ভাইরাস প্রতিনিয়তই নিজেকে পরিবর্তন করে। এমনকি সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জাও পরিবর্তন হয়। তাই কোভিড-১৯ ভাইরাসের সদা পরিবর্তনে অতোটা আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। আশ্চর্যটা তখনই হয় যখন ভাইরাসের নতুন পরিবর্তিত রুপটা ভয়ানক আচরণ নিয়ে হাজির হয়। কোভিড-১৯ ও তেমনি একটি ভাইরাস। এখন কোভিড-১৯ ভাইরাসও পরিবর্তিত হয়ে আরেকটি রুপে উপস্থিত হয়েছে বৃটেনে, যে রুপ দেখে উদ্বেগ হবার যথেষ্ট কারণ আছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
নতুন এই ভাইরাসকে ডাকা হয় VUI-202012/01 (the first Variant Under Investigation in December 2020)। ধারণা করা হয়, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে রাজধানী লন্ডনের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে এই ভাইরাসের উপস্থিতি প্রথম আবিষ্কার হয়। আর কর্তৃপক্ষের নজরে আসে ডিসেম্বরের ১৭ তারিখে যখন নতুন ভাইরাসটি ততক্ষণে তাঁর কুৎসিত রুপ দেখাতে শুরু করেছে। তখন থেকে ভাইরাসটি দ্রুত ছড়াতে থাকে এবং সর্বত্র নিজের কর্তৃত্ব ধরে রাখছে।
করোনাভাইরাসের মহামারি শুরুর পর থেকেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, অন্য যে কোন ভাইরাসের মতো করোনাভাইরাসের এই নতুন ভাইরাসটিও মিউটেশনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হতে পারে। তার বৈশিষ্ট্য এবং আচরণে পরিবর্তন ঘটতে পারে। লন্ডন এবং আশে-পাশের অঞ্চলের ভাইরাসটি নতুন করোনাভাইরাসের এরকম এক পরিবর্তিত রূপ বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
যেটি গবেষকদের অবাক করেছে, তা হলো, এই ভাইরাসটি অনেক বেশি সহজে এবং দ্রুত ছড়াচ্ছে। আগেরটির তুলনায় এই নতুন করোনাভাইরাস ৭০ শতাংশ বেশি হারে ছড়াচ্ছে। ব্রিটিশ সরকারকে যে শুক্রবার আচমকা আবারও কঠোর লকডাউন জারি করতে হলো, তার পেছনে এটাই কারণ। এটি সরকারের মধ্যে যথেষ্ট উদ্বেগ তৈরি করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা বলছে, এই নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস এখন নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক এবং অস্ট্রেলিয়াতেও নাকি পাওয়া গেছে। এটা নিয়ে তারা তাই ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
নতুন এই ভাইরাসের সংক্রমণ যেন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য লন্ডনসহ ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বের একটি বড় অংশ জুড়ে নতুন করে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
সংক্রমণ বাড়তে থাকায় শনিবার কার্যকরী লকডাউন জারি করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ইংল্যান্ডের প্রায় দেড় কোটির বেশি মানুষ লকডাউনের আওতায় থাকছে বলে জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, লন্ডন এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে নতুন করে ৪ মাত্রার লকডাউন জারি থাকবে এবং ওই এলাকার লোকজনকে বাড়িতেই অবস্থান করতে হবে। তবে প্রয়োজনীয় কাজে তারা বাইরে যাওয়ার অনুমতি পাবেন বলে জানানো হয়েছে।লকডাউনের আওতায় অপ্রয়োজনীয় সব ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনোদন বন্ধ থাকবে।
অপরদিকে, যুক্তরাজ্যে করোনার নতুন একটি রূপের সন্ধান মিলেছে এমন সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর দেশটির সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে নেদারল্যান্ডস। যুক্তরাজ্য থেকে নেদারল্যান্ডসে আসা যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা আগামী ১ জানুয়ারি পর্যন্ত বহাল থাকবে।নেদারল্যান্ডসের কর্তৃপক্ষ জানায়, চলতি ডিসেম্বরের শুরুতে দেশটিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের যে ধরন পরিলক্ষিত হয়েছে, তা যুক্তরাজ্যে পাওয়া এই ভাইরাসের প্রকৃতির অনুরূপ। এমন পরিস্থিতিতে একেবারে অপরিহার্য না হলে দেশবাসীকে ভ্রমণে বের না হওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এসডব্লিউ/কেএইচ/০৯৩০
আপনার মতামত জানানঃ