ভারত থেকে স্থলপথে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের ঢোকার সময় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গণধর্ষণের শিকার হলেন এক নারী।
বৃহস্পতিবার(২৫ আগস্ট) স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টার পর পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার জিতপুর সীমান্ত এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।
শুক্রবার বিকেলে বাগদা থানায় ওই নারীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সন্ধ্যায় বিএসএফের ৬৮ নম্বর ব্যাটালিয়নে কর্মরত কনস্টেবল আলতাফ হোসেন এবং এএসআই এস পি চেরোকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে ওই তরুণীকে সীমান্তের কাছাকাছি দেখা গিয়েছিল। এরপর ওই দুই বিএসএফ সদস্য তাকে বাগদা সীমান্তের জিতপুর বিওপি’র কাছেই তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ উঠেছে। তার অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেপ্তার হয়েছেন দুই সদস্য।
পুলিশ সূত্রে বলা হয়েছে, বসিরহাটের বাসিন্দা ২৩ বছরের ওই নারীর কাছে পাসপোর্ট, ভিসা কিছুই ছিল না। শিশু কোলে নিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন তিনি। তখন কর্মরত ওই ২ জওয়ান তাকে আটকে দিয়ে বিএসএফ ক্যাম্পের কাছাকাছি চাষের ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে কোলের শিশুকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে ধর্ষণ করেন। এমনটাই অভিযোগ করেছেন সেই নারী।
বনগাঁর পুলিশ সুপার তরুণ হালদার বলেন, ‘ওই নারীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্ত বিএসএফের দুই জওয়ানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযোগকারীর জবানবন্দি নেয়া হয়েছে।’
এই ঘটনায় বনগাঁ জেলার তৃণমূল সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘যাদের ওপর সুরক্ষার দায়িত্ব, তারাই যদি ধর্ষণের ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন, তাহলে সীমান্তে নিরাপত্তা দেবে কে? এই ঘটনায় বোঝা যায়, সীমান্তে বিএসএফ কী করে বেড়ায়। আসলে কেন্দ্রীয় সরকার যেরকম উচ্ছৃঙ্খলতার সঙ্গে চলছে, তার প্রভাব পড়েছে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোর ওপরেও। ধৃতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।’
বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি দিলীপ ঘোষ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এর আগে কাশ্মীরে সেনার বিরুদ্ধে একাধিক এ ধরনের অভিযোগ ছিল। বেশির ভাগই মিথ্যা। তবে এই ঘটনাটি জানি না। সত্যি নাকি মিথ্যা। যদি সত্যি হয়ে থাকে, তবে তা ভয়ংকর অপরাধ। উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত।’
বর্তমানে সেই নারীর অবস্থা সংকটজনক। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আটক দুই বিএসএফ জওয়ানকে শনিবার বনগাঁ মহাকুমা আদালতে তোলা হবে।
এর আগেও ভারত থেকে স্থলপথে দেশে ফেরার সময় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হেফাজতে থাকা দুই বাংলাদেশি নারীর একজনকে শ্লীলতাহানী ও অন্যজনকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল ভারতের এক বিএসএফ জওয়ানের বিরুদ্ধে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গাইঘাটা থানার ঝাউডাঙ্গা সীমান্ত এলাকায় এক বাংলাদেশি নারী ও তার বান্ধবী দালালের মাধ্যমে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে ফেরার পথে বিএসএফের হাতে আটক হন। তাদের আটক করে বিএসএফ। আটকের পর ওই দুই নারীকে বিএসএফের ১৫৮ নম্বর ব্যাটালিয়নের ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন বিএসএফের সাব ইন্সপেক্টর রামেশ্বর কয়াল। তার নির্দেশে বিএসএফ সদস্যরা অভিযুক্ত দালালকে ধরতে অভিযানে বের হন। সে সময় ক্যাম্পে অবস্থানকারী রামেশ্বর কয়াল এক নারীকে ধর্ষণ করেন এবং অন্য নারীকে শ্লীলতাহানি করেন। ধর্ষণের পর ওই দুই নারীকে ছেড়ে দেন রামেশ্বর কয়াল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের সন্ত্রাসী আচরণ বিশ্বের অন্যান্য সীমান্তের চেয়েও জগন্য! সীমান্তটিতে প্রায়ই অকারণে নিরীহ সাধারণ মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলা হচ্ছে। যা মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘন। বিএসএফের এহেন কাণ্ডে বহু বছর ধরেই সীমান্ত নিয়ে দুই দেশে আলোচনা সমালোচনা চলছে। এসবের মধ্যে গণধর্ষণের ঘটনা বিএসএফ নিয়ে ভারতকে আরও ভাবার জন্য দাবি জানিয়েছেন মানবাধিকারকর্মীরা। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনার আহবান জানিয়েছেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮১৯
আপনার মতামত জানানঃ