রাশিয়ার সঙ্গে চলমান সংকটে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে মস্কো। তাতে অনেকটা চাপে পড়েছে দেশগুলো। এ পরিস্থিতি আসন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় জার্মানির হ্যানোভার শহরের আবাসিক ভবনগুলোয় গরম পানির ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ। সেইসঙ্গে ঘর গরম রাখতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও কমিয়ে আনা হয়েছে।
গত সোমবার নগর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, আবাসিক ভবন, সুইমিং পুল, স্পোর্টস হল এবং জিমে গরম পানির ব্যবহার বন্ধ করে দেবে। পাবলিক ফোয়ারা বন্ধ করে দেওয়া এবং শহরের উঁচু ভবনগুলোতে রাতে আলোকিত বন্ধ করাও এ তালিকায় রয়েছে।
এমনকি নতুন নিয়মের অধীনে সরকারি কর্মকর্তাদেরও কাজের সময় ঠান্ডা পানিতে হাত ধুতে হবে।
শহরের বাসিন্দাদের বাড়ির ভেতরে থাকাকালীন ঠান্ডা তাপমাত্রার জন্যও প্রস্তুত হতে হবে। নতুন নিয়মে, ডে-কেয়ার সেন্টারসহ আবাসিক ভবনগুলোতে সর্বাধিক কক্ষ তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হবে। স্পোর্টস হল ও জিমে ১৫ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা রাখতে পারবে না।
ফোয়ারা, টাউন হল, শহরের জাদুঘর ও অন্যান্য আবাসিক ভবনগুলোর জন্যও যেকোনো বাহ্যিক আলোকসজ্জা বন্ধ থাকবে।
ফোয়ারা, টাউন হল, শহরের জাদুঘর ও অন্যান্য আবাসিক ভবনগুলোর জন্যও যেকোনো বাহ্যিক আলোকসজ্জা বন্ধ থাকবে।
শুধু হ্যানোভার শহরই নয়, জার্মানির ডুসেলডর্ফ শহরেও জ্বালানি সাশ্রয় করার জন্য শরৎ ও শীতেও ঘর গরম রাখার তাপমাত্রা কমানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি দেশটিতে নাটকীয়ভাবে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রাশিয়া সরকার। এই শীতে রাশিয়া থেকে ১৫ শতাংশ কম গ্যাস নিতে রাজি হয়ে গেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও। যার প্রভাব এসে পড়েছে জোটের অন্যতম সদস্য জার্মানির উপর। জার্মান সরকার তাই জনগণকে বলে দিয়েছে এখন থেকে তারা কম গ্যাস পাবে এবং একইসঙ্গে বিদ্যুতের জন্য বাড়তি বিল পরিশোধ করতে হবে তাদের।
সরকারের এমন সিদ্ধান্তের পর হ্যানোভারই জার্মানির প্রথম কোন বড় নগর যারা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে এখন থেকে ঠাণ্ডা জলে গোসলের দিকে ঝুঁকছে।
হ্যানোভারের মেয়র বেলিট ওনাই বলেন, আসন্ন গ্যাস সংকট বড় শহরগুলোকে উল্লেখযোগ্য এক চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সংকট মোকাবেলায় আমাদের এখন লক্ষ্য হচ্ছে বিদ্যুতের ব্যবহার অন্তত ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনা।
স্থানীয় সরকারের এই নীতি প্রযোজ্য হবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও। এখন থেকে প্রতি বছর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি ভবনগুলোতে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে এসি ব্যবহারের ওপর। এমনকি সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক বছরের বাকি সময়েও সর্বোচ্চ ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা পর্যন্ত চালানো যাবে এসি। এছাড়া, পোর্টেবেল এসি, হিটার এবং রেডিয়েটার বহনের ওপরও জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
এদিকে বৃহস্পতিবার দেশটির উচ্চ পর্যায় থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, ভোক্তাদেরকে সামনে গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে আশাতীত পরিমাণ অতিরিক্ত কর দিতে হবে, যেন আসন্ন দিনগুলোতে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো দেউলিয়া হয়ে না যায়।
জার্মানির অর্থমন্ত্রী রবার্ট হ্যাবেক এ ব্যাপারে বলেন, ‘নভেম্বরে গ্যাসের মূল্য কেমন দাঁড়াবে তা আমরা এখনই বলতে পারছি না। তবে, করুণ সত্য হচ্ছে গৃহপ্রতি তা কয়েকশো ইউরো পর্যন্ত গিয়ে ঠেকতে পারে। বেশ কিছু সূত্রমতে, প্রতি বছর দেশটির জনগণকে ৫০০ ইউরো পর্যন্ত অতিরিক্ত কর শোধ করা লাগতে পারে আসন্ন সংকট মোকাবেলায়।
গ্যাসের চাহিদা পূরণে জার্মানি বহুকাল ধরেই রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল। কিন্তু চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার জবাবে গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে রাশিয়া। অবশ্য এমন অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে রাশিয়ার পক্ষ থেকে। বর্তমানে অভ্যন্তরীণ চাহিদার এক চতুর্থাংশ রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়া সরকার। অথচ ইউক্রেন যুদ্ধের পূর্বেও তারা গ্যাস রফতানির করতো এখনকার তুলনায় দ্বিগুণ পরিমাণ
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬১২
আপনার মতামত জানানঃ