শুক্রবার(০৭ অক্টোবর) এ–সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে চাঁদের বুকে মানুষের বসতি স্থাপনের উপায় বের করতে এ গবেষণা সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।
কুইন্সল্যান্ড প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ব্রেট উইলিয়ামস বলেন, ইসরায়েলের বেসরকারি চন্দ্রাভিযানের অংশ হিসেবে বেরেশিট ২ মহাকাশ যানে করে চাঁদে বীজ পাঠানো হবে। মহাকাশ যানটি চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের পর বীজগুলো একটি বদ্ধ জায়গায় রেখে পানি দেওয়া হবে। এরপর এগুলোর অঙ্কুরোদ্গম এবং বিকাশ পর্যবেক্ষণ করা হবে।
প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও কোন গাছ বেশি সময় ধরে টিকে থাকতে পারে এবং কত দ্রুত অঙ্কুরিত হতে পারে, তার ভিত্তিতে এই চন্দ্রাভিযানের জন্য উপযোগী গাছের বীজ বাছাই করা হবে। অস্ট্রেলিয়ার এক প্রকারের দীর্ঘজীবী ঘাসকে এ ক্ষেত্রে বেছে নেওয়া হতে পারে। সুপ্ত অবস্থায় এ ঘাস পানি ছাড়াই টিকে থাকতে পারে।
এক বিবৃতিতে গবেষকেরা বলেন, ‘চাঁদে খাদ্য, ওষুধ ও অক্সিজেন উৎপাদন প্রচেষ্টার আগের ধাপের প্রকল্প এটি। চাঁদের বুকে মানুষের বসতি স্থাপনের ক্ষেত্রে এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
ক্যানবেরায় অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক কেইটলিন বার্ট মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্য নিরাপত্তাজনিত যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, তা মোকাবিলার ক্ষেত্রেও এ গবেষণা সহায়ক হবে।
মহাকাশ যানটি চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের পর বীজগুলো একটি বদ্ধ জায়গায় রেখে পানি দেওয়া হবে। এরপর এগুলোর অঙ্কুরোদ্গম এবং বিকাশ পর্যবেক্ষণ করা হবে।
বার্ট বলেন, ‘চাঁদে উদ্ভিদ জন্মানোর পদ্ধতি যদি আবিষ্কার করা যায়, তবে পৃথিবীতে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কিছু পরিমণ্ডলেও খাদ্য জন্মানোর জন্য একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করা যাবে।’
লুনারিয়া ওয়ান নামের একটি সংস্থা প্রকল্পটি পরিচালনা করছে। অস্ট্রেলিয়া ও ইসরায়েলের বিজ্ঞানীরা এ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত।
চীনের চেষ্টা
এর আগেও চীনের নভোযান ‘চ্যাং আ ফোর’ বিশেষ ক্যাপস্যুলে করে কিছু উদ্ভিদের বীজ চাঁদে নিয়ে যায়।
বিশেষ ব্যাবস্থায় সেই বীজগুলো রোপনও করা হয় সেখানে। সেগুলো ছিল তুলাগাছের বীজ। সময়ের আবর্তে সেগুলো থেকে জন্ম নেয় চারাগাছ। আর সেই সাথে সৃষ্টি হয় এক নতুন ইতিহাস। এই নীলাভ গ্রহের বাইরে অন্য এক ভূখণ্ডে এই প্রথম কোথাও রোপন করা বীজ থেকে জন্ম নিল গাছ! তাইতো এই গাছকে নিয়ে মানুষের মনে কৌতুহলের শেষ ছিল না। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল এই দেখতে যে শেষ পর্যন্ত কি হাল হয় এই গাছের।
কিছুকাল পরে আসল মন খারাপ করার মত এক সংবাদ! গাছটি আর নেই! নানা প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াই করেও এটি শেষমেশ টেকেনি। চাঁদের যে প্রতিকূল পরিবেশ তা গাছের পক্ষে সহ্য করা অসম্ভব ছিল।
যে কারণে বাঁচানো যায়নি
প্রথমেই যে কারণটা আসে তা হলো চাঁদের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা। এমন এক জায়গায় গাছটি লাগানো হয়েছিল যেখানে টানা দুই সপ্তাহ দিনের আলো আর দুই সপ্তাহ রাতের অন্ধকার থাকে। তাই তো সেখানে তাপমাত্রার পরিবর্তনটাও নাটকীয়। যখন সূর্যের আলো থাকে তখন তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে যায়। এই তাপমাত্রায় পানি আর পানি থাকে না, হয়ে যায় বাষ্প।
অন্যদিকে সূর্য না থাকলে তাপমাত্রা নেমে যায় হিমাঙ্কের নিচে যা ১৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্তও হতে পারে। তাহলে সেখানে লাগানো নিরীহ গাছের পক্ষে হঠাৎ এই পরিবর্তন সহ্য করা একেবারেই অসম্ভব।
এর পরের কারণটা নিম্নচাপ। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের চাপের সাথে জীবজগৎ অভ্যস্ত। কিন্তু চাঁদের বায়ুমণ্ডল নাই বললেই চলে। তাই সেখানে পর্যাপ্ত বায়ুর চাপও নেই। তার ওপর নানা ধরণের ক্ষতিকর মহাজাগতিক রশ্মির উপস্থিতি তো আছেই সেখানে। ফলে পর্যাপ্ত বায়ুর অভাবে এই রশ্মিগুলো মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দেয় গাছের টিকে থাকার জন্য।
এছাড়া পৃথিবী থেকে চাঁদে বীজগুলো নেয়ার সময় তাদের ওপর ধকলও কম যায়নি। মহাকর্ষের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড চাপ নিয়ে পৃথিবী পার হতে হয়েছে। পৃথিবী থেকে চাঁদ পর্যন্ত একদম অসুরক্ষিত শূন্যস্থানও পাড়ি দিতে হয়েছে।
গাছটি জন্মাতে ও বাঁচাতে সূর্যের আলো প্রয়োজন ছিল। তা পায়নি বলেই এটি মারা গেছে। বরফে জমে যাওয়া থেকে রক্ষা করা গেলে হয়তো গাছটি বেঁচে যেত।
তবে এবার অস্ট্রেলিয়া ও ইসরায়েলের বিজ্ঞানীরা চাঁদের এহেন প্রতিকূল পরিবেশ মাথায় নিয়েই চাঁদে বৃক্ষরোপনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। যদি চাঁদের বুকে বৃক্ষরোপণ সম্ভব হয় তবে সেটা হবে পৃথিবীর ইতিহাসে আশ্চর্য এক ব্যাপার!
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২৩৮
আপনার মতামত জানানঃ