সম্প্রতি ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির দুই মুখপাত্রের ইসলামের নবী মোহাম্মদকে নিয়ে করা বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে মুসলিম বিশ্বে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়। তাদের মন্তব্যের জেরে ভারতসহ পুরো মুসলিম বিশ্বেই ওঠে প্রতিবাদের ঝড়। দেশটির বিক্ষোভকারী মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগও পাওয়া গেছে ইতোমধ্যে।
অবশেষে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কড়া বিবৃতি দিয়েছে মানবাধিকার বিষয়ক বেসরকারি সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ভারত সরকারকে মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত না করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
নবী মোহাম্মদকে নিয়ে বিজেপির দুই মুখপাত্রের বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ভারতীয় পণ্য বয়কটের পদক্ষেপ নেয়। এছাড়াও বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশ ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের জরুরি তলব করেও কড়া প্রতিক্রিয়ায়। ভারতের বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বিক্ষোভ দমনে অতিরিক্ত কড়া পদক্ষেপ নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিবৃতি দিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি মুসলিম বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন বন্ধে ভারত সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে। বিজেপি নেতা নূপুর শর্মার নবী মোহাম্মদকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের জেরে উত্তপ্ত হয়ে আছে ভারত। গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন অংশে একটানা আন্দোলন চলছে। এখন পর্যন্ত দুই আন্দোলনকারী নিহত এবং শত শত অংশগ্রহনকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশের বাইরেও মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
এরইমধ্যে অ্যামনেস্টি এক বিবৃতিতে বলে, যেসব মুসলিম বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে কর্তৃপক্ষ বেছে বেছে তাদেরকে নির্মমভাবে দমন করছে।
যেসব মুসলিম বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে কর্তৃপক্ষ বেছে বেছে তাদেরকে নির্মমভাবে দমন করছে।
সংস্থাটির মুখপাত্র আকার প্যাটেলের দেয়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়, শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বিক্ষোভকারীদের দমন করা, স্বেচ্ছাচারী গ্রেপ্তার এবং শাস্তি দিতে বাড়ি ভেঙ্গে দেয়ার মাধ্যমে ভারত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করেছে।
আরব নিউজ জানিয়েছে, আন্দোলনে যোগ দেয়ায় উত্তর প্রদেশেই তিন শতাধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী যোগি আদিত্যনাথ প্রথম থেকেই বারবার অপরাধীদের বাড়ি ভেঙ্গে দেয়ার কথা বলেছেন।
যদিও সমালোচকরা বলছেন, এমন পদক্ষেপ সংবিধানবিরোধী এবং মানবাধিকার আইনে এ ধরনের শাস্তির কোনো স্থান নেই। গত ক’দিনের বিক্ষোভ থেকে গ্রেপ্তার হওয়াদের অবিলম্বে শর্তহীন মুক্তি চেয়েছে অ্যামনেস্টি।
প্যাটেল বলেন, মুসলিমদের টার্গেট করে ভারত যে উদ্বেগজনক আচরণ করছে এসব গ্রেপ্তার এবং বাড়ি ভেঙ্গে দেয়া তারই অংশ।
বিক্ষোভ দমনের কঠোরতায় দেশে এক শিশুসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলেও দাবি করেছে অ্যামনেস্টি। সংস্থাটি বলেছে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে যারা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তাদের যে কায়দায় আইনশৃঙ্খলার জন্য ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে তা গভীর উদ্বেগের বিষয়। একইসঙ্গে মুসলিমদের নিশানা করে সরকার ক্রমাগত যে পদক্ষেপ নিচ্ছে তাও চিন্তার বিষয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভারত সরকার প্রতিশোধমূলকভাবে বেছে বেছে সেই সমস্ত মুসলিমদের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে যারা মুখ খোলার স্পর্ধা দেখাচ্ছেন বা শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাদের ওপর হওয়া বিদ্বেষের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
এ বিষয়ে এখনও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
উল্লেখ্য, নূপুর শর্মাকে বরখাস্ত করেছে বিজেপি। কিন্তু তাতে মুসলিম দেশগুলোর ক্ষোভ থামেনি। অন্তত ২০টি দেশ ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং ভারতকে ক্ষমা চাইতে চাপ দিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশসহ অনেক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশেই এর প্রতিবাদে আন্দোলন হয়েছে। শুক্রবারের নামাজের পর বাংলাদেশে এক লাখেরও বেশি মানুষ আন্দোলনে যোগ দেয়। বড় প্রতিবাদ দেখা গেছে পাকিস্তানের শহর লাহোরেও।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সাল থেকে ভারতে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। দুর্নীতির অভিযোগে ‘এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)’ সংস্থাটির সমস্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং আর্থিক লেনদেন বন্ধ করে দেয়। প্রশ্ন তোলা হয় সংস্থায় গৃহীত বিদেশি অনুদানের স্বচ্ছতা নিয়েও। এর পরই ভারতে সমস্ত শাখা বন্ধ করে দেশত্যাগ করে অ্যামনেস্টি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯২০
আপনার মতামত জানানঃ