বিশ্বের মোট জ্বালানি চাহিদার ৮০ ভাগেরও বেশি যোগান দেয় ফসিল ফুয়েল বা জীবাশ্ম-জ্বালানি। বিশেষ করে পেট্রোলিয়াম তেল, কয়লা এবং প্রাকৃতিক গ্যাস। জীবাশ্ম-জ্বালানির ওপর বিশ্ব অনেকাংশে নির্ভরশীল। এই চরম নির্ভরশীলতাই এখন বিপর্যয়ের কারণ হতে যাচ্ছে। গোটা বিশ্ব আজ জীবাশ্ম-জ্বালানি নির্ভরতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। যার পেছনে রয়েছে মূলত তিনটি কারণ; অনিশ্চিত জ্বালানি নিরাপত্তা, পরিবেশ দূষণ এবং তেলভিত্তিক ভূ-রাজনীতি।
বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় নবায়নযোগ্য শক্তিকেই ভবিষ্যতের সমাধান ভাবা হচ্ছে। পরিবেশকে বাঁচিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী রূপান্তরযোগ্য জ্বালানির পথেই হাঁটতে চাইছে সব দেশ।
এদিকে, দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার ২০২১ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ করার পরকিল্পনা থাকলেও এখনো তা সাড়ে ৩ শতাংশের নিচে রয়েছে। চলমান জ্বালানির দাম বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক পরিস্থিতে আবার নবায়নযোগ্য জ্বালানির কথা জোর দিয়ে ভাবছে সরকার।
এরই অংশ হিসেবে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ খাতে রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডকে (ইডকল) ৮০ মিলিয়ন ডলার ইউরো বা ৮০০ কোটি টাকা (১ ইউরো সমান ১০০ টাকা ধরে) ঋণ দিচ্ছে জার্মান। ইডকল এ অর্থ বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ হিসেবে বিতরণ করবে।
ইডকলের কর্মকর্তারা জানান, নবায়নযোগ্য জ্বালানি কর্মসূচি-২ এর আওতায় সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সৌর ভিত্তিক সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ৯৯ মিলিয়ন ইউরো বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়া হবে।
২০২৩ থেকে ২০১২৭ সালের মধ্যে এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হবে। এর মধ্যে জার্মান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা কেএফডব্লিউ ৮০ মিলিয়ন ইউরো ঋণ দিতে সম্মতি দিয়েছে। এখন ঋণের শর্ত নির্ধারণে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়েছে।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কেএফডব্লিউ-এর আর্থিক সহায়তায় ইডকলের ‘রিনিউয়েবল এনার্জি প্রোগ্রাম-২’ শীর্ষক প্রকল্পের নির্দেশমূলক শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা করতে ২৮ জুন ইআরডিতে একটি ত্রিপক্ষীয় পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ইআরডির অতিরিক্ত সচিব এবং উইং চিফ (ইউরোপ) উত্তম কুমার কর্মকার।
তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “নবায়নযোগ্য জ্বালানি কর্মসূচির জন্য কেএফডব্লিউ এর সঙ্গে এখন ঋণর শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সব প্রক্রিয়া শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে চুক্তি সই হবে।”
ইআরডির কর্মকর্তারা আরো জানান, এ ঋণের জন্য কেএফডব্লিউ দুই ধরনের সুদহারের প্রস্তাব দিয়েছে। ঋণ পরিশোধসহ অন্যান্য শর্ত কিছুটা কঠিন। ইডকল ঋণের সুদ কমানো এবং শর্তগুলো সহজ করার প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানান তারা। আবার ইউরোর পরিবর্তে ডলারে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাবও রয়েছে ইডকলের।
এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিভিন্ন সংস্থার মতামত চাওয়া হয়েছে। চলতি মাসের ১০ তারিখ জার্মান থেকে কেএফডব্লিউর একটির প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে। ওই সময়ে শর্তাবলী চূড়ান্ত হতে পারে।
নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ খাতে রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডকে (ইডকল) ৮০ মিলিয়ন ডলার ইউরো বা ৮০০ কোটি টাকা (১ ইউরো সমান ১০০ টাকা ধরে) ঋণ দিচ্ছে জার্মান। ইডকল এ অর্থ বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ হিসেবে বিতরণ করবে।
ইআরডি এর এক কর্মকর্তা জানান, শর্তাবলীর মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, অনাদায়ী ঋণের পরিমাণের উপর ০.২৫ শতাংশ প্রতিশ্রুতি ফি এবং মোট ঋণের পরিমাণের উপর ০.১০ শতাংশ ফ্ল্যাট ব্যবস্থাপনা ফি যুক্ত হবে।
কেএফডব্লিউ ঋণের সুদের হারের জন্য দুটি বিকল্পও অফার করেছে। ঋণ পরিশোধের সময়কাল তারা নির্ধারণ করেছে ২০ বছর। এরমধ্যে ৩১টি সমপরিমাণ অর্ধ-বার্ষিক কিস্তিসহ পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডের সুবিধাও রাখা হয়েছে।
একজন ইআরডি কর্মকর্তা বলেন, ঋণটি জার্মান সরকারের পক্ষ থেকে কেএফডব্লিউ কর্তৃক প্রদত্ত ৯৫.৫ মিলিয়ন ইউরোর একটি অর্থায়ন প্যাকেজের অংশ।
ইআরডি-র ফরেন এইড বাজেট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস (এফএবিএ) শাখার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “যদিও পূর্ববর্তী কেএফডব্লিউ ঋণের সুদের হার ২ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ, বর্তমান অফারে ২.৭৩ শতাংশ সুদের হার রাখার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয় আলোচনা করা যেতে পারে।”
তিনি বলেন, এফএবিএ উইং বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত ঋণের জন্য ভাসমান সুদের হার বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কেএফডব্লিউ এর আগেও বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ দিয়েছে। সেসব ঋণের সুদের হার ২ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে প্রস্তাবিত ঋণের অফারে ২ দশমিক ৭৩ শতাংশ সুদের হার রাখার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ২ শতাংশের মধ্যেই রাখতে রাজি। এ বিষয়ে আলোচনা করবে ইআরডি। এফএবিএ উইং বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত ঋণের জন্য ভাসমান সুদের হার বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছে।
২০১৬ সালে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান (পিএসএমপি) নবায়নযোগ্য শক্তির শেয়ারের ২০২১ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ১০ শতাংশে (২৪৭০ মেগাওয়াট) পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। এ লক্ষ্য অর্জনে সৌরশক্তি সর্বাধিক কাজে লাগানোকে প্রধান হিসেবে ধরা হয়েছিল। ১০ শতাংশ মানে প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আহরণ করার কথা ছিল। কিন্তু ‘স্রেডা’ বা টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এটা ৮৯৩ দশমিক ৫ মেগাওয়াট। তার মানে কমবেশি ৩ শতাংশ মাত্র।
সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, দেশে এখন প্রচলিত উৎস থেকে ২০ হাজার ৫৯৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩০০
আপনার মতামত জানানঃ