প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে নির্বাচনে কারচুপি-জালিয়াতি ও অর্থসংশ্লিষ্ট গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ তুলে এর তদন্ত করতে রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক। শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘নাগরিকসমাজ’ গণমাধ্যমের কাছে তাদের দাবিগুলো প্রকাশ করেন।
৪২ জন নাগরিকের পক্ষে ওই চিঠি পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক, যিনি নিজে এক সময় ইসির আইনজীবী ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে শাহদীন মালিক বলেন, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এই ইসি যা করেছে তা গুরুতর অসদাচরণ। সাংবিধানিক পদে থেকে যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছে তা অতীতের সব রেকর্ডকে হার মানিয়েছে। তাই তাদের অনিয়ম দুর্নীতি ও সমংবিধান লঙ্ঘনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত যদি তাদের আত্মসম্মানবোধ থাকে তাহলে তারা তাদের পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন বলে বিশিষ্ট নাগরিকরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
শাহদীন মালিক বলেন, ‘আমরা সবাই মনে করেছি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর নির্বাচন কমিশন যেসব কার্যকলাপ করেছে সেগুলো গুরুতর অসদাচরণ। সাংবিধানিক পদে যারা আছেন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করার ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের। দুদক বা পুলিশ এটা করতে পারবে না। রাষ্ট্রপতি এ নির্দেশ দিতে পারেন। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতিকে অভিযোগ জানিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে তদন্ত হওয়া উচিত। আমরা আশা করছি, গুরুতর অসদাচরণের দায়ে তারা দোষী হবেন। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তাদের পদ থেকে অপসারণ করবেন।’
তিনি বলেন, ‘এই কমিশনের আমলে দেশে নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, গণতন্ত্র ভেঙে পড়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য রাষ্ট্রপতি তাদের অপসারণ করবেন আমরা এই দাবি জানাচ্ছি।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন যেভাবে আর্থিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে, আগে কখনও দেখা য়ায়নি। তারা আগের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। নির্বাচন কমিশনের নাম অবমাননা ও কলঙ্কিত করেছে। রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছি। একইসঙ্গে সরকার প্রধানের কাছে যাবো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছেও আবেদন করবো। যতদিন সিদ্ধান্ত না হয় ততদিন সিইসি ও কমিশনারা স্বেচ্ছায় দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারেন, কেউ কেউ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে পারেন আমরা আশা করবো।’
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এই ইসির উচিত পদত্যাগ করা।তারা সংবিধান, দেশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তাই সংবিধান লঙ্ঘন, শহীদদের রক্ত, বঙ্গবন্ধু ও সংবিধানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে অবমাননা ও কলঙ্কিত করার কারণে তাদেরকে অপসারণ করে বিচারের আওতায় আনা জরুরি।’
তিনি বলেন, তাদের সামান্যতম আত্মসম্মান থাকলেও তাদের উচিত অন্তত তদন্ত প্রতিবেদনে নির্দোষ না হওয়া পর্যন্ত বিজয়ের মাসে সেচ্ছায় সরে দাঁড়ানো।’
চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিভিন্ন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করে আসা অবসরপ্রাপ্ত সচিব আকবর আলি খান, অবসরপ্রাপ্ত মহা হিসাব-নিরীক্ষক এম হাফিজউদ্দিন খান, মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী।
সাবেক সচিব আবদুল লতিফ মণ্ডলও একই চিঠি প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়ার কথা জানান।
অগণতান্ত্রিক দেশ চেনার উপায়
[soliloquy id=”2648″]
এসডব্লিউ/কেএইচ/১৭৫০
আপনার মতামত জানানঃ