গত কয়েকদিন ধরেই বাজারে ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি ডিমের দামে বেশ অস্থিরতা চলছে। দেশের প্রান্তিক খামারি ও ডিলারদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ, একটি মাফিয়া চক্র গত ১৫ দিনে ডিম ও মুরগির বাজার থেকে ৫১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। চক্রটি পরিকল্পিতভাবে ডিম, মুরগি ও বাচ্চার দাম বাড়িয়ে বিপুল অংকের টাকা লোপাট করেছে। মাত্র গত ১৫ দিনে তারা এ টাকা হাতিয়ে নেয়।
গত শনিবার (২০ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াস খন্দকার, সহ-সভাপতি বাপ্পি কুমার দেবসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ, ডিম, মুরগি ও বাচ্চার দাম পরিকল্পিতভাবে বাড়িয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মাফিয়া চক্রটি। ১০ থেকে ১২টি বড় কোম্পানি মিলে এই চক্র গড়ে উঠেছে। তারা দেশের প্রান্তিক খামারিদে ধ্বংস করে দিতে চাইছে।
সংবাদ সম্মেলনে নেতারা বলেন, কোম্পানিগুলো গত ১৫ দিনে ডিমের দাম বাড়িয়ে বাড়তি মুনাফা করেছে ১১২ কোটি টাকা। পাশাপাশি বাচ্চার দাম বাড়িয়ে লুটে নিয়েছে ২৩৪ কোটি টাকা। ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়িয়ে লুটে নিয়েছে ১৭২ কোটি টাকা। এই সিন্ডিকেটে জড়িত রয়েছে পোল্ট্রি খাতের ১০-১২ টি দেশি-বিদেশি কোম্পানি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার। তিনি বলেন, দেশে পোল্ট্রি খাতটি এখন মাফিয়া চক্রের হাতে চলে গেছে। কাজী ফার্মস, প্যারাগন, সিপি, নারিশ, ৭১, আফিল, সাগুনাসহ ১০ থেকে ১২টি বড় কোম্পানি যৌথভাবে এই মাফিয়া চক্র তৈরি করেছে।
চক্রটি সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে সারাদেশে প্রান্তিক খামারিদের ধ্বংস করতে চাইছে। এরই মধ্যে তাদের পরিকল্পিত চক্রান্তে সারাদেশে প্রায় অর্ধেক প্রান্তিক খামার বন্ধ হয়ে গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে সুমন হাওলাদার বলেন, ‘দেশে পোল্ট্রি খাতে মাফিয়া চক্রের থাবায় প্রায় অর্ধেক প্রান্তিক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। আর যারা কষ্ট করে এখনও টিকে আছে, তারা ডিম ও মুরগি উৎপাদন করলেও দাম নির্ধারণ করতে পারে না। বর্তমানে দেশে ডিম ও মুরগির বাজারে যে অস্থিরতা চলছে তা বড় কোম্পানিগুলো জেনেশুনে তৈরি করেছে।’
সুমন হাওলাদার জানান, বর্তমানে এক বস্তা ফিড প্রান্তিক খামারিকে কিনতে হলে লাগে ৩৩০০ টাকা, কিন্তু কোনো খামারি তাদের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং করলে ওই বস্তা পাওয়া যায় ২৫০০ টাকায়।
অর্থাৎ তারা বস্তা প্রতি ফিডে লাভ করছে ৮০০ টাকা। তারা প্রতিটি ডিমে লাভ করছে তিন টাকা এবং প্রতিটি ব্রয়লারের বাচ্চা বিক্রি করে লাভ করছে ২০ থেকে ২২ টাকা।
পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে দৈনিক ডিমের চাহিদা চার কোটি পিস। এর মধ্যে বড় কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আসে আড়াই কোটি। প্রতি ডিমে তিন টাকা করে বেশি নিলে প্রতিদিন তারা সাত কোটিরও বেশি টাকা অবৈধভাবে লাভ করেছে। অর্থাৎ গত ১৫ দিনে তারা ডিমের বাজার থেকে ১১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
একইভাবে ব্রয়লার মুরগির ক্ষেত্রেও সরবরাহ সংকট তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিদিন ১৯ কোটি ৫০ লাখ কেজি মজুত সংকট তৈরি করে পরবর্তীতে প্রতি কেজিতে ১৫ টাকা বাড়তি দাম নেয়া হয়েছে। আর এভাবে গত ১৫ দিনে ১৭২ কোটি টাকার অতিরিক্ত মুনাফা করেছে বড় কোম্পানিগুলো।
প্রান্তিক খামারিদের এই সংগঠন বলছে, প্রতিটি ব্রয়লারের বাচ্চা বিক্রি করে বাড়তি ২০ থেকে ২২ টাকা বাড়তি লাভ করছে। দিনে এক কোটি ৩০ লাখ বাচ্চা বিক্রি থেকে গড়ে ১২৯ টাকা বেশি নেয়া হয়েছে। এভাবে গত ১৫ দিনে বড় কোম্পানিগেুলো বাড়তি মুনাফা করেছে ২৩৪ কোটি টাকা।
দেশের ডিম ও মুরগির বাজার স্থিতিশীল করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নিয়মিত বাজার তদারকির পরামর্শ রেখেছে পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা বলেন, ‘বড় কোম্পানিগুলোর চক্রান্ত থেকে দেশের ভোক্তাদের বাঁচাতে হবে। কারণ ডিম ও মুরগির যে দাম তারা নির্ধারণ করে সেই দামেই আড়তে বিক্রি হয়। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে প্রান্তিক খামারিরা অস্তিত্ব সংকটে পড়বেন। পাশাপাশি ডিম আর ব্রয়লার মুরগির দামে আরও অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে।’
এসডব্লিউ/এসএস/১৪২০
আপনার মতামত জানানঃ