দাবানলে পুড়ছে ইউরোপের তিন দেশ পর্তুগাল, ফ্রান্স ও স্পেন। দমকলবাহিনীর হাজার হাজার কর্মী আগুন নেভাতে কাজ করছেন। বেশ কয়েক দিন ধরেই এমন পরিস্থিতি চলছে। দাবানল কমার কোনো লক্ষণ নেই।
এখন পর্যন্ত এই দুর্যোগে পর্তুগালে ২৩৮ জনের ও স্পেনে অন্তত ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী দিনে ইউরোপে এমন আরও দাবানল হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন সংশ্লিষ্টরা। হাজার হাজার মানুষকে দাবানল থেকে বাঁচাতে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দাবানলে পুড়েছে জমি, বাড়িঘর।
আবহাওয়ার এমন বিরূপ অবস্থার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে দায়ী করছেন আবহাওয়াবিদরা।
গত বৃহস্পতিবার পর্তুগালের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলের পাঁচটি এলাকায় ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা জুলাই মাসের জন্য সর্বোচ্চ। শুক্রবার উত্তর পর্তুগালের ব্রাগানকা অঞ্চলে দাবানল নেভানোর কাজের সময় উড়োজাহাজ বিস্ফোরণ হয়। এতে উড়োজাহাজের এক পাইলট নিহত হন।
গত বৃহস্পতিবার পর্তুগালের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মার্তা টেমিডো বলেন, দাবানলের কারণে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ‘বিশেষভাবে উদ্বেগজনক’ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে।
ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিম গিরোন্ড অঞ্চলে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। সেখান থেকে ১২ হাজারেরও বেশি লোককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে জলবায়ু পরিবর্তনে দাবানল আরও ঘন ঘন, আরও তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। শিল্পযুগ শুরু হওয়ার পর থেকে পৃথিবীর ইতোমধ্যেই প্রায় ১ দশমিক ১ সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়েছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার কার্বন নির্গমন হ্রাসে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তাপমাত্রা আরও বাড়তে থাকবে।
ফরাসি আবহাওয়া সার্ভিস রোববার দেশটির দক্ষিণের কিছু অংশে ৪১ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রার পূর্বাভাস দিয়েছে এবং সোমবারের জন্য নতুন রেকর্ড পরিমাণ তাপমাত্রার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
শনিবারের শেষের দিকে দেশটির আরও ২২টি আঞ্চলিক বিভাগগুলোর বেশির ভাগেই উচ্চ অরেঞ্জ সতর্কতায় জারি করে।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন বলেন, আগুনে এ পর্যন্ত ১০ হাজার হেক্টর বা ২৫ হাজার একর জমি পুড়ে গেছে। তিনি দমকলকর্মীদের ‘সাহসিকতার’ প্রশংসা করেন।
এদিকে, মঙ্গলবার থেকে পর্তুগালে তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং স্পেনে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে পৌঁছেছে। এতে গ্রামাঞ্চল দাবানলে জ্বলছে।
পর্তুগিজ আবহাওয়ার পূর্বাভাসদাতারা বলেন, আগামী সপ্তাহে কমার আগে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থাকবে।
পর্তুগালের আগুন বেশি জ্বলছে পোর্তো শহরের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। দাবানলে এ বছর দেশটির ৩০ জাহার হেক্টর বা ৭৫ হাজার একর জমি ধ্বংস করেছে। ২০১৭ সালে পর্তুগাল বিধ্বংসী দাবানলের শিকার হয়েছিল, যাতে প্রায় ১০০ জন মারা গিয়েছিল।
ইউরোপের আরেক দেশ স্পেনের আবহাওয়া ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েকদিনে দেশটিতে অন্তত ১০০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
স্পেনের এক নাগরিক জানান, দাবানলের কারণে তিনি রাতে ঘুমাতে পারেননি। তিনি এখনও দাবানলের তীব্রতা ভুলতে পারছেন না।
এদিকে, ইতালিতে সরকার পো উপত্যকায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। দেশটির দীর্ঘতম নদীত কিছু জায়গায় সামান্য পরিমাণ পানি রয়েছে।
আর যুক্তরাজ্যে উচ্চ তাপমাত্রা ঝুঁকির কারণে জরুরি সতর্ক বার্তা জারি করা হয়েছে। একই পরিস্থিতি ইতালিতেও।
আর গ্রীসের রাজধানী এথেন্সের ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ছড়িয়ে পড়া দাবানল নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা। আশেপাশের অঞ্চল থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সূত্র মতে, রেথিমনোর কাছে সাতটি গ্রামের লোককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
উত্তর মরক্কোতেও একই পরিস্থিতি। সেখানকার বহু প্রদেশে দ্রুত দাবানল ছড়িয়ে পড়ছে। স্থানীয় একটি গ্রাম সম্পূর্ণ আগুনে পুড়ে গেছে। আর দাবানলের কারণে সেখানে একজন নিহত হয়েছেন।
অন্যদিকে, লারাচে, ওয়েজানে, তাজা এবং তেতুয়ান প্রদেশে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় বেশ কয়েকটি গ্রাম খালি করতে হয়। কাসার এল কেবির এলাকায় একটি গ্রাম সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং আগুনে অন্তত একজন মারা গেছে।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গরমের তীব্রতা অতীতের তুলনায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শিল্প বিপ্লব শুরু হওয়ার পর থেকে চলতি শতকের শুরু পর্যন্ত পৃথিবীর তাপমাত্রা এক দশমিক এক ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। জলবায়ুর বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে বৈশ্বিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে জলবায়ুর তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬১৩
আপনার মতামত জানানঃ